ঝকঝকে নতুন বইয়ে শিশুদের প্রথম দিন

শিক্ষা বছরের প্রথম দিনটিতে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয়েছে 'পাঠ্যপুস্তক উৎসব'। এদিন প্রথম থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিনামূল্যের পাঠ্যবই। শিশুরা খালি হাতে হাজির হয়েছিল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে। নানা রঙের বর্ণিল পাঠ্যবইয়ের মোড়কে কোমলমতি শিশুদের সম্মিলিত হাতে স্কুলের মাঠে জেগে উঠেছিল সাত রঙের রংধনু। শিশুদের হৈচৈ আর আনন্দের উচ্ছ্বাসে যেন এক ছন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই আনন্দঘন পাঠ্যপুস্তক


উৎসবে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই হাসিখুশির আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থী, অভিভাবকবৃন্দ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়
ও মাউশির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
গতকাল রোববার বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের মধ্যে বই বিতরণ করে সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, এবতেদায়ি, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণী অনুষ্ঠান ও 'পাঠ্যপুস্তক উৎসব' উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি ওই স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মতিঝিল গভ. বয়েজ স্কুলের ছাত্রদের মাঝে বই বিতরণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজকের মধ্যে সব শিক্ষার্থী বই না পেলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, নববর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উপহার হচ্ছে পাঠ্যবই। মন্ত্রী বলেন, বই বিতরণ কার্যক্রমের ফলে বই নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি, দুশ্চিন্তা সরে গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন রয়েছে পারস্পরিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার মনোভাব। ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার কমে স্থিতি বাড়ছে। নাহিদ বলেন, সরকার শুধু বছরের প্রথম দিনে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছে না, বছরের প্রথম দিন থেকে ক্লাসও শুরু করেছে। নাহিদ বলেন, এত বিশালসংখ্যক বই ছাপানো, পরিবহন করে বছরের প্রথম দিনে তা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও ইতিমধ্যে তা রুটিন কর্মসূচির রূপ নিয়েছে। যথাসময়ে বই ছাপিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেঁৗছে দেওয়ার সফলতার জন্য এনসিটিবি, মাধমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, সংশিল্গষ্ট প্রেসসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। মন্ত্রী আগামী বছর আরও উন্নত মানের বই প্রদানের আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, তিন কোটি ১২ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৯ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য ৩১৬টি বিষয়ের মোট ২২ কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৩টি বই নববর্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকারের উপহার। দু্টি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীরা নেচে-গেয়ে, আনন্দ-উল্লাস করে, পল্গ্যাকার্ড-ফেস্টুন নেড়ে, বেলুন উড়িয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। মন্ত্রীর হাত থেকে নতুন বই পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী নতুন বই উঁচু করে নাড়াতে থাকে।
এ সময় শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা কামালউদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫ শিক্ষার্থীর হাতে ২০১২ সালের নতুন পাঠ্যবই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
২০১২ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব পাঠ্যপুস্তক ৪ রঙের ৮০ গ্রামেজ কাগজে মুদ্রণ এবং ২৩০ গ্রামেজ আর্ট কার্ডে কভার মুদ্রণ করে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংযোজন করা হয়েছে। বাংলা বানানের সমতা বিধানের জন্য সব পাঠ্যপুস্তকে বাংলা একাডেমীর বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা, সামাজিক বিজ্ঞানের পরিবর্তে 'বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য এ বছরই প্রথম 'তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি' বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করা হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সব পাঠ্যপুস্তকের মলাট ৪ রঙের করা হয়েছে।
৮২ হাজার স্কুলে নতুন বই : এদিকে দেশের শহর-গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন শিক্ষাবর্ষ ২০১২ সালের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পেঁৗছে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন। দেশব্যাপী পাঠ্যপুস্তক উৎসব ও বিনামূল্যের বই বিতরণ উপলক্ষে গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আফছারুল আমীন বলেন, সারাদেশের প্রায় ৮২ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা কামালউদ্দিন বলেন, এবার প্রতি বইয়ের মুদ্রণ খরচ পড়েছে ২৪ টাকা ৩৭ পয়সা। গত বছর প্রতি বইয়ের মুদ্রণ খরচ ছিল ২৩ টাকা ৮৬ পয়সা। মুদ্রণের মান ও কাগজ ভালো হওয়ায় এবার বইয়ের মূল্য একটু বেশি পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোতাহার হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক গতকাল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.