সিলেটে ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ
সিলেটে ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি প্রতারক চক্র। প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের নামে জামানত হিসেবে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্র। সোমবার সন্ধ্যায় প্রতারিত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা কথিত ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ঘেরাও করেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন তারা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন অধ্যক্ষ মোছা. নিপাসহ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। এ সময় তারা হজরত শাহজালাল (র.) মাজার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রথমে তারা অবরোধকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও সফল হননি। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চাপের মুখে অধ্যক্ষ মোছা. নিপাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তবে তার স্বামী আমিনুল ইসলাম পালিয়ে যান। বিতর্কিত এ প্রতিষ্ঠানের নাম সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট। নগরীর হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সংলগ্ন দরগাহ গেট এলাকায় একটি ভবন ভাড়া করে ৪ বছর ধরে তারা এমন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি- এ ইন্সটিটিউটটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের নামে ছাত্র ভর্তি করা হয় বিভিন্ন ব্যাচে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে কর্মসংস্থানের কথা বলে জামানত হিসেবে চাওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। টাকার বিপরীতে তাদের চেকও দেয়া হয়। এভাবে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি প্রদানের কথা বলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ছোট্ট একটি অফিসের নামকাওয়াস্ত বিভিন্ন পদ দেখিয়ে শত শত লোককে নিয়োগ এবং জামানত হিসাবে লাখ লাখ টাকা আদায় সন্দেহের অবতারণা করে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে। তাছাড়া চাকরি ও বেতন দুটোই হবে হচ্ছে এমন আশ্বাস দিয়ে মাসের পর মাস বিলম্ব করতে থাকায় ধৈর্যহীন হয়ে পড়েন নিয়োগপ্রাপ্তরা। একপর্যায়ে সোমবার তারা সংগঠিত হয়ে কথিত ট্রেনিং ইন্সটিটিউটটি ঘেরাও করেন। বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারা ঘেরাও করে রাখেন ইন্সটিটিউটটি। প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থী কুলাউড়ার জয়পাশা গ্রামের এমদাদুর রহমান জানান, চলতি বছর জানুয়ারিতে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) ভর্তি হন তিনি। ৮ সেমিস্টারে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পরিশোধের শর্তে জানুয়ারি মাসে ২০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ভর্তি হন। জুলাই মাসে দ্বিতীয় সেমিস্টারে আরও ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু ক্লাস নিয়মিত হয় না। শিক্ষক নেই এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে। এভাবে প্রায় ১২০ জন ছাত্রের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ২৪ লাখ টাকা নিয়ে ভর্তি করে তারা। জুলাই মাসে ২য় সেমিস্টারের টাকা ২০ হাজার করে আরও ২৪ লাখ টাকা নেয়। কিন্তু শিক্ষক নেই। ২-৩ মাস পরপর শিক্ষক চলে যান। এমন অব্যবস্থাপনার কারণে অভিভাবকরা খবর নেন বাংলাদেশ কারিগর শিক্ষা বোর্ডে। তারা জানতে পারেন সিলেট প্রফেশনাল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট নামে কোনো অনুমোদিত ইন্সটিটিউট নেই। এ খবর ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ইন্সটিটিউটটি ঘেরাও করেন। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ভুয়া ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের নামে দীর্ঘদিন থেকে চক্রটি প্রতারণা করে আসছিল। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইন্সটিটিউট ঘেরাও করলে অধ্যক্ষ মোছা. নিপাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলায় বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments