সড়ক দুর্ঘটনা-অ্যাম্বুলেন্স যখন ঘাতক
ঢাকা শহরের যানজটের কথা সর্বজনবিদিত। যাত্রাপথে শত ব্যস্ততার মধ্যেও জটের মাশুল গুনতে হয় এ শহরের মানুষদের। অফিস, আদালতের কাজের মতো নিত্যপ্রয়োজনে হোক কি হাসপাতালের গাড়ি, ফায়ার ব্রিগেডের যানই হোক_ রাস্তায় সবাইকে লালবাতির মুখোমুখি হতেই হয়।
তবে জরুরি প্রয়োজনে যে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ নির্বিকার ভূমিকা পালন করে তা নয়। জরুরি যানবাহনের প্রতি শুধু ট্রাফিক পুলিশ কেন, সাধারণ মানুষও সংবেদনশীল। তারপরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য চোখে পড়ে। রোগী থাকুক বা না থাকুক অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিয়ম ভেঙে সাইরেন বাজিয়ে উল্টোপথে ছুটে আসছে এমন দৃশ্য প্রতিদিনই দেখা যায়। চলতি পথে এমন দৃশ্যকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই নিয়ম। কিন্তু যদি রাস্তায় নিরাপত্তার কথা ভাবা হয় তবে এই বেপরোয়া চলাচলের কারণে জীবন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত যানটিই হয়ে উঠতে পারে হন্তারক। অবশ্য শুধু অ্যাম্বুলেন্স নয়, অনেক যানই সুযোগ পেলে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায়। উল্টোপথে বেপরোয়া যাত্রা করে। রাজধানীর মোটরসাইকেলগুলো এ ক্ষেত্রে আরও বেপরোয়া। সিগন্যাল পড়লেই ফুটপাতে উঠে পড়ে। পথচারীদের ব্যাঘাত ঘটে, ছোটখাটো দুর্ঘটনাও বেশ হয় এর ফলে। অন্য যানবাহন দুর্ঘটনার কারণ হলে সেটি দুঃখজনক; কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনা ঘটালে তা দুঃখজনক তো বটেই, পরিহাসেরও বটে। জরুরি প্রয়োজনে রোগীরা অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তা নেন, কিন্তু চলতি পথে বেপরোয়া গতির কারণে খোদ অ্যাম্বুলেন্সই যদি আরও মানুষকে আহত-নিহত করে তবে হতাশার যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়। সোমবার এমনই এক ঘাতক অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় অটোরিকশা উল্টে মারা গেলেন দুই ভাই। তাদের একজন বিদেশফেরত। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি পেঁৗছাবার আগেই তারা মৃত্যুমুখে পতিত হন। এ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সমাধি হলো অনেক স্বপ্নের। এ মৃত্যুর ঘটনা বলছে, জরুরি প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে চলা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে রাস্তার নিয়মের মধ্যে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। রোগী পরিবহন করলে তাদের পথ ছেড়ে দিতে হবে, জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে ছাড় দিতে হবে। কিন্তু তাই বলে বেপরোয়া গতিতে নিয়ম ভেঙে কোনো যানই যেন সাধারণের প্রাণহানির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
No comments