আইসক্রিম যখন বেঁচে থাকার হাতিয়ার
আফগানিস্তানের হেরাতে একটি স্কুলের সামনে ছোট ছোট সমবয়সী মেয়ের ঝাঁক হাসতে হাসতে লুটোপুটি নিজেদের মধ্যে গল্পে মজে খেয়ে স্কুল থেকে বেড়োচ্ছে। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে ওদেরই বয়সী আরো একটি ছোট্ট মেয়ে। পরনে স্কুলের সাদা-কালো ইউনিফর্ম নেই, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা বা হাসিতে মেতে থাকার অবকাশও নেই। ৮ বছরের ফাতিমা। সমবয়সীরা যখন স্কুলে ব্যস্ত পড়াশোনায়, সে তখন রুটি-রুজির তাগিদে স্কুলের বাইরে আইসক্রিম বিক্রিতে ব্যস্ত।
স্কুলে পড়াশোনা ফতিমার কাছে বিলাসিতা। যে স্কুলের সামনে ফাতিমা আইসক্রিম বেচে সেই স্কুলের পড়ুয়ারাই তার ক্রেতা। সে-ও চায় স্কুলে যেতে। কিন্তু উপায় নেই। পঙ্গু বাবা, পাঁচ বোন আর দুই মায়ের সংসারে একমাত্র রোজগেরে সে। ফাতিমার বাবার দুই স্ত্রী। ছটি মেয়ে। আটজনের বড় সংসার জীর্ণ দুই কামরার ভাড়া বাড়িতে কোনো রকমে দিন গুজরান করে।
স্কুলে পড়াশোনা ফতিমার কাছে বিলাসিতা। যে স্কুলের সামনে ফাতিমা আইসক্রিম বেচে সেই স্কুলের পড়ুয়ারাই তার ক্রেতা। সে-ও চায় স্কুলে যেতে। কিন্তু উপায় নেই। পঙ্গু বাবা, পাঁচ বোন আর দুই মায়ের সংসারে একমাত্র রোজগেরে সে। ফাতিমার বাবার দুই স্ত্রী। ছটি মেয়ে। আটজনের বড় সংসার জীর্ণ দুই কামরার ভাড়া বাড়িতে কোনো রকমে দিন গুজরান করে।
সকাল ৭টা বাজতে না বাজতেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় ফতিমা। হোলসেলারের কাছ থেকে আইসক্রিমের বাক্সগুলো নিয়ে ভর্তি করে তার আইসক্রিম গাড়ি। ছোট্ট ছোট্ট হাতে কোনওরকমে সেই গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাটের এবড়োখেবড়ো রাস্তায় আইসক্রিম বেচে বেড়ায় সে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে তার যুদ্ধ।
‘আমি যখন স্কুলের সামনে আইসক্রিম বেচি, যখন দেখি মেয়েরা হাসি মুখে স্কুলে যাচ্ছে, তখন আমারও ভীষণ স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে। অনেক টাকা জমাতে চাই। যাতে আর আমাকে কাজ করতে না হয়। অন্য মেয়েদের মতো স্কুলে যাওয়া আমার একমাত্র স্বপ্ন।’ একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে ৮ বছরের এই কিশোরী।
শিশুশ্রমিক আফগানিস্তানে ভীষণ সাধারণ। সে দেশের ৭থেকে ১৪ বছর বয়সী ১৭% কিশোরীরাই হয় বাড়ির বাইরে কাজ করে অথবা বাড়ির মধ্যে যাবতীয় গৃহস্থালির কাজকর্ম করে তারা। জানাচ্ছে ইউনিসেফ-এর রিপোর্ট। ফাতিমা দিনে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করে। পুরোটাই চলে যায় তার বড় পরিবারের খিদে মেটাতে। চার বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় চলনশক্তি লোপ পান ফাতিমার বাবা। হুইলচেয়ারই তার একমাত্র অবলম্বন। যে যে দিন একটু সুস্থ থাকেন মোবাইল ফোনের রিচার্জ কার্ড বেচে মেয়েকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন তিনি। বাড়ি ফিরে এসেও ছুটি হয় না ফাতিমার। বাকি দিনটা কেটে যায় পঙ্গু বাবার সেবা যত্নে।
No comments