তত্ত্বাবধায়কের জন্য এত মায়াকান্না কেন? by ফকীর আবদুর রাজ্জাক
কয়েক মাস আগে যখন উচ্চ আদালতের এক রায়ের পর বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয় তখন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দলীয় নেতারা ওই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পক্ষে জোরাল অবস্থান নেন। সংসদে পাস হওয়ার আগেও যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না আলোচনা চলছিল তখনো বিএনপি নেতারা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
কয়েকমাস পরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বেগম খালেদা অধিক জোরে ওই সরকারব্যবস্থার পক্ষে তার দলের অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে, নইলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। খালেদা জিয়া বা বিএনপির এমন দৃঢ় মনোভাব প্রকাশের পর দেশব্যাপী আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় মনে হয়েছিল তিনি কোন কথা বলবেন না। হয়তো দেশে ফিরেই যা বলার বলবেন। কিন্তু নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিয়ে বলেছেন আগামী নির্বাচন শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে কারও কোন প্রস্তাব থাকলে তারা তা দিতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার আর কোন অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন_ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ভাবমূর্তি প্রথম থেকেই পদদলিত করেছে বিএনপি বা বেগম খালেদা জিয়া। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের দাবিতে দেশে যখন আন্দোলন হয়, তখন ক্ষমতায় থেকে বিএনপি ও খালেদা জিয়াই তার চরম বিরোধিতা করেছিলেন। পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন। এরপর আন্দোলনের মুখে যখন সরকারব্যবস্থা আইন হিসেবে একপক্ষীয় তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে পাস করা হয়, তখনো সেই আইনের মধ্যে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্রপতির হাতে বিপুল ক্ষমতা দেয়া হয়। প্রতিরক্ষার সার্বিক বিষয় তুলে দেয়া হয় রাষ্ট্রপতির হাতে। ফলে তাদের বশংবদ রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ইচ্ছামতো সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতিসহ নানা অপকর্ম করেছিলেন ওই সরকারব্যবস্থা ক্ষমতার বদৌলতে। তার আগে স্বৈরশাসকের পদত্যাগের পর যে নির্বাচন হয়েছিল সেটাও ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে। যদিও তখন আইনটি পাস হয়নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ছিলেন তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তখনো বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল সেই সরকারব্যবস্থার বিরুদ্ধে নানাভাবে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। এরপর '৯৬তে ক্ষমতার শেষপ্রান্তে আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে বিএনপি এবং দেশের বড় দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারির তথাকথিত ভোটারবিহীন নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের সংসদে এনে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস করা হয় তাতে ফাঁক-ফোকর রেখে দেয়া হয়, তাদের নিজেদের স্বার্থে। এই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় '৯৬ সালে। তখন প্রধান উপদেষ্টা হন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। সে সময়ই দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রতিরক্ষা বিভাগের ব্যাপক ক্ষমতা হাতে পেয়ে তার অপব্যবহার করেছিলেন। সেই নির্বাচনের ফলাফলও বিএনপি সহজে মেনে নিতে পারেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের চারদলীয় জোট বিজয়ী হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুণগানে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সবচাইতে পদদলিত বিএনপি করেছে ২০০৬ সালে যে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সে সময়। তখনই বিচারপতিদের দুই বছর চাকরির বয়স বাড়িয়ে দলের সাবেক এক নেতাকে যিনি পরে অ্যাডভোকেট হিসেবে বিচারপতি হয়ে একসময় দেশের প্রধান বিচারপতিও হয়েছিলেন তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তখনই বিএনপি তাদের বশংবদ নির্বাচন কমিশন গঠন করে এক কোটির ওপর ভুয়া ভোটার তৈরি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছিল। তারাই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ব্যবহার করে তাদেরই নির্দেশ ও কৌশলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। গোটা দেশ যখন বিএনপির সেই কারসাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে রীতিমতো গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই দেশে জরুরি আইন জারি করে মূলত দেশের সেনাবাহিনী ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। প্রথম দিকে তারা জনগণের সমর্থন পেলেও যখন তারা জাতীয় রাজনীতির ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠল তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৌল আদর্শ 'নিরপেক্ষতা' ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তারা দুই বছর ক্ষমতাকব্জা করে রেখে এবং দেশকে রাজনীতিশূন্য করার খেলায় মেতে ওঠে। নির্যাতন নিষ্পেষণের স্টিম রোলার চালানো হয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, অর্থশালী লোক তথা জনগণের ওপর। '৯৬ সাল থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশে যেসব নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল তা ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামেই। আর এ সবের মূলহোতা ছিল বিএনপি এবং পরে সামরিক বাহিনী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি ছিল এক মহৎ উদ্দেশ্য থেকে। সাময়িক এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের কয়েকটি নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি অনুষ্ঠান করা যায়, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে এবং তারপরে গণতান্ত্রিক বিধান ও প্রচলিত নিয়মানুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন করা সহজ হবে। তখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকার কোন বাধা হবে না। কিন্তু দেশে বিএনপিই এই সরকারব্যবস্থার মূল দর্শনটি সচেতনভাবে আড়াল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথম থেকে শেষদিন পর্যন্ত নিজেদের দলীয় স্বার্থ হাসিল করার জন্য নগ্নভাবে চেষ্টা করেছে। এরপর বাকি ক্ষতিসাধন করে গেছে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাই ২০০৮-এ এসে দেশের জনগণ নীরব ম্যান্ডেট জানিয়ে দিয়েছিল_ আর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নয়, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই বলবৎ রয়েছে এই ব্যবস্থা। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পৃথক কোন ব্যবস্থা হয় নাই। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও দর্শনে কোন অনির্বাচিত সরকার নির্বাচিত সরকারের চাইতে ভালো, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নয়। সেদিক থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় এই তত্ত্বাবধায়ক নিয়মটি দারুণ বৈপরীত্যও বটে। দেশের উচ্চ আদালতে অনেকদিন আগেই একটা রিট মামলা রুজু করা ছিল। সেই রিটের চূড়ান্ত রায় দিয়ে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেছেন। তারই প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদ '৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওই আইনটিও বাতিল করে দিয়েছে। এখন রাজনীতিবিদ বিশেষ করে ক্ষমতাসীন সরকারের দায়িত্ব আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাইতে বেশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তাদের। দেশের গণতন্ত্র ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের রীতি, নীতি-আদর্শের প্রতি আনুগত্য থেকে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জে তাদের অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
বস্তুত রাজনৈতিক দল ও সরকারের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরই জনগণের ভোটের নিরাপত্তা দেবে তারাই। নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চাইতে রাজনীতিকদের যে বেশি দায়িত্ব ও কর্তব্য দেশ ও জাতির প্রতি সেটা প্রমাণ করতে হবে রাজনীতিকদের যোগ্যতা, মেধা, দূরদর্শিতা ও সততা দিয়ে। কেননা রাজনীতিই পারে দিনবদল করতে বা নতুন সমাজ গড়তে।
নিজেরা রাজনীতিক হয়ে সেই রাজনীতিকদের যোগ্যতা ও গুরুত্ব অস্বীকার করে যারা 'নির্দলীয়-নিরপেক্ষ' নামক অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত সরকারব্যবস্থার সমর্থনে মরিয়া হয়ে উঠেছে_ ধরে নিতে হবে তাদের মাথায় অন্য কোন মতলব রয়েছে। এ কথা আজ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের পক্ষে আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগ এবং সমমনা অন্যান্য দল। বিএনপিসহ তাদের সমমনা দল সেই আন্দোলনের চরম বিরোধিতা করে নজির স্থাপন করেছিল। বিএনপি ও তার নেতারা 'মার চেয়ে মাসির দরদ' দেখিয়ে কেন মাঠে নামার ঘোষণা দিলেন সেটাই জনগণের প্রশ্ন। অথচ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন বারবার তাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল_ আলোচনায় এসে তাদের প্রস্তাব পেশ করার জন্য। এমনকি জাতীয় সংসদের যে অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয় তখনো তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল_ সংসদে এসে তারা যেন তাদের বিকল্প প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু কোন উপরোধ-অনুরোধই তারা সে দিন শোনেননি। গায়ের জোরেই তারা সরকারের সিদ্ধান্ত ভ-ুল করে দেবে_ এমন দাম্ভিকতা নিয়েই তারা এখন মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। এ কথা আজ সর্বজনবিদিত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এখন অতীত হয়ে গেছে। উচ্চ আদালত যখন রায় দেন তখনো সে রায়ে বলা হয়েছিল, আগামী দু-একটা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। বিএনপি এই রায়ের প্রতিও সম্মান দেখিয়ে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে সেদিন এগিয়ে আসেনি। গণতন্ত্রের প্রতি, তার ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি যাদের সামান্যতম বিশ্বাস রয়েছে দেশের সেই সচেতন মানুষ মানেই চাইবে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তাদের অধীনেই আগামীর নির্বাচনগুলো পরিচালনা করতে। দেশে আর কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। নির্বাচনকালে জাতি আর দেখতে চায় না নির্দলীয় নিরপেক্ষতার আড়ালে ড. ইয়াজউদ্দিন, ড. ফখরুদ্দীন, আবদুর রহমান বিশ্বাস বা লতিফুর রহমানের মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিদের।
কেউ বারবার ভুল রাজনীতি করলে তার খেসারত তাকে দিতেই হবে। অবশ্য যারা ভুল করেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন না অথবা বুঝতে চান না। আর ভুল করে তার সংশোধন করা বা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার রেওয়াজ আমাদের দেশের রাজনীতিতে গড়েই ওঠেনি। ভুল স্বীকার করলে যে জনগণ খুশি হয় এবং দ্রুত তারা ওই ভুলের কথা আর মনে রাখে না_ এই সহজ হিসাবটাও রাজনীতিবিদরা উপলব্ধি করেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার উদ্যোগ ও কার্যক্রম চলাকালে বিএনপির সুযোগ এসেছিল আলোচনায় সাড়া দিয়ে তাদের মতামত বা বিকল্প প্রস্তাব পেশ করার। কিন্তু অরাজনৈতিক গোঁয়ার্তুমি দেখিয়ে তারা সেই সুযোগ গ্রহণ করেনি। এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদের দিতেই হবে। এখন দেখলাম_ বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ বলেছেন_ সরকার তো উচ্চ আদালতের ২-১ বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন করা যেতে পারে বলে রায়ে যে কথা উল্লেখ করেছিলেন, সরকার সেটাও মানেনি। অথচ এই রায়ের পরই বারবার তাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল আলোচনায় এসে বিকল্প প্রস্তাব দিতে। সেদিন তারা যদি আলোচনার ডাকে সাড়া দিত, তাহলে একপক্ষীয়ভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল না হয়ে একটা সামঞ্জস্য বিধান করা যেত। এখন কাঁদলেও হালে আর পানি পাওয়া যাবে না। আর 'বিপ্লব'? সেতো বহুত দূরাস্ত।
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ যিনি বিএনপির আন্দোলনের নতুন সহযোগী হয়ে মাঠে রয়েছেন, তিনি আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ঈদের আগেই সরকারের পতন ঘটবে বলে দাম্ভিক ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছেন। কিন্তু সেদিন বেগম খালেদা জিয়া জনসভা থেকে সরকারের মেয়াদ আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কর্নেল অলির সাবেক ও বর্তমান নেত্রী সরকারের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিলেন_ সে ব্যাপারে তার বক্তব্য দেশবাসীর জানতে ইচ্ছে করে। তাই এসব 'বাকোয়াজ' বন্ধ করে বিএনপি ও তার সহযোগী নেতাদের উচিত হবে_ মাটির কাছে এসে রাজনীতি করা। সরকারের সব কাজই সঠিক হচ্ছে তা আমরা মনে করি না। ব্যর্থতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তার জন্য জনমত সৃষ্টি করে আন্দোলন করুন। নিয়মতান্ত্রিক সে আন্দোলনে জনগণ উপকৃত হবে দেশের সম্পদ রক্ষা পাবে এবং গণতন্ত্রও সজীব হয়ে সামনে এগোতে পারবে।
[লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।]
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ভাবমূর্তি প্রথম থেকেই পদদলিত করেছে বিএনপি বা বেগম খালেদা জিয়া। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের দাবিতে দেশে যখন আন্দোলন হয়, তখন ক্ষমতায় থেকে বিএনপি ও খালেদা জিয়াই তার চরম বিরোধিতা করেছিলেন। পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন। এরপর আন্দোলনের মুখে যখন সরকারব্যবস্থা আইন হিসেবে একপক্ষীয় তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে পাস করা হয়, তখনো সেই আইনের মধ্যে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা রক্ষার স্বার্থে রাষ্ট্রপতির হাতে বিপুল ক্ষমতা দেয়া হয়। প্রতিরক্ষার সার্বিক বিষয় তুলে দেয়া হয় রাষ্ট্রপতির হাতে। ফলে তাদের বশংবদ রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ইচ্ছামতো সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতিসহ নানা অপকর্ম করেছিলেন ওই সরকারব্যবস্থা ক্ষমতার বদৌলতে। তার আগে স্বৈরশাসকের পদত্যাগের পর যে নির্বাচন হয়েছিল সেটাও ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে। যদিও তখন আইনটি পাস হয়নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ছিলেন তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তখনো বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল সেই সরকারব্যবস্থার বিরুদ্ধে নানাভাবে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। এরপর '৯৬তে ক্ষমতার শেষপ্রান্তে আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে বিএনপি এবং দেশের বড় দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারির তথাকথিত ভোটারবিহীন নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের সংসদে এনে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস করা হয় তাতে ফাঁক-ফোকর রেখে দেয়া হয়, তাদের নিজেদের স্বার্থে। এই আইনের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় '৯৬ সালে। তখন প্রধান উপদেষ্টা হন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। সে সময়ই দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রতিরক্ষা বিভাগের ব্যাপক ক্ষমতা হাতে পেয়ে তার অপব্যবহার করেছিলেন। সেই নির্বাচনের ফলাফলও বিএনপি সহজে মেনে নিতে পারেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের চারদলীয় জোট বিজয়ী হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুণগানে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সবচাইতে পদদলিত বিএনপি করেছে ২০০৬ সালে যে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সে সময়। তখনই বিচারপতিদের দুই বছর চাকরির বয়স বাড়িয়ে দলের সাবেক এক নেতাকে যিনি পরে অ্যাডভোকেট হিসেবে বিচারপতি হয়ে একসময় দেশের প্রধান বিচারপতিও হয়েছিলেন তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তখনই বিএনপি তাদের বশংবদ নির্বাচন কমিশন গঠন করে এক কোটির ওপর ভুয়া ভোটার তৈরি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছিল। তারাই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ব্যবহার করে তাদেরই নির্দেশ ও কৌশলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। গোটা দেশ যখন বিএনপির সেই কারসাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে রীতিমতো গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই দেশে জরুরি আইন জারি করে মূলত দেশের সেনাবাহিনী ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। প্রথম দিকে তারা জনগণের সমর্থন পেলেও যখন তারা জাতীয় রাজনীতির ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠল তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৌল আদর্শ 'নিরপেক্ষতা' ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তারা দুই বছর ক্ষমতাকব্জা করে রেখে এবং দেশকে রাজনীতিশূন্য করার খেলায় মেতে ওঠে। নির্যাতন নিষ্পেষণের স্টিম রোলার চালানো হয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, অর্থশালী লোক তথা জনগণের ওপর। '৯৬ সাল থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশে যেসব নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল তা ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামেই। আর এ সবের মূলহোতা ছিল বিএনপি এবং পরে সামরিক বাহিনী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি ছিল এক মহৎ উদ্দেশ্য থেকে। সাময়িক এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের কয়েকটি নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি অনুষ্ঠান করা যায়, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে এবং তারপরে গণতান্ত্রিক বিধান ও প্রচলিত নিয়মানুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন করা সহজ হবে। তখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকার কোন বাধা হবে না। কিন্তু দেশে বিএনপিই এই সরকারব্যবস্থার মূল দর্শনটি সচেতনভাবে আড়াল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথম থেকে শেষদিন পর্যন্ত নিজেদের দলীয় স্বার্থ হাসিল করার জন্য নগ্নভাবে চেষ্টা করেছে। এরপর বাকি ক্ষতিসাধন করে গেছে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাই ২০০৮-এ এসে দেশের জনগণ নীরব ম্যান্ডেট জানিয়ে দিয়েছিল_ আর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নয়, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই বলবৎ রয়েছে এই ব্যবস্থা। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পৃথক কোন ব্যবস্থা হয় নাই। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও দর্শনে কোন অনির্বাচিত সরকার নির্বাচিত সরকারের চাইতে ভালো, দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নয়। সেদিক থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় এই তত্ত্বাবধায়ক নিয়মটি দারুণ বৈপরীত্যও বটে। দেশের উচ্চ আদালতে অনেকদিন আগেই একটা রিট মামলা রুজু করা ছিল। সেই রিটের চূড়ান্ত রায় দিয়ে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেছেন। তারই প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদ '৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওই আইনটিও বাতিল করে দিয়েছে। এখন রাজনীতিবিদ বিশেষ করে ক্ষমতাসীন সরকারের দায়িত্ব আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাইতে বেশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তাদের। দেশের গণতন্ত্র ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের রীতি, নীতি-আদর্শের প্রতি আনুগত্য থেকে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জে তাদের অবশ্যই জয়ী হতে হবে।
বস্তুত রাজনৈতিক দল ও সরকারের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরই জনগণের ভোটের নিরাপত্তা দেবে তারাই। নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চাইতে রাজনীতিকদের যে বেশি দায়িত্ব ও কর্তব্য দেশ ও জাতির প্রতি সেটা প্রমাণ করতে হবে রাজনীতিকদের যোগ্যতা, মেধা, দূরদর্শিতা ও সততা দিয়ে। কেননা রাজনীতিই পারে দিনবদল করতে বা নতুন সমাজ গড়তে।
নিজেরা রাজনীতিক হয়ে সেই রাজনীতিকদের যোগ্যতা ও গুরুত্ব অস্বীকার করে যারা 'নির্দলীয়-নিরপেক্ষ' নামক অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত সরকারব্যবস্থার সমর্থনে মরিয়া হয়ে উঠেছে_ ধরে নিতে হবে তাদের মাথায় অন্য কোন মতলব রয়েছে। এ কথা আজ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের পক্ষে আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগ এবং সমমনা অন্যান্য দল। বিএনপিসহ তাদের সমমনা দল সেই আন্দোলনের চরম বিরোধিতা করে নজির স্থাপন করেছিল। বিএনপি ও তার নেতারা 'মার চেয়ে মাসির দরদ' দেখিয়ে কেন মাঠে নামার ঘোষণা দিলেন সেটাই জনগণের প্রশ্ন। অথচ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তখন বারবার তাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল_ আলোচনায় এসে তাদের প্রস্তাব পেশ করার জন্য। এমনকি জাতীয় সংসদের যে অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ব্যবস্থা বাতিল করা হয় তখনো তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল_ সংসদে এসে তারা যেন তাদের বিকল্প প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু কোন উপরোধ-অনুরোধই তারা সে দিন শোনেননি। গায়ের জোরেই তারা সরকারের সিদ্ধান্ত ভ-ুল করে দেবে_ এমন দাম্ভিকতা নিয়েই তারা এখন মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। এ কথা আজ সর্বজনবিদিত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এখন অতীত হয়ে গেছে। উচ্চ আদালত যখন রায় দেন তখনো সে রায়ে বলা হয়েছিল, আগামী দু-একটা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। বিএনপি এই রায়ের প্রতিও সম্মান দেখিয়ে বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে সেদিন এগিয়ে আসেনি। গণতন্ত্রের প্রতি, তার ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি যাদের সামান্যতম বিশ্বাস রয়েছে দেশের সেই সচেতন মানুষ মানেই চাইবে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তাদের অধীনেই আগামীর নির্বাচনগুলো পরিচালনা করতে। দেশে আর কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। নির্বাচনকালে জাতি আর দেখতে চায় না নির্দলীয় নিরপেক্ষতার আড়ালে ড. ইয়াজউদ্দিন, ড. ফখরুদ্দীন, আবদুর রহমান বিশ্বাস বা লতিফুর রহমানের মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিদের।
কেউ বারবার ভুল রাজনীতি করলে তার খেসারত তাকে দিতেই হবে। অবশ্য যারা ভুল করেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন না অথবা বুঝতে চান না। আর ভুল করে তার সংশোধন করা বা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার রেওয়াজ আমাদের দেশের রাজনীতিতে গড়েই ওঠেনি। ভুল স্বীকার করলে যে জনগণ খুশি হয় এবং দ্রুত তারা ওই ভুলের কথা আর মনে রাখে না_ এই সহজ হিসাবটাও রাজনীতিবিদরা উপলব্ধি করেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার উদ্যোগ ও কার্যক্রম চলাকালে বিএনপির সুযোগ এসেছিল আলোচনায় সাড়া দিয়ে তাদের মতামত বা বিকল্প প্রস্তাব পেশ করার। কিন্তু অরাজনৈতিক গোঁয়ার্তুমি দেখিয়ে তারা সেই সুযোগ গ্রহণ করেনি। এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদের দিতেই হবে। এখন দেখলাম_ বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ বলেছেন_ সরকার তো উচ্চ আদালতের ২-১ বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন করা যেতে পারে বলে রায়ে যে কথা উল্লেখ করেছিলেন, সরকার সেটাও মানেনি। অথচ এই রায়ের পরই বারবার তাদের আহ্বান জানানো হয়েছিল আলোচনায় এসে বিকল্প প্রস্তাব দিতে। সেদিন তারা যদি আলোচনার ডাকে সাড়া দিত, তাহলে একপক্ষীয়ভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল না হয়ে একটা সামঞ্জস্য বিধান করা যেত। এখন কাঁদলেও হালে আর পানি পাওয়া যাবে না। আর 'বিপ্লব'? সেতো বহুত দূরাস্ত।
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ যিনি বিএনপির আন্দোলনের নতুন সহযোগী হয়ে মাঠে রয়েছেন, তিনি আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ঈদের আগেই সরকারের পতন ঘটবে বলে দাম্ভিক ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছেন। কিন্তু সেদিন বেগম খালেদা জিয়া জনসভা থেকে সরকারের মেয়াদ আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কর্নেল অলির সাবেক ও বর্তমান নেত্রী সরকারের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিলেন_ সে ব্যাপারে তার বক্তব্য দেশবাসীর জানতে ইচ্ছে করে। তাই এসব 'বাকোয়াজ' বন্ধ করে বিএনপি ও তার সহযোগী নেতাদের উচিত হবে_ মাটির কাছে এসে রাজনীতি করা। সরকারের সব কাজই সঠিক হচ্ছে তা আমরা মনে করি না। ব্যর্থতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তার জন্য জনমত সৃষ্টি করে আন্দোলন করুন। নিয়মতান্ত্রিক সে আন্দোলনে জনগণ উপকৃত হবে দেশের সম্পদ রক্ষা পাবে এবং গণতন্ত্রও সজীব হয়ে সামনে এগোতে পারবে।
[লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।]
No comments