গণপরিবহনে নৈরাজ্য-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়?

রকার ২০১১ সালে চতুর্থবারের মতো জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। যতবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, ততবারই অনিয়ন্ত্রিত ও অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া। সরকারি কোনো সংস্থাই অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবারও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর একই অবস্থা দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিকভাবে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়। শনিবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে
গণপরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ কমিটির বৈঠক বসে। তাতে দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাসভাড়া নির্ধারিত হবে আগামী সপ্তাহে। কিন্তু তার আগে শুক্রবার থেকেই দেখা যায়, বাস-মিনিবাসে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমনকি যেসব পরিবহন জ্বালানি তেলে নয়, গ্যাস বা সিএনজিতে চলে, সেগুলোতেও বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হয়। অন্যদিকে সিএনজিরও 'দাম সমন্বয়' তথা দাম বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে। আর তারপর শুরু হবে আরেক দফা যাত্রী হয়রানি।
সরকার ভালো করেই জানে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সুযোগসন্ধানী চক্র সব সময়ই অজুহাত খুঁজতে থাকে এবং কোনো না কোনো অজুহাতে দাম বাড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষের পকেট কাটে। কি গণপরিবহন, কি বাজার_সর্বত্রই এ কথা সত্য। আমাদের প্রশ্ন, জ্বালানি তেলে ভর্তুকিই যদি সরকারের প্রধান সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চারবারে দাম না বাড়িয়ে সরকার একবারেই পুরো দামটা কেন বাড়িয়ে দিল না? একবারে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় পরিবহন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে একবারেই একটি যৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে পারত। তা না করে চার দফায় মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাত্রীদের চার-চারবার চরম দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অন্যদিকে গণপরিবহনের অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে সরকার কার্যত কিছুই করেনি। এই অনাকাঙ্ক্ষিত জনদুর্ভোগের দায়দায়িত্ব কি সরকার তথা ক্ষমতাসীনদেরই নিতে হবে না?
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গত শুক্রবারও বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম একবারে না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। তাঁর কথায় মনে হচ্ছে, এখানেই শেষ নয়, সামনে আরো দাম বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পর্যায়ক্রমে চলতেই থাকবে। গত মে মাসে সিএনজির দাম ছিল ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা, এখন ৩০ টাকা। অচিরেই বেড়ে কত দাঁড়াবে, তা এখনো আমরা জানি না। এই আট মাসে ফারনেস অয়েলের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ১৮ টাকা; ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন প্রতি লিটারে ১৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজার স্বাভাবিক থাকলেও বাংলাদেশে জ্বালানির দাম বাড়ছেই।
এভাবে আর জ্বালানির দাম বাড়িয়ে, গণপরিবহনে নৈরাজ্য তৈরি করে, দ্রব্যমূল্যের বোঝা বাড়িয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তকে নিঃশেষ করে দেবেন না_এটাই সরকারের কাছে আমাদের এই মুহূর্তের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.