কিছু অগ্রগতি হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে, গত বছর দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। যুদ্ধাপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরুসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি সত্ত্বেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণপিটুনিতে হত্যা ও গুপ্তহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। নিখোঁজ কিংবা গুপ্তহত্যা অপরাধের নতুন প্রবণতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিন রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে
দেশের সদ্যবিদায় নেওয়া বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এসব কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কিংবা তাদের হেফাজতে ১০০, গণপিটুনিতে ১৩৪, কারাগারে ১১৬, উত্ত্যক্ত করার কারণে আত্মহত্যা ৩৩ এবং এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এ বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫৮, সীমান্তে বিএসএফের গুলি-নির্যাতনে ৩৯, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতে ৭৪ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতায় ৩০ জন নিহতের পাশাপাশি নানা সহিংসতায় ৭ হাজার ২৩৮ জন আহত ও ৩০ জন অপহৃত হন। ৩০৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হওয়া ছাড়াও একজন সাংবাদিক খুন হন। এ ছাড়া সালিশ ও ফতোয়ার ঘটনায় ৫৯, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ও যৌন হয়রানিতে ৪২, এসিড সন্ত্রাসে ৬২, ধর্ষণে ৭৮৫ এবং যৌতুককে কেন্দ্র করে ৫০২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
আসকের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিডিআর জওয়ানদের বিচার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে আশংকা প্রকাশ ছাড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধাদান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি রহিত করে পরিপত্র জারি, জাতীয় শিশুনীতি অনুমোদন, কর্মজীবী নারীদের জন্য ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর, ফৌজদারি আইন সংশোধনের উদ্যোগ, মানব পাচার রোধ ও দমন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, নারীর প্রতি সব রকম বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডও) আওতায় সরকারি প্রতিবেদন দাখিল, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু, ৩৭১ সদস্যের পুলিশের স্বতন্ত্র নারী ইউনিটের যাত্রা শুরু এবং উচ্চ আদালত থেকে
ফতোয়ার নামে শারীরিক-মানসিক শাস্তি প্রদান ও সেক্টর কমান্ডার এমএ তাহেরের গোপন বিচারকে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে রায় প্রদানকে গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক অগ্রগতির ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের পদক্ষেপ হিসেবে সংবিধানের স্ববিরোধী পঞ্চদশ সংশোধনী, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি পুনর্বাসন আইন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) সংশোধন আইন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে নারীদের সমঅধিকারের বিষয়ের উল্লেখ ছাড়াই জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা অনুমোদনকে চিহ্নিত করা হয়।
আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বিচারবহির্ভূত হত্যাকা ও নির্যাতন বন্ধে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, যারা এসব ঘটাচ্ছে তাদের বিচারের আওতায় এনেই রাষ্ট্র এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও আগের ধারা বজায় রেখেই শক্তিশালী কিংবা প্রভাবশালীদের বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা সংবলিত লিখিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন আসকের তদন্ত, তথ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক নূর খান। আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থার চেয়ারপারসন ড. হামিদা হোসেন।
No comments