অস্ত্রের রাজনীতিতে কি ফিরে যাচ্ছে ছাত্রদল
রিয়াদুল করিম আবারও অস্ত্রের ঝনঝনানির রাজনীতিতে ফিরে যাচ্ছে ছাত্রদল। অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে সকল শিৰা প্রতিষ্ঠান। এজন্য প্রথমেই বেছে নেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
নিজেদের কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰার পরিবেশ নষ্ট করছে সংগঠনটি। 'উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে' তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু'দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সূত্র জানায়, এবার তারা সফল হলে অন্যান্য শিৰাপ্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের কৌশল বাসত্মবায়ন করবে ছাত্রদল। সংশিস্নষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, সোমবার নিজেদের অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করে ছাত্রদল ক্যাডাররা। আর নিজেদের নীলনকশা বাসত্মবায়নে এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে তারা জিম্মি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজারের বেশি শিৰার্থীকে। নিজেরা প্রকাশ্যে গুলিবিনিময় করে আবার নিজেরাই ধর্মঘট ডাকায় হতবাক হয়েছেন সাধারণ শিৰার্থীরা।সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যনত্ম একদিনের জন্যও অনাকাঙ্ৰিতভাবে বন্ধ হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন ৰমতায় আসার পর একাধিকবার ছাত্রদল নানা ইসু্য সৃষ্টি করে ক্যম্পাস অস্থিতিশীল করার, ধর্মঘট ডাকার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনভাবেই তারা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। এ সরকার ৰমতায় আসার পর তারা একাধিকবার ধর্মঘটের ডাক দিয়ে শেষ পর্যনত্ম স্থগিত করেছিল। কারণ ইসু্য মজবুত ছিল না। সাধারণ শিৰার্থীরাই তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। জাতীয় নির্বাচনের পরদিন থেকেই ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান ছিল। এমনকি প্রশাসন তাদের হলেও তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম তারা হলে ওঠেনি। আবার কোন শক্ত ইসু্যও দাঁড় করাতে পারেনি। প্রশাসন বা ৰমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনের বিরম্নদ্ধে শক্ত কোন ইসু্য না পেয়ে তারা অবলম্বন করে ভিন্ন কৌশল। সোমবার তাদের সে কৌশল বাসত্মবায়ন শুরম্ন করে সংগঠনটি।
নিজেদের বিবাদকে কাজে লাগিয়ে সোমবার প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আধিপত্য বিসত্মারে প্রতিপরে ওপর গুলি বর্ষণ, হাতবোমা নিপে করে ছাত্রদল ক্যাডাররা। গত রবিবার রাত থেকেই ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রম্নপের সদস্যরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেয়। এদিকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া ছাত্রদলের সভাপতি গ্রুপের সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসে গ্রম্নকে। ফলে ভোর থেকেই ছাত্রদল দুই গ্রম্নপের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে প্রথমে সংঘর্ষ হয়। পরে সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু একটি প্রাইভেট কারে এসে নামেন মধুর ক্যান্টিনে। তাঁর পিছনে আরেকটি মাইক্রোবাস থেকে চারজন বহিরাগত সশস্ত্র ক্যাডার তাঁকে প্রটোকল দেয় বলে সূত্র নিশ্চিত করে। এই সশস্ত্র ক্যাডাররা প্রত্যেকেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে আসে।
অপরদিকে ছাত্রদলের বিদ্রোহী গ্রম্নপের সদস্যরাও সশস্ত্র অবস্থায় সূর্যসেন হলের সামনে অবস্থান নেয়। টুকু গ্রম্নপকে প্রতিহত করার জন্য বিদ্রোহীরা প্রকাশ্যে পিসত্মল উঁচিয়ে গুলি করতে থাকে। টুকু গ্রম্নপের সশস্ত্র বহিরাগত ক্যাডাররাও পিসত্মল দিয়ে পাল্টা গুলি করতে থাকে। এ সময় পুরো ক্যাম্পাসই রণেেত্র পরিণত হয়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল নিপে করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে হামলার শিকার হয় টুকু।
নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ছাত্রলীগকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুই দিনের (১৯ ও ২১ জানুযারি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রদলের মূল কমিটি। এর মধ্যে দায়ীদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে লাগাতার ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। তাদের দাবি 'ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করেছে।' এ ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারও এক বিবৃতিতে এ ঘটনার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
অথচ যাদের সঙ্গে সংঘর্ষ সেই ছাত্রদলের পদবঞ্চিত বিদ্রোহী গ্রম্নপের নেতা আহসান উদ্দিন খান শিপন বলেছেন, "টুকু-আলিম উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। কার ইন্ধন বা সাহায্যে নয় সাধারণ শিৰার্থীদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গী, নারী কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত টুকু আলিম ও তাদের বহিরাগত সশস্ত্র ক্যাডারদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছে ছাত্রদলেরই ত্যাগী নেতাকর্মীরা।"
ছাত্রদলের এই 'উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে' ডাকা ধর্মঘটকে মেনে নিতে পারছে না সাধারণ শিৰার্থীরাও। আনত্মর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিৰার্থী আহমেদ নুরে আলম এ বিষয়ে জনকন্ঠকে বলেন, এ ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে ছাত্রদল পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে হাজার হাজার শিৰার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করছে। এ অধিকার তাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাধারণ শিৰার্থী জনকণ্ঠের কাছে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও অনেকটা এমনটিই মনে করছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, পত্রপত্রিকার খবর মারফত জানতে পারি দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রদলে অভ্যনত্মরীণ কোন্দল চলছিল। গত রবিবার রাতে ক্যাম্পাসে কিছুসংখ্যক বহিরাগত অবস্থান নিয়েছে এমন খবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার করা হয়। তিনি বলন, আজকের (সোমবার) অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের অস্ত্র নিয়ে আধিপত্যের লড়াই গত কয়েক বছর ধরে দেখা যায়নি। এমনকি গত বছর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও ছাত্রলীগ কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেনি। অথচ ২০০১ সালে ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জয়ী হলে ছাত্রদল সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসের প্রতিটি হল দখল করে।
এবার মতার বাইরে থেকে ছাত্রদল পুনরায় অস্ত্র দিয়ে আধিপত্য বিসত্মার করার ছাত্র রাজনীতি চালু করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় পিসত্মল দিয়ে নিজেদের অভ্যনত্মরীণ কোন্দলেই গুলি বিনিময় করেছে। ক্যাম্পাসের সাধারণ শিার্থীদের সামনেই অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলি করেছে তারা। কুয়াশা ঢাকা সকালে বোমা ও গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ঘুম ভেঙ্গেছে হলের শিার্থীদের।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, নির্বাচনের পর আমরা ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ছাত্রদলকে সম্পূর্ণ সহাবস্থান দিয়েছে। কিন্তু এই সহাবস্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে ফেলছে। নিজেদের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস বন্ধের পাঁয়তারা সাধারণ ছাত্ররা প্রতিহত করবে।
No comments