চাপটা যেন বাংলাদেশের ওপরই
সার্ক ফোয়ারার পাশেই সাফ ফুটবলের বিজ্ঞাপন। ওখান থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে যে পাঁচতারা হোটেল, সেই হোটেলটির একই ছাদের নিচে গোটা দক্ষিণ এশীয় ফুটবল পরিবারের অবস্থান। শুধু সার্ক ফোয়ারাই নয়, রাজধানীতে সাফ ফুটবলের বার্তা নিয়ে এমন বেশ কিছু বিলবোর্ড দাঁড়িয়ে গেছে। যেগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সাফ ফুটবলের উত্তাপ। দুয়ারে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফুটবল ‘যুদ্ধ’।
যুদ্ধ? গতবারের চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের কাছ থেকে সমস্বরে প্রতিবাদ আসতে পারে। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাবটাই নেই। মাঠে খেলা হবে, এক দল জিতবে, এক দল হারবে। সাপলুডুর মতো জিততে জিততে, কিংবা হারতে হারতে শেষ লড়াইয়ে পৌঁছানো দল দুটির একটি শেষ হাসি হাসবে। ব্যস, টুর্নামেন্ট শেষ!
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের কোচ বা অধিনায়কের মুখ দিয়ে যেমন এই কথাটা বলানোই গেল না যে, ‘শিরোপাটা ধরে রাখতেই এসেছি।’ অনেকেই যাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবলার মানেন, সেই অধিনায়ক আশফাক আলী শুধু আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন। আপ্যায়নকারীকে ধন্যবাদ জানানোটা যেমন অতিথির সাধারণ ভদ্রতা আরকি!
লক্ষ্য কী—এটি জানতে চাইলে কোচ উরবানি ইস্তভান বেলা নিরুত্তর। প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই তো প্রত্যাশা থাকে উঁচুতে।’ কিন্তু ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি যেন সেই পুসকাস-ককসিস-হিদেকুটির দেশ হাঙ্গেরির ফুটবল চেতনার ধারক, ‘আমার ফুটবল-দর্শন হলো খেলাটাকে উপভোগ করা। তাহলেই ভালো ফুটবলে ভালো ফল আসবে।’ ‘উপভোগ’ ‘ভালো ফুটবল’ ‘ভালো ফল’, কিন্তু শিরোপার কথাটা সরাসরি নয়! সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে কোচ আর খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে, কখনো হোটেলের এ-প্রান্তে কখনো ও-প্রান্তে—মালদ্বীপের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় যেন ওই ‘উপভোগ্যতা’রই বিজ্ঞাপন।
জর্জ কোটান পাকিস্তান দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্রের কাছাকাছি আসতেই একটা আবেগময় দৃশ্য। একে জড়িয়ে ধরলেন আলিঙ্গনে, ওকে বললেন, ‘কেমন আছ?’ সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশের সাবেক কোচ, বাংলাদেশকে একমাত্র সাফ শিরোপা এনে দেওয়া অস্ট্রিয়ান কোচ আবেগে ভেসে গেলেন। এখনো কোটান ‘বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি’ মনে করেন। এ জন্যই কি না বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের দলটির তুলনাতেই গেলেন না। শুধু বললেন, ‘একটা কথাই বলতে পারি, শারীরিক দিক দিয়ে পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা অনেক শক্তিশালী।’
এটা অবশ্য না বললেও চলত। দীর্ঘদেহী পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা অন্যসব খেলোয়াড়দের ছাপিয়ে একেবারে ‘সব গাছ ছাড়িয়ে তালগাছ’। পেশিবহুল। মুখে কাঠিন্য। কোটানই জানালেন, এই দলের পাঁচজন খেলোয়াড় আছে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইংলিশ যারা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগ এবং হাঙ্গেরি বা ওয়েলস লিগে খেলেন। ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড সিটিতে খেলা জেশ রহমানকে তো পাওয়াই যায়নি তাঁর ইংলিশ ফুটবলের ব্যস্ততার কারণে। এমন একটি দলের কোচও কোনো লক্ষ্যের কথা বলেননি, ‘রেজাল্টের কথা কেউই বলতে পারে না। ১৪ দিন পরে বলতে পারব। আমি একটা কথাই বলব, আমরা ভালো ফুটবল খেলব।’
যে চারটি দলের সংবাদ সম্মেলন হলো কাল, তাদের মধ্যে এক কাতারে দেখা গেল শুধু বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে। শ্রীলঙ্কার কোচ সাম্পাথ পেরেরা ও চাথুরা মাদুরাঙ্গা আগের দিনের কথারই প্রতিধ্বনি তুলে বললেন, শিরোপাই তাদের লক্ষ্য। তবে প্রকাশ পেল আয়োজক বাংলাদেশের প্রতি সমীহও।
আর বাংলাদেশ? সবার আগে এসে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আমিনুল হক, কোচ সাহীদুর রহমান সান্টু ও ম্যানেজার সত্যজিত্ দাশ কোনো ঘোরপ্যাঁচের ধার ধারেননি। তাদের লক্ষ্য-প্রত্যাশার সবকিছুই একই তারে বাঁধা—শিরোপা। কোচ সান্টু গন্তব্য নির্দেশ করলেন একেবারে শীর্ষে, ‘আমার তো ইচ্ছা একেবারে টপ পর্যন্ত যাওয়া।’ আমিনুল ছাঁটাই হওয়া কোচ ডিডোর প্রসঙ্গ তুললেন, ‘ডিডোর অধীনে এর আগে আমাদের দুই মাসের কন্ডিশনিং ক্যাম্প হয়েছে। সেরা দলটিকেই আমরা পেয়েছি। অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখি আমরা।’
ডিডোর দেওয়া দলটা চ্যাম্পিয়ন হতে পারত না সিদ্ধান্তে পৌঁছে তাঁকে বরখাস্ত করে নতুন একজন কোচকে দায়িত্ব দিয়ে প্রায় আগাপাছতলা বদলে দেওয়া হলো দল। চ্যাম্পিয়ন তো এই দলকে হতেই হবে! এর নাম অনন্ত চাপ! সত্যজিত্ দাশ এটা মানতে চাইলেন না, ‘না, চাপ নয়। তবে দল এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। অনেক বেশি দায়বদ্ধ, সব খেলোয়াড় তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তারা দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চায়।’
তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মূল দল আসেনি। তারুণ্যসমৃদ্ধ সেই দল শিরোপার কথা ভাবছে কি না, জানা যায়নি। তবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ থেকে দশ ধাপ এগিয়ে-পিছিয়ে থাকা অন্য দলগুলো সরাসরি শিরোপার কথা বলছে না। তারা আপাত চাপহীন। সব চাপই যেন বাংলাদেশের ওপর। বাইরে সূর্যের আলোয় বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের ছায়াগুলো দীর্ঘতর হয়ে পড়ছে। তার মধ্যে আরেকটি ছায়া এসে মিশেছে অলক্ষ্যে। সেটি ডিডোর। বাংলাদেশের ছাঁটাই হওয়া কোচ!
যুদ্ধ? গতবারের চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের কাছ থেকে সমস্বরে প্রতিবাদ আসতে পারে। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাবটাই নেই। মাঠে খেলা হবে, এক দল জিতবে, এক দল হারবে। সাপলুডুর মতো জিততে জিততে, কিংবা হারতে হারতে শেষ লড়াইয়ে পৌঁছানো দল দুটির একটি শেষ হাসি হাসবে। ব্যস, টুর্নামেন্ট শেষ!
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের কোচ বা অধিনায়কের মুখ দিয়ে যেমন এই কথাটা বলানোই গেল না যে, ‘শিরোপাটা ধরে রাখতেই এসেছি।’ অনেকেই যাকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটবলার মানেন, সেই অধিনায়ক আশফাক আলী শুধু আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন। আপ্যায়নকারীকে ধন্যবাদ জানানোটা যেমন অতিথির সাধারণ ভদ্রতা আরকি!
লক্ষ্য কী—এটি জানতে চাইলে কোচ উরবানি ইস্তভান বেলা নিরুত্তর। প্রত্যাশার কথা জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই তো প্রত্যাশা থাকে উঁচুতে।’ কিন্তু ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি যেন সেই পুসকাস-ককসিস-হিদেকুটির দেশ হাঙ্গেরির ফুটবল চেতনার ধারক, ‘আমার ফুটবল-দর্শন হলো খেলাটাকে উপভোগ করা। তাহলেই ভালো ফুটবলে ভালো ফল আসবে।’ ‘উপভোগ’ ‘ভালো ফুটবল’ ‘ভালো ফল’, কিন্তু শিরোপার কথাটা সরাসরি নয়! সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে কোচ আর খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে, কখনো হোটেলের এ-প্রান্তে কখনো ও-প্রান্তে—মালদ্বীপের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় যেন ওই ‘উপভোগ্যতা’রই বিজ্ঞাপন।
জর্জ কোটান পাকিস্তান দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্রের কাছাকাছি আসতেই একটা আবেগময় দৃশ্য। একে জড়িয়ে ধরলেন আলিঙ্গনে, ওকে বললেন, ‘কেমন আছ?’ সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশের সাবেক কোচ, বাংলাদেশকে একমাত্র সাফ শিরোপা এনে দেওয়া অস্ট্রিয়ান কোচ আবেগে ভেসে গেলেন। এখনো কোটান ‘বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি’ মনে করেন। এ জন্যই কি না বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের দলটির তুলনাতেই গেলেন না। শুধু বললেন, ‘একটা কথাই বলতে পারি, শারীরিক দিক দিয়ে পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা অনেক শক্তিশালী।’
এটা অবশ্য না বললেও চলত। দীর্ঘদেহী পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা অন্যসব খেলোয়াড়দের ছাপিয়ে একেবারে ‘সব গাছ ছাড়িয়ে তালগাছ’। পেশিবহুল। মুখে কাঠিন্য। কোটানই জানালেন, এই দলের পাঁচজন খেলোয়াড় আছে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইংলিশ যারা ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগ এবং হাঙ্গেরি বা ওয়েলস লিগে খেলেন। ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড সিটিতে খেলা জেশ রহমানকে তো পাওয়াই যায়নি তাঁর ইংলিশ ফুটবলের ব্যস্ততার কারণে। এমন একটি দলের কোচও কোনো লক্ষ্যের কথা বলেননি, ‘রেজাল্টের কথা কেউই বলতে পারে না। ১৪ দিন পরে বলতে পারব। আমি একটা কথাই বলব, আমরা ভালো ফুটবল খেলব।’
যে চারটি দলের সংবাদ সম্মেলন হলো কাল, তাদের মধ্যে এক কাতারে দেখা গেল শুধু বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে। শ্রীলঙ্কার কোচ সাম্পাথ পেরেরা ও চাথুরা মাদুরাঙ্গা আগের দিনের কথারই প্রতিধ্বনি তুলে বললেন, শিরোপাই তাদের লক্ষ্য। তবে প্রকাশ পেল আয়োজক বাংলাদেশের প্রতি সমীহও।
আর বাংলাদেশ? সবার আগে এসে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আমিনুল হক, কোচ সাহীদুর রহমান সান্টু ও ম্যানেজার সত্যজিত্ দাশ কোনো ঘোরপ্যাঁচের ধার ধারেননি। তাদের লক্ষ্য-প্রত্যাশার সবকিছুই একই তারে বাঁধা—শিরোপা। কোচ সান্টু গন্তব্য নির্দেশ করলেন একেবারে শীর্ষে, ‘আমার তো ইচ্ছা একেবারে টপ পর্যন্ত যাওয়া।’ আমিনুল ছাঁটাই হওয়া কোচ ডিডোর প্রসঙ্গ তুললেন, ‘ডিডোর অধীনে এর আগে আমাদের দুই মাসের কন্ডিশনিং ক্যাম্প হয়েছে। সেরা দলটিকেই আমরা পেয়েছি। অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখি আমরা।’
ডিডোর দেওয়া দলটা চ্যাম্পিয়ন হতে পারত না সিদ্ধান্তে পৌঁছে তাঁকে বরখাস্ত করে নতুন একজন কোচকে দায়িত্ব দিয়ে প্রায় আগাপাছতলা বদলে দেওয়া হলো দল। চ্যাম্পিয়ন তো এই দলকে হতেই হবে! এর নাম অনন্ত চাপ! সত্যজিত্ দাশ এটা মানতে চাইলেন না, ‘না, চাপ নয়। তবে দল এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। অনেক বেশি দায়বদ্ধ, সব খেলোয়াড় তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তারা দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চায়।’
তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মূল দল আসেনি। তারুণ্যসমৃদ্ধ সেই দল শিরোপার কথা ভাবছে কি না, জানা যায়নি। তবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ থেকে দশ ধাপ এগিয়ে-পিছিয়ে থাকা অন্য দলগুলো সরাসরি শিরোপার কথা বলছে না। তারা আপাত চাপহীন। সব চাপই যেন বাংলাদেশের ওপর। বাইরে সূর্যের আলোয় বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের ছায়াগুলো দীর্ঘতর হয়ে পড়ছে। তার মধ্যে আরেকটি ছায়া এসে মিশেছে অলক্ষ্যে। সেটি ডিডোর। বাংলাদেশের ছাঁটাই হওয়া কোচ!
No comments