মহাকরণে দীপু মনির সাক্ষাৎ-তিস্তা চুক্তিতে দুই বাংলারই স্বার্থ দেখতে হবে : মমতা by সুব্রত আচার্য্য,
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ দেখে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বুধবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় মহাকরণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'কেউ কেউ বিশেষ করে কিছু মিডিয়ায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।
আমি তাদের বলব, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক লড়াই নয়। তিস্তা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। এ কারণে আমরা বলেছি, যে চুক্তিই হোক বুঝে-শুনে হোক। কারণ তিস্তায় তিনটি জল বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের স্বার্থও জড়িত রয়েছে।'
ডা. দীপু মনি গতকাল বিকেলে মমতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে মহাকরণের প্রেস কর্নারে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজনই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
মমতা বলেন, 'বাংলাদেশেরও দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তার জল। এই দাবি আমরাও অ্যাপ্রিসিয়েট করি। এ কারণে ১৫ দিন আগে নদী বিশেষজ্ঞ পার্থ রুদ্রকে প্রধান করে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা সব দেখে-বুঝে জানাবেন। বাংলাদেশ জল পেলে আমি খুশিই হব।'
মমতা আরো বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আসার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আগামী মার্চে ঢাকায় বড় একটি অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমিও সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে প্রতিবেশী দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। নাটক-সিনেমার আদান-প্রদান করা হোক। এর জন্য প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গড়ার অনুরোধও করেছি।'
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি প্রথমে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি প্রায় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, 'আমাদের মধ্যে অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়েছে।' তিস্তা ইস্যুতে কি কোনো আলোচনা হয়নি_সাংবাদিকদের সরাসরি এ প্রশ্নে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ কথা হয়েছে। পানি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে হবে। তাই এ চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কোনো ভূমিকা আছে কি না_সেটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।'
দীপু মনি বলেন, 'আমি ব্যাঙ্গালুরু থেকে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় আমি তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি। একই সঙ্গে তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।' আরেক প্রশ্নের উত্তরে দীপু মনি জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ব্যাঙ্গালুরুতে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দিয়ে গতকাল দুপুরে কলকাতায় পেঁৗছেন দীপু মনি। তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান। দীপু মনির সঙ্গে দিলি্লতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিমও ছিলেন। বিকেলে এই তিনজনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে বিমানে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সঙ্গী থেকে হঠাৎ নাম প্রত্যাহার করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিস্তা চুক্তির খসড়ার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই_এমন অভিযোগ করে চুক্তির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানান তিনি।
No comments