পবিত্র কোরআনের আলো-ব্যভিচারিণীদের গৃহবন্দি করে শাস্তি প্রদানের নির্দেশ

১৩. তিলকা হুদূদুল্লাহি ওয়ামান ইয়ুতি্বয়ি'ল্লাহা ওয়া রাসূলুহূ ইউদ্খিলহু জান্নাতিন তাজরী মিন তাহ্তিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা; ওয়া যালিকাল ফাওযুল আ'যীম। ১৪. ওয়ামান ইয়্যা'সিল্লাহা ওয়া রাসূলাহূ ওয়া ইয়াতাআ'দ্দা হুদূদাহূ ইউদ্খিলহু নারান খালিদান ফীহা; ওয়া লাহূ আ'যাবুম্ মুহীন।


১৫. ওয়াল্লাতী ইয়া'তীনাল্ ফাহিশাতা মিন্ নিছায়িকুম ফাছতাশহিদূ আ'লাইহিন্না আরবাআ'তাম্ মিনকুম; ফাইন শাহিদূ ফামছিকূহুন্না ফিল বুইঊতি হাত্তা ইয়াতাওয়াফ্ফা হুন্নাল মাওতু আও ইয়াজআ'লাল্লাহু লাহুন্না ছাবীলা।
সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৩-১৫
অনুবাদ : ১৩. এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে আল্লাহ তাকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নদী বয়ে গেছে। সেখানে সে অনন্তকাল ধরে থাকবে, আর এটা হবে এক মহাসাফল্য।
১৪. আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নাফরমানি করবে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে আল্লাহ তাঁকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে অনন্তকাল থাকবে, তার জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
১৫. তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা অশ্লীলতা বা ব্যভিচারে লিপ্ত হবে, তাদের বিচারের বেলায় তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী জোগাড় করবে। অতঃপর সেই চারজন লোক যদি ঘটনার সত্যতা প্রসঙ্গে সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে সেই নারীদের তোমরা ঘরের ভেতর বন্দি করে রাখবে, যে পর্যন্ত না মৃত্যু এসে তাদের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেয়, অথবা আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা করে দেন।
ব্যাখ্যা : ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াত দুটি এসেছে আগের আয়াতগুলোর উপসংহার হিসেবে। আগের আয়াতগুলোতে সম্পত্তির ওয়ারিশ ও উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিধিবিধান দেওয়া হয়েছে। বর্তমান আয়াতে বলা হয়েছে, এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। ১৫ নম্বর আয়াতে এসেছে নতুন প্রসঙ্গ। এখানে বিশেষ করে নারীদের প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে। যেসব নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। এ আয়াত অনুযায়ী শাস্তির বিধান হলো, তাদের গৃহবন্দি করে রেখে শাস্তি প্রদান করা। যে যুগে এ আয়াত নাজিল হয়েছে তখন জেলখানার ব্যবস্থা ছিল না। সুুতরাং স্বামীর গৃহে গৃহবন্দি করেই শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ গৃহবন্দিত্বে আজীবন গৃহবন্দির কথাই বলা হয়েছে। যদি না আল্লাহ তায়ালা এর মধ্যে কোনো সদুপায় বের করে দেন। অবশ্য এর পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, তওবার কথা। তারা যদি পবিত্র জীবনে ফিরে আসতে চায় এবং তওবা করে তবে আল্লাহ সে পথ দেখাবেন।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, ব্যভিচার শুধু নারীর দ্বারা হয় না, পুরুষও এর অনিবার্য অংশীদার। কিন্তু এখানে প্রাথমিকভাবে শুধু নারীর প্রসঙ্গটাই উল্লেখ করা হয়েছে। এটা নারীর প্রতি বিরূপ মনোভাবের প্রকাশ নয়, বরং নারী প্রসঙ্গে অধিকতর কল্যাণ চিন্তার প্রকাশ। ব্যভিচার, অশ্লীলতা বা পবিত্রতাহানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী, সে যুগে সেটা আরো বেশি মাত্রায় হতো। এ অবস্থায় নারীর কল্যাণের জন্য তাদের ব্যভিচারের মতো খারাপ কাজ থেকে বিরত করা প্রয়োজন ছিল। এ ক্ষেত্রে নারীর শাস্তির পাশাপাশি পুরুষদের শাস্তির ব্যবস্থাও পরবর্তী আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এ আয়াত পরবর্তী সময়ে মনসুখ (রহিত) হয়েছে অন্য রকম শাস্তির বিধানের মাধ্যমে। তবে এখানে লক্ষ করার মতো বিষয় হলো, ব্যভিচারের মতো অপরাধের শাস্তির জন্য প্রত্যক্ষ দর্শক চারজন সাক্ষীর প্রয়োজন হবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.