স্কুলে ফেলে আসছে বই-খাতা?

রাতে পড়তে বসার সময় মা হয়তো দেখলেন, শিশুটির বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কোথায় গেল? ক্লাসেই শিশুটি ফেলে এসেছে বই-খাতা। এ জন্য অনেক সময় পরীক্ষার আগের রাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, পরদিন যে পরীক্ষা! কারও কারও ক্ষেত্রে ভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। দেখা গেল, ইচ্ছা করেই স্কুলে রেখে আসছে বই-খাতা। আর পেনসিল, রাবার, স্কেল ফেলে আসা তো নিত্যদিনের ঘটনা। ‘এ বিষয়ে অভিভাবককেই সবচেয়ে সচেতন হতে হবে। শিশুর এ ধরনের ভুলে


যাওয়ার সমস্যা থাকলে তাকে এই অবস্থা থেকে মা-বাবাই বের করে আনতে পারেন।’ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ। তিনি আরও বলেন, ‘সাত থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে চঞ্চলতা থাকে। স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজলে একধরনের তাড়াহুড়ো কাজ করে। দেখেশুনে বই-খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় না। ফলে প্রয়োজনীয় বই-খাতা ফেলে আসে স্কুলে। রাগ না করে সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে। ছুটির ঘণ্টা দেওয়ামাত্রই যেন দৌড় না দেয়। সব বই-খাতা ঠিকভাবে নিল কি না তা যেন একটু দেখে নেয়।’
অভিভাবকদের জন্যও কিছু পরামর্শ দেন তিনি। অভিভাবকেরা প্রায়ই শিশুকে স্কুলে আনতে যান। তখন অথবা বাড়ি ফিরেই একটু সময় করে ব্যাগটা দেখে নিতে হবে। অপরিণত বয়সের কারণে লেখাপড়ায় আকর্ষণ কম থাকলে এটা হতে পারে। আগ্রহ না থাকায় বই-খাতাও স্কুল থেকে আনতে চায় না। তাহলে তাকে পড়তে হবে না—এমনটা ভেবে নেয় সে। সে জন্য প্রথমত, শিশুর কাছে লেখাপড়া আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে। অভিভাবক যদি কৌশলী হন এবং সামর্থ্য থাকে, তবে কিছু বই আরেকটি করে কিনে রাখতে পারেন। এতে শিশু বুঝতে পারবে, বই রেখে এলেও পড়ায় ফাঁকি দিতে পারবে না। ফলে সে ঠিকই বই গুছিয়ে আনবে। আর ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সদস্যদের উচিত, শিশুর বই-খাতা গোছানোর অভ্যাস তৈরি করা, যাতে তারা স্কুলের ব্যাগ নিজেরা গুছিয়ে নেয়। তাহলে স্কুল থেকে ফেরার সময় অভ্যাসমতো সব গুছিয়ে আনবে।
আইডিয়েল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক দীদার চৌধুরী বলেন, যদি প্রতিদিন মা-বাবা বিষয়টি লক্ষ রাখেন, তাহলে সন্তানেরা সেটি বুঝে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে না। শিশুরা শুধু এই ব্যাপারটিই ভুলে যাচ্ছে, নাকি অন্য কিছুও মনে রাখতে পারছে না, সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করুন। শিশুকে এ জন্য অবশ্যই দোষারোপ করবেন না। তার সমস্যা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সমাধানে মা-বাবাকেই এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.