বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বেড়েছে
বিশ্বে
দুর্নীতি আরও বেড়েছে। বৈশ্বিক দুর্নীতির চিত্র নিয়ে পরিচালিত একটি জরিপে
এমনই আভাস পাওয়া গেছে। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল
(টিআই) পরিচালিত ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি মনে করেন, গত দুই
বছরে দুর্নীতি পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আর এক-চতুর্থাংশ মনে করেন,
তাঁরা গত এক বছরে কর্মকর্তাদের অন্তত একবার ঘুষ দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার
জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির অবস্থা নিয়ে পরিচালিত
জরিপে আরও দেখা গেছে, পুলিশ, আদালত, রাজনৈতিক দলসহ এ ধরনের
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজই
হচ্ছে মানুষকে সহায়তা বা রক্ষা করা। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, ২০০৮
সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার পর থেকে দাপ্তরিকভাবে দুর্নীতি
প্রতিরোধের উদ্যোগও কমেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘গ্লোবাল
করাপশন ব্যারোমিটার ২০১৩’ শীর্ষক এই জরিপ দুর্নীতির ওপর পরিচালিত বিশ্বের
সবচেয়ে বড় জরিপ বলে দাবি করা হচ্ছে। বিশ্বের ১০৭টি দেশের এক লাখ ১৪ হাজার
ব্যক্তির ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা
গত ১২ মাসে অন্তত একবার কোনো সরকারি দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের সদস্যকে ঘুষ
দিয়েছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, আগের জরিপের চেয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। টিআই
দারিদ্র্যের সঙ্গে দুর্নীতির যোগসূত্রের দিকে ইঙ্গিত করেছে। বিশ্বের
সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত ১০টি দেশের আটটিই আফ্রিকা মহাদেশের। ঘুষ
দেওয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিয়েরা লিয়ন। জরিপে অংশ নেওয়া
দেশটির ৮৪ শতাংশ নাগরিক ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সিয়েরা লিয়নের
পরে রয়েছে যথাক্রমে লাইবেরিয়া (৭৫ শতাংশ), ইয়েমেন (৭৪ শতাংশ) ও কেনিয়া
(৭০ শতাংশ)। আর তালিকার নিচের দিকে রয়েছে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জাপান ও
অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়া ২০১১ সালের কথিত আরব বসন্তের পর বেশির ভাগ আরব দেশে
দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বিপ্লবের ফলে যে চারটি আরব দেশের
সরকারের পতন ঘটে, তার মধ্যে তিনটি দেশের বেশির ভাগ উত্তরদাতা বলেন, দেশে গত
দুই বছরে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। দেশ তিনটি হচ্ছে মিসর, তিউনিসিয়া ও
ইয়েমেন। জরিপে ১০৭টি দেশের মধ্যে ৩৬টি দেশের উত্তরদাতারা পুলিশকেই দেশের
সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করেন। আর ১০টি দেশের
উত্তরদাতারা মনে করেন, বিচার বিভাগ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। অন্যদিকে
৫১টি দেশের উত্তরদাতারা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে বেশি
দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতি প্রতিরোধে এসব দেশের সরকারের উদ্যোগের ব্যাপারে
মানুষের মূল্যায়ন ইতিবাচক নয়। ২০০৮ সালে ৩১ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারের
প্রচেষ্টাকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করলেও এবার সেই হার মাত্র ২২ শতাংশ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান হিউগুয়েট লাবেলে বলেন,
‘বিশ্বব্যাপী ঘুষ দেওয়ার হার খুবই উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। তবে মানুষ
বিশ্বাস করে, দুর্নীতি প্রতিরোধের শক্তি তাদের রয়েছে।’ এএফপি, রয়টার্স ও
বিবিসি।
No comments