আবাহনীর টেনশনের জয়

০ বলে দরকার ১৯ রান, হাতে ২ উইকেট। টেনশনে নখ কামড়ানো আবাহনী ক্রিকেটারদের সংখ্যা একটু একটু করে বাড়ছে। কর্মকর্তারাও ভিআইপি বক্সের সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ভিআইপি গ্যালারিতে বসে থাকা গুটিকয়েক কট্টর আবাহনী সমর্থকদের মুখ থেকে শালীনতা দূর হয়ে কানবন্ধ করা শব্দ বেরোচ্ছে। যার লক্ষ্য শুধু শেখ জামালের সমর্থক আর ক্রিকেটাররাই নন, প্রতিপক্ষের বোলার ছাপিয়ে আম্পায়ারের দিকেও সুঁইয়ের মতো বিঁধছে। ক্লাব ক্রিকেটের এমন তপ্ত


কড়াইয়ের ওপর পড়েও মাথা ঠাণ্ডা রেখে শেখ জামালের স্পিনার মাহমুদুল হাসান লিমনকে পরপর চার বলে বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন আবাহনীর দশ নম্বর ব্যাটসম্যান নাজমুল ইসলাম অপু। ৪, ৬, ৪, ৪_ মাত্র ৪ বলে ১৮ রান নিয়ে শুধু আবাহনীর টেনশনই কমিয়ে দেননি অপু, বছরের প্রথম দিন আবাহনীকে স্বস্তির একটি জয়ও এনে দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে ব্রার্দাসের কাছে হেরে যাওয়ার পর কোণঠাসা আবাহনী গতকাল ২ উইকেটের জয় পেল শেখ জামালের কাছে। আর প্রথম ম্যাচে মোহামেডানকে হারানোর পর গতকাল জয়ের ধারায় ছেদ পড়ল জামালের। হারের পর জামাল সমর্থকদের অনেকেই ভাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত ক্লাব আবাহনীর দিকে; কিন্তু ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেট ময়দানে কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মতোই লড়ে গেছে দুটি দল। প্রথমবারের মতো আবাহনীতে খেলতে এসে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ ভীষণভাবে টের পেলেন ইংলিশ ক্রিকেটার পিটার ডেভিড ট্রেগো। 'আবাহনী চ্যাম্পিয়ন দল। শুনেছি এখানে ঘরোয়া ক্রিকেট খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। আজ তা ভীষণভাবে টের পেলাম। সমর্থকরা ভীষণভাবে চিয়ার্স করেছিল আমাদের দলকে।'
বেচারা পিটার, বাংলা বুঝতে না পারায় ভিআইপি গ্যালারিতে বসে থাকা সমর্থকদের গালমন্দ বুঝতে পারেননি। যেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন আবাহনীর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সকালে টসে হেরে বোলিং করতে হয়েছিল আবাহনীকে। শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছিল তাদের। ওপেনার শামসুর রহমান শুভর ৯৪ বলে ৫০ রান আর লংকান মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান জেহান মোবারকের ৫৫ রানের ইনিংসের জোরে শেখ জামাল ৮ উইকেটে সাকল্যে ২২৫ রান তুলতে পারে। জামালের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ১ রানের বেশি করতে পারেননি। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংটাও ভালো হয়েছিল আবাহনীর। একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে দলের ভারতীয় ওপেনার মিথুন মানহাজ আঙুলে চোট পান। যে কারণে এদিন ফজলে রাবি্ব আর আনামুল হক বিজয় ওপেন করতে নেমেছিলেন আবাহনীর; কিন্তু ৪৯ রানের মধ্যেই ওই দু'জন ফিরে যান। এরপর পিটার এসে ডলার মাহমুদের এক ওভারে চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান; কিন্তু পিটার ট্রেগো সোহরাওয়ার্দী শুভর বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ৪২ রানে ফিরতেই জামাল শিবির চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ১১০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে দেখেশুনে খেলতে থাকেন; কিন্তু তার ৫০ বলে ১২ রান তোলা দেখে সমর্থকরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করতে থাকে তারা নিজ দলের ক্রিকেটারদের দিকেই। কিন্তু রিয়াদ ছিলেন অবিচল। এ কারণে ৫০ রান করার পরও ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন তিনি। শুধু মাহমুদুল্লাহ নন, এদিন নিজ দলের সমর্থকদের কাছে খলনায়ক ছিলেন শেখ জামাল অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও। কেননা তিনি রিয়াদের একটি স্টাম্পিং মিস করেছিলেন ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়। এমনকি শেষ দিকে বোলার হিসেবে লিমনকে নির্বাচিত করেও সমালোচিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.