সাদা দৈত্য থেকে সাবধান!

মুদ্রে ভাসতে থাকা বিশাল বিশাল সাদা বরফের চাঁই হিমশৈল, সাদা দৈত্য বা আইসবার্গ নামে পরিচিত। পৃথিবীর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর মধ্যে এটি একটি। তবে দেখতে যতই মনোরম হোক, কোনো জাহাজ সামনে পড়লেই মহাবিপদ! কোনো রক্ষা নেই। এই সাদা দৈত্যের সঙ্গে গুঁতা খেয়ে যুগে যুগে ডুবে গেছে অসংখ্য জাহাজ। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গত শতাব্দীর শুরুতে। ডুবে যায় টাইটানিকের মতো বিশাল জাহাজ। পাহাড়-পর্বতের চূড়ায় জমে থাকা


বরফ ভেঙে উপত্যকা বেয়ে যখন সমুদ্রে এসে পড়ে, তখন তাকে বলে হিমশৈল বা আইসবার্গ। এ বিশালাকৃতির আইসবার্গগুলো দেখে মনে হয়, যেন বরফের পাহাড়। আইসবার্গ নানা আকৃতির হয়ে থাকে। ১০০ মিটার উচ্চতার আইসবার্গ সাধারণত বেশি দেখা যায়। মাঝে মধ্যে ১ হাজার মিটারেরও বেশি উচ্চতার আইসবার্গ দেখা যায়। আবার ৫ থেকে ১০ মিটার উচ্চতার আইসবার্গও আছে সমুদ্রের বুকে, যা নাবিকদের কাছে 'গ্রোলারস' নামে পরিচিত। ভাসমান এ বরফের পাহাড়গুলো প্রচণ্ড ভারি হয়। বিস্ময়কর হলেও সত্য, কিছু কিছু আইসবার্গের ওজন ১৮ কোটি টনের কাছাকাছি।
বিশাল ওজনের এই আইসবার্গগুলো পানিতে ভাসে কী করে এমন প্রশ্ন করাই যায়। আসলে পানির একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বভাব আছে। বেশিরভাগ পদার্থই তরল থেকে কঠিনে রূপান্তরিত হলে আয়তনে কমে। কিন্তু পানি যখন বরফে রূপান্তর হয়, তখন আয়তনে বেড়ে যায়। পরিমাণ এবং ভর অপরিবর্তিত থেকে আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় বরফের ঘনত্ব পানির চেয়ে কমে যায়। আর এ কারণে সমআয়তনের পানির চেয়ে বরফের ওজন কম। তাই আইসবার্গ পানিতে ভেসে বেড়ায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, বরফের ওজন পানির ৮/৯ অংশ। আর্কিমিডিসের সূত্রানুসারে, পানিতে ভাসমান অবস্থায় বরফের নয় ভাগের আটভাগ পানিতে নিমজ্জিত থাকে আর অবশিষ্ট একভাগ থাকে পানির ওপরে। তাই যে আইসবার্গ সমুদ্রের ওপরে মাত্র ৩০ মিটার অবস্থান করে, তা সমুদ্রের পানির নিচে প্রায় ২৪০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। বর্তমানে নাবিকরা হিমশৈল ঘটিত দুর্ঘটনার ব্যাপারে বেশ সতর্ক। রাডারের সাহায্যে জাহাজের গতিপথে হিমশৈলের উপস্থিতি তারা খুব সহজেই নির্ণয় করে থাকেন।
আশরাফুল আলম মিলন

No comments

Powered by Blogger.