রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প অনিশ্চিত by নাজমুল ইমাম
ভারতের গুজরাট রাজ্যের মান্দ্রায় টাটার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন টাকা ৪৮ পয়সা (২.২৬ রুপি)। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে চার হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বৃহৎ এ কেন্দ্রটি গড়ে উঠছে। ইতিমধ্যে পাঁচ ইউনিটের মধ্যে একটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সে দেশের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো গড়ে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ প্রায় চার টাকা দামে বিক্রি করে। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় অবস্থিত এদেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দাম পড়ে সাড়ে তিন টাকা।
বড়পুকুরিয়ায় কয়লাখনি থেকে কম দামে কয়লা পাওয়ায় সেখানে উৎপাদন খরচ কম পড়ছে। দেশে প্রথমবারের মতো কয়লাভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) স্থাপনের জন্য লংকিং ওরিয়ন জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির যে দরপত্র ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করেছে; তা হচ্ছে চার টাকা নয় পয়সা। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে ওরিয়ন এ দামে বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিতে পারলেও বাগেরহাটের রামপালে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য পড়বে এর দ্বিগুণেরও বেশি। সেখানে দাম পড়বে আট টাকা ৫৫ পয়সা। ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার লিমিটেডের (এনটিপিসি) খসড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ দর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের সম্ভাব্য মূল্য বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতি টন কয়লা ১৭০ ডলার দরে কিনতে হবে। ভারত থেকে ঋণ নিতে সুদ দিতে হবে ১৪ শতাংশ। মংলা বন্দরের কাছে জমি না পাওয়ায় এর জেটি ব্যবহার করা যাবে না। এজন্য নিজস্ব জেটি নির্মাণ করতে হবে। অবকাঠামোগত নির্মাণ ব্যয় বেশি পড়বে। প্রতি মেগাওয়াট ক্ষমতার জন্য ব্যয় হবে ১৫ কোটি টাকা। এনটিপিসির খসড়া সমীক্ষায় দেওয়া এসব হিসাব ও তথ্য বাংলাদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এ কারণে এনটিপিসিকে খসড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনটি আরও পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।
এনটিপিসির এ ধরনের খসড়া সমীক্ষায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এদেশের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, খসড়া সমীক্ষাটি মোটেই বাস্তবসম্মত হয়নি। এর ফলে এনটিপিসিকে ঘিরে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। শেষ পর্যন্ত রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, তারা না বুঝে বেশি দর ধরেছে। তাই আমরা খসড়া সমীক্ষা আরও পর্যালোচনা করতে বলেছি। বাস্তবসম্মত না হলে এবং এ দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে আমরা তাদের নিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করব না।
সূত্র জানায়, এনটিপিসি সমীক্ষার খসড়ায় বিদেশ থেকে কয়লার আমদানি মূল্য ধরেছে প্রতি টন ১৭০ ডলার। অথচ বর্তমানে বড়পুকুরিয়ার কয়লা সেখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্র ৮৪ ডলারে কিনছে। খসড়ায় প্রকল্পের ৮০ শতাংশ নির্মাণ ব্যয় ভারত থেকে জোগাড় করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য ১৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এছাড়া নরম মাটির নিচু জমি হওয়ায় ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামো ব্যয় বেশি হবে। এসব কারণে প্রস্তাবিত কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়বে বলে সমীক্ষার খসড়ায় বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, সালফার এবং কম হিটিং ভ্যালুর কয়লা কিনলে ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতি টন ১০০ থেকে ১২০ ডলারে পাওয়া যাবে। আর ৭/৮ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া সাধারণ ব্যাপার। এ জন্য এনটিপিসিকে ভারতের বাইরের মার্কেটেও খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। এ হিসাবে কয়লা এবং ঋণ পাওয়া গেলে রামপালের বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য পাঁচ টাকার কাছাকাছি হবে। তিনি জানান, খসড়া সমীক্ষায় অবকাঠামো ব্যয় কেন বেশি ধরা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে সম্প্রতি পিডিবির তিন সদস্যের একটি কারিগরি দল ভারতে গিয়ে এনটিপিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এনটিপিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত জমি নিচু হওয়ায় অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় বেশি হবে। তাছাড়া মংলা বন্দরের জেটি ব্যবহার করা না গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে। সে সঙ্গে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। তারা প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির জন্য যে সব যুক্তি দেখিয়েছে তার সব পিডিবির প্রকৌশলীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বলে তিনি জানান।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ সমকালকে বলেছেন, দেশের পাঁচটি কয়লা ক্ষেত্রে মোট মজুদ রয়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন কয়লা। তাই আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করে আগে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এরপরও যদি আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয় তবে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ ধরনের বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। এ দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে পিডিবি এ জাতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে। এতে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি দিলি্লতে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি 'এমওইউ' সই হয়। বিদ্যুৎ খাতে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে বাংলাদেশের 'পিডিবি' এবং ভারতের 'এনটিপিসি' যৌথভাবে একটি কোম্পানি গঠন করবে। সেই কোম্পানি বাগেরহাটের রামপালে স্থাপন করবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রস্তাবিত কেন্দ্র ২০১৫ সাল নাগাদ উৎপাদনে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে পিডিবি 'জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট-জেভিএ'-এর একটি খসড়াও প্রস্তুত করেছে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মোট জমি লাগবে এক হাজার ৮৩৪ একর। এই জমি অধিগ্রহণের জন্য উদ্যোগ নিয়েও বাধার মুখে পড়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন। 'সেন্টার ফর হিউম্যান রাউটস মুভমেন্টস' নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন আদালতে মামলা করলে যাবতীয় কার্যক্রম আটকে যায়। রামপালের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান সুন্দরবনের কাছে। এ কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। সংগঠনটি এই যুক্তিতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত জমি অধিগ্রহণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। তবে গত ঈদের আগে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ কোনো কাজই না এগোনোয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালেও 'জেভিএ' সই হয়নি।
এনটিপিসির এ ধরনের খসড়া সমীক্ষায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এদেশের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, খসড়া সমীক্ষাটি মোটেই বাস্তবসম্মত হয়নি। এর ফলে এনটিপিসিকে ঘিরে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। শেষ পর্যন্ত রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, তারা না বুঝে বেশি দর ধরেছে। তাই আমরা খসড়া সমীক্ষা আরও পর্যালোচনা করতে বলেছি। বাস্তবসম্মত না হলে এবং এ দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে আমরা তাদের নিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করব না।
সূত্র জানায়, এনটিপিসি সমীক্ষার খসড়ায় বিদেশ থেকে কয়লার আমদানি মূল্য ধরেছে প্রতি টন ১৭০ ডলার। অথচ বর্তমানে বড়পুকুরিয়ার কয়লা সেখানকার বিদ্যুৎকেন্দ্র ৮৪ ডলারে কিনছে। খসড়ায় প্রকল্পের ৮০ শতাংশ নির্মাণ ব্যয় ভারত থেকে জোগাড় করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য ১৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এছাড়া নরম মাটির নিচু জমি হওয়ায় ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামো ব্যয় বেশি হবে। এসব কারণে প্রস্তাবিত কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়বে বলে সমীক্ষার খসড়ায় বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, সালফার এবং কম হিটিং ভ্যালুর কয়লা কিনলে ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতি টন ১০০ থেকে ১২০ ডলারে পাওয়া যাবে। আর ৭/৮ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া সাধারণ ব্যাপার। এ জন্য এনটিপিসিকে ভারতের বাইরের মার্কেটেও খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। এ হিসাবে কয়লা এবং ঋণ পাওয়া গেলে রামপালের বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য পাঁচ টাকার কাছাকাছি হবে। তিনি জানান, খসড়া সমীক্ষায় অবকাঠামো ব্যয় কেন বেশি ধরা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে সম্প্রতি পিডিবির তিন সদস্যের একটি কারিগরি দল ভারতে গিয়ে এনটিপিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এনটিপিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত জমি নিচু হওয়ায় অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় বেশি হবে। তাছাড়া মংলা বন্দরের জেটি ব্যবহার করা না গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে। সে সঙ্গে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। তারা প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির জন্য যে সব যুক্তি দেখিয়েছে তার সব পিডিবির প্রকৌশলীদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বলে তিনি জানান।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ সমকালকে বলেছেন, দেশের পাঁচটি কয়লা ক্ষেত্রে মোট মজুদ রয়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন কয়লা। তাই আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করে আগে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এরপরও যদি আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয় তবে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ ধরনের বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। এ দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে পিডিবি এ জাতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে পারে। এতে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি দিলি্লতে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি 'এমওইউ' সই হয়। বিদ্যুৎ খাতে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে বাংলাদেশের 'পিডিবি' এবং ভারতের 'এনটিপিসি' যৌথভাবে একটি কোম্পানি গঠন করবে। সেই কোম্পানি বাগেরহাটের রামপালে স্থাপন করবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রস্তাবিত কেন্দ্র ২০১৫ সাল নাগাদ উৎপাদনে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে পিডিবি 'জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট-জেভিএ'-এর একটি খসড়াও প্রস্তুত করেছে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মোট জমি লাগবে এক হাজার ৮৩৪ একর। এই জমি অধিগ্রহণের জন্য উদ্যোগ নিয়েও বাধার মুখে পড়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন। 'সেন্টার ফর হিউম্যান রাউটস মুভমেন্টস' নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন আদালতে মামলা করলে যাবতীয় কার্যক্রম আটকে যায়। রামপালের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান সুন্দরবনের কাছে। এ কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। সংগঠনটি এই যুক্তিতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত জমি অধিগ্রহণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। তবে গত ঈদের আগে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ কোনো কাজই না এগোনোয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালেও 'জেভিএ' সই হয়নি।
No comments