ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ-প্রতিরোধক ব্যবস্থা জরুরি
ঢাকায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশঙ্কার আরও কারণ হলো, এই জ্বরের মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বর হলেও এবার জুনেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আগাম বর্ষার কারণে এমনটা হতে পারে। কিন্তু প্রতিরোধ,
নিবিড় মনিটরিং ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ জারি না থাকায় ধীরে ধীরে এই রোগের বিস্তার রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডি-গুলশান থেকে বস্তিঘর পর্যন্ত প্রায় অপ্রতিহত গতিতে তার থাবা বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। আগস্ট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো সময় ডেঙ্গু তার সাবেকি মৃত্যুবাণ নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর নাগরিক জীবনকে যন্ত্রণায় দগ্ধ করতে পারে। গতকাল সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক রিপোর্টে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে ডিসিসি ও স্বাস্থ্য অধিদফতর ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, এই রোগ প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা কত ব্যাপক। আর ডেঙ্গুর বাহন এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করার জন্য নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মশা নিধন ও এর উৎসস্থলগুলো অকেজো করে দেওয়াসহ প্রতিরোধক প্রাথমিক কাজগুলো করা যাদের দায়িত্ব সেই ঢাকা সিটি করপোরেশন তো হেলেদুলে চলতেই এখন অভ্যস্ত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচিত ছিল এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপগুলো আগেই নির্ধারণ করে রাখা এবং যখন যেটি প্রয়োজন সেটি প্রয়োগ করা। কিন্তু তারাও এবার এখনও আলসেমি কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে আশার কথা এই যে, একমাত্র ময়মনসিংহ ছাড়া এখনও ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর হদিস মেলেনি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এই রোগ জনস্বাস্থ্য ও মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রাথমিক সচেতনতামূলক প্রচারণা জরুরি। গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত মানুষকে কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ানো যাবে, কী ধরনের খাবার খাওয়ানো যাবে এবং একটু সচেতন হলেই যে ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হতে পারে না_ সেটা সবাইকে বোঝাতে হবে। সবাই নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে, ঘর বা বাসার আশপাশ, উঠোন, ঘরের ভেতর বা ছাদের ফুলের টবে পানি যেন না জমে থাকে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে। ডিসিসি এডিস মশার উৎসস্থলগুলোকে পরিষ্কার ও সেখানে ওষুধ ছিটানোর জরুরি ব্যবস্থা নিলে এডিস মশার জন্মহার ব্যাপকভাবে কমবে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা নিয়ে এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কাকে দূর করতে পারে।
No comments