আশুগঞ্জে পৌঁছেছে ভারতীয় জাহাজঃ নৌপথে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা পেল ভারত by জাহাঙ্গীর শাহ

বার নৌপথে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজকে ট্রানশিপমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জ পর্যন্ত বড় জাহাজে পণ্য এনে বাংলাদেশি ছোট ছোট জাহাজে তা বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ২৭০ টন ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে এমভি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী নামের একটি ভারতীয় জাহাজ এখন আশুগঞ্জে। নৌপথে নিয়মিত ট্রানজিট নেওয়ার কথা থাকলেও নদীতে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে এখন বাংলাদেশি ছোট জাহাজে করে সিলেট অঞ্চলের করিমগঞ্জ সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এর ফলে নৌ-প্রটোকলের আওতায় এই পথে প্রথমবারের মতো ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা পেল ভারত। আশগঞ্জ নৌবন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক শাহ আলম গতকাল প্রথম আলোকে জানান, এখন পর্যন্ত জাহাজটি নৌবন্দরে নোঙর ফেলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেনি। নির্দেশনা না থাকায় জাহাজের অবস্থান মাশুলও আরোপ করা যাচ্ছে না।
ট্রানজিট-সংক্রান্ত সরকার গঠিত কোর কমিটির সদস্য এম রহমত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার ট্রানজিটের বিনিময়ে মাশুল আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে। এই মুহূর্তে নৌ-প্রটোকলের আওতায় অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে মাশুল ছাড়াই ট্রানশিপমেন্ট দিলে তা প্রচলন হয়ে যেতে পারে। পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলতে পারে, অতীতে মাশুল ছাড়াই পণ্য খালাস হয়েছে—এখন কেন মাশুল আরোপ করা হচ্ছে।’
ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে চালান খালাস করার পরামর্শ দিয়ে রহমত উল্লাহ বলেন, পরে মাশুল আরোপ করা হলে তা থেকে অর্থ কেটে রাখার সুযোগ থাকবে।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা জাহাজটি নিয়মিত নৌ-ট্রানজিট চেয়ে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে ট্রানজিট নেওয়ার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গত ২৮ সেপ্টেস্বর জাহাজটি ভৈরব পৌঁছায়।
সূত্র জানায়, ১৫ অক্টোবর থেকে আশুগঞ্জ হয়ে করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে পর্যাপ্ত নাব্যতা সংকটের কারণে তা বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। এতে বিপাকে পড়া জাহাজটি ভারতীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (আইডব্লিউটিএ) দ্বারস্থ হয়। আইডব্লিউটিএ আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে ছোট জাহাজে করে তা সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি চেয়ে বিআইডব্লিউটিএর কাছে আবেদন করে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদেশ দিয়ে বলে যে জাহাজটি থেকে পণ্য ছোট ছোট পণ্যবাহী জাহাজে করে করিমগঞ্জ সীমান্ত পর্যন্ত দিতে পারবে। নৌ-প্রটোকলের আওতায় একই পথ ব্যবহার করে ট্রানশিপমেন্ট (যান পরিবর্তন করে পণ্য পরিবহন) নেওয়ার ঘটনা প্রথম।
১৯৭২ সালের নৌ-প্রটোকলের ২৩(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, নাব্যতা সংকটের কারণে বেশি ড্রাফটসম্পন্ন (পণ্যবাহী জাহাজের যে অংশ পানির নিচে থাকে) জাহাজের পণ্য ট্রানশিপমেন্ট নিতে পারবে। ছোট পণ্যবাহী জাহাজে তা গন্তব্যে পৌঁছানো হবে। দুই দেশের মধ্যে নৌ-প্রটোকল স্বাক্ষরের পর প্রায় ৪০ বছর পর প্রথমবারের মতো এই ধারাটি ব্যবহার হলো। ভারত চাইলে বাংলাদেশের অনুমোদন সাপেক্ষে যেকোনো সময় এই সুযোগটি নিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.