স্বাস্থ্যসেবা-দুর্গমতা যেন দেয়াল না হয়

কেবল নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে নয়, সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনা যে কমবেশি সারাদেশেই রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকারি হাসপাতালগুলোতে জনবল, যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্র সংকট নতুনও নয়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের সরকারি চিকিৎসালয়ে কারণে-অকারণে ডাক্তারদের দল বেঁধে অনুপস্থিতি মাঝে মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়। খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা অবশ্য আরও খারাপ। সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায়


প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, সেখানে চিকিৎসকের ৯টি পদের মধ্যে ৮টিই শূন্য। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আওতায় থাকা ৯৭টি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৮টি। বাকিগুলো না হয় কোনোরকমে চালানো সম্ভব, একজন চিকিৎসক দিয়ে এক লাখ লোকের চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব? এও মনে রাখা জরুরি যে, রাজধানী কিংবা অন্যান্য শহরে বেসরকারি চিকিৎসাসেবার যে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, একটি থানা সদরে তা নেই। খালিয়াজুরীর মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আরও কঠিন। বিভিন্ন সমীক্ষা ও প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে যে, চিকিৎসকরা মফস্বলের কর্মস্থলে না থেকে শহরের বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী। আমাদের মনে আছে, ২০১০ সালের আগস্টে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের এ প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এখনও চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ মাসের পর মাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন না। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ডাক্তারদের এই আচরণকে 'মাস্তানি' বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু এটা নিছক বাক্যালঙ্কারের বিষয় নয়। খালিয়াজুরীর মতো জনপদে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় যে স্বাস্থ্য ও প্রাণহানি ঘটে, তার দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না। সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নানা অজুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা যেমন নৈতিকতার মানদণ্ডেও গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে কেবলই অজুহাত কাম্য হতে পারে না। নেত্রকোনার সিভিল সার্জনের এই বক্তব্য কেউই অস্বীকার করতে চাইবেন না যে, দুর্গমতার কারণে চিকিৎসকরা তদবির করে খালিয়াজুরীতে নিয়োগ বা বদলি ঠেকিয়ে দেন। তাহলে এমন দুর্গম জনপদের নাগরিকরা কি বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে? ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই যে, চিকিৎসা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার, তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। দুর্গমতা সেই অধিকার ও দায়িত্বের মাঝখানে দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারে না। অনাকাঙ্ক্ষিত দেয়াল ভাঙার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি খালিয়াজুরী থেকেই সূচিত হোক।

No comments

Powered by Blogger.