নিজ প্রতিষ্ঠানের বিমা নিজের কোম্পানিতে করা যাবে না
সাধারণ বিমা কোম্পানির পরিচালকেরা তাঁদের মালিকানাধীন অন্য কোম্পানির বিমা নিজ কোম্পানিতে করতে পারবেন না। অর্থা ৎ একটি বিমা কোম্পানির পরিচালক তাঁর মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানের বিমা নিজ বিমা কোম্পানিতে করতে পারবেন না।
এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানির জন্য গতকাল রোববার একটি পরিপত্র জারি করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। পরিপত্রটি কার্যকর হবে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।
বিমাশিল্পকে সুসংগঠিত করতে আইডিআরএর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবং বিমা গ্রাহক (পলিসিহোল্ডার), শেয়ারহোল্ডার, বিমাশিল্প তথা জনস্বার্থে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, সাধারণ বিমা কোম্পানির পরিচালক, পরিচালকের স্ত্রী বা স্বামী, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন এবং নির্ভরশীল অন্য কোনো ব্যক্তির নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের বিমা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ—কোনোভাবেই নিজের বিমা কোম্পানিতে করা যাবে না।
তবে অগ্নি ও নৌবিমার ক্ষেত্রে যেসব বিমা পলিসি এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হবে, সেগুলো নবায়ন ও মেয়াদপূর্তির আগ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘আইডিআরএ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, বিমাশিল্পে শৃঙ্খলা ও সমতা ফিরে আসবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এতে আগামী দিনে কোম্পানিগুলোর আর্থিক ও দাবি পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়বে।’
তবে আইডিআরএর পরিপত্রটি তেমন কোনো কাজে আসবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি কোনো পদ্ধতির মধ্যেই পড়ে না। কোথাও শুনিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের বিমা নিজের কোম্পানিতে করা যাবে না। আইডিআরএর এ জাতীয় সিদ্ধান্তটি নেওয়া উচিত ছিল বরং বিমা খাতের নেতিবাচক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করার পর।’
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আইডিআরএ দেখেছে যে, নিজের কোম্পানিতে বিমা করলে অনেকেই টাকা-পয়সা দেয় না। কিন্তু এর জন্য এ সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বরং তারা যাতে টাকা-পয়সা দেয়, সেই পদক্ষেপ নিক।’ তিনি বলেন, ‘মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা করা। যারা বিমা করে, দেখতে হবে যে তারা পয়সা দেয় কি না। এমন পরিপত্র জারি না করেও সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।’
সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশের প্রায় সব সাধারণ বিমা কোম্পানির পরিচালকদেরই আরও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতেও মালিকানা রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বিমা করতে হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁরা তা করছেন নিজের মালিকানাধীন বিমা কোম্পানিতে। এতে অনেক জটিলতাও তৈরি হচ্ছে। অর্থা ৎ কমে যাচ্ছে গোটা শিল্পেরই প্রিমিয়াম আয়।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, ৪৩ সাধারণ বিমা কোম্পানির বর্তমান প্রিমিয়াম আয় দেড় হাজার কোটি টাকা। অথচ নিয়মকানুন মেনে চললে এ আয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কৌশলগত ব্যবসা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বিমা গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষা এবং কোম্পানিতে সুশাসন ও জবাবদিহি বজায় রাখার দায়দায়িত্বও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তায়। কিন্তু বিমা কোম্পানিতে জবাবদিহি বজায় রাখা ও সুশাসন আনার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন ওই পরিচালকেরাই।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর হস্তক্ষেপের ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে যেমন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, বিমা খাতেও অনুরূপ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আইডিআরএ। জারি করা পরিপত্রটি সেই উদ্যোগেরই অংশ।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের একজন সাবেক সাংসদের মালিকানাধীন একটি সাধারণ বিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর গত ২৩ বছরে মাত্র পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় দেখিয়েছে। অথচ সঠিকভাবে নিয়মনীতি মেনে হিসাব করলে এই কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। প্রায় সব সাধারণ বিমা কোম্পানিই এমন অবস্থা তৈরি করে রেখেছে।
যোগাযোগ করলে আইডিআরএর শীর্ষপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, কোম্পানির পরিচালক বা উদ্যোক্তারা যখন নিজেদের মালিকানাধীন অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিমা করার জন্য নিজেদের বিমা কোম্পানিকেই বেছে নেন, তখনই শুরু হয় জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে শুধু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নয়, পরিচালনা পর্ষদও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। কোম্পানিতে তখন অনিবার্য কারণেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল তৈরি হয় এবং এই মহল পর্ষদকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখে।
আইডিআরএর কর্মকর্তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ প্রতিবেদককে বলেন, এই মহলটি নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোপন এজেন্ডাগুলো আইনের মধ্যে থেকেই খুব সহজেই পাস করিয়ে নেয়।
আইডিআরএর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এমডি সুজাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পরিপত্রটি এখনো হাতে পাইনি। তবে এ রকম কিছু জারি হয়ে থাকলে আমরা স্বাগত জানাই।’
এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের ৪৩টি সাধারণ বিমা কোম্পানির জন্য গতকাল রোববার একটি পরিপত্র জারি করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। পরিপত্রটি কার্যকর হবে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।
বিমাশিল্পকে সুসংগঠিত করতে আইডিআরএর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবং বিমা গ্রাহক (পলিসিহোল্ডার), শেয়ারহোল্ডার, বিমাশিল্প তথা জনস্বার্থে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, সাধারণ বিমা কোম্পানির পরিচালক, পরিচালকের স্ত্রী বা স্বামী, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন এবং নির্ভরশীল অন্য কোনো ব্যক্তির নামে থাকা প্রতিষ্ঠানের বিমা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ—কোনোভাবেই নিজের বিমা কোম্পানিতে করা যাবে না।
তবে অগ্নি ও নৌবিমার ক্ষেত্রে যেসব বিমা পলিসি এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হবে, সেগুলো নবায়ন ও মেয়াদপূর্তির আগ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘আইডিআরএ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, বিমাশিল্পে শৃঙ্খলা ও সমতা ফিরে আসবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এতে আগামী দিনে কোম্পানিগুলোর আর্থিক ও দাবি পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়বে।’
তবে আইডিআরএর পরিপত্রটি তেমন কোনো কাজে আসবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন নিটল ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি কোনো পদ্ধতির মধ্যেই পড়ে না। কোথাও শুনিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের বিমা নিজের কোম্পানিতে করা যাবে না। আইডিআরএর এ জাতীয় সিদ্ধান্তটি নেওয়া উচিত ছিল বরং বিমা খাতের নেতিবাচক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করার পর।’
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আইডিআরএ দেখেছে যে, নিজের কোম্পানিতে বিমা করলে অনেকেই টাকা-পয়সা দেয় না। কিন্তু এর জন্য এ সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বরং তারা যাতে টাকা-পয়সা দেয়, সেই পদক্ষেপ নিক।’ তিনি বলেন, ‘মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা করা। যারা বিমা করে, দেখতে হবে যে তারা পয়সা দেয় কি না। এমন পরিপত্র জারি না করেও সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।’
সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশের প্রায় সব সাধারণ বিমা কোম্পানির পরিচালকদেরই আরও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতেও মালিকানা রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বিমা করতে হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁরা তা করছেন নিজের মালিকানাধীন বিমা কোম্পানিতে। এতে অনেক জটিলতাও তৈরি হচ্ছে। অর্থা ৎ কমে যাচ্ছে গোটা শিল্পেরই প্রিমিয়াম আয়।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, ৪৩ সাধারণ বিমা কোম্পানির বর্তমান প্রিমিয়াম আয় দেড় হাজার কোটি টাকা। অথচ নিয়মকানুন মেনে চললে এ আয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কৌশলগত ব্যবসা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বিমা গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষা এবং কোম্পানিতে সুশাসন ও জবাবদিহি বজায় রাখার দায়দায়িত্বও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তায়। কিন্তু বিমা কোম্পানিতে জবাবদিহি বজায় রাখা ও সুশাসন আনার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন ওই পরিচালকেরাই।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর হস্তক্ষেপের ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে যেমন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, বিমা খাতেও অনুরূপ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আইডিআরএ। জারি করা পরিপত্রটি সেই উদ্যোগেরই অংশ।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের একজন সাবেক সাংসদের মালিকানাধীন একটি সাধারণ বিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর গত ২৩ বছরে মাত্র পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় দেখিয়েছে। অথচ সঠিকভাবে নিয়মনীতি মেনে হিসাব করলে এই কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। প্রায় সব সাধারণ বিমা কোম্পানিই এমন অবস্থা তৈরি করে রেখেছে।
যোগাযোগ করলে আইডিআরএর শীর্ষপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, কোম্পানির পরিচালক বা উদ্যোক্তারা যখন নিজেদের মালিকানাধীন অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিমা করার জন্য নিজেদের বিমা কোম্পানিকেই বেছে নেন, তখনই শুরু হয় জটিলতা। এমন পরিস্থিতিতে শুধু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নয়, পরিচালনা পর্ষদও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। কোম্পানিতে তখন অনিবার্য কারণেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল তৈরি হয় এবং এই মহল পর্ষদকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখে।
আইডিআরএর কর্মকর্তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ প্রতিবেদককে বলেন, এই মহলটি নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোপন এজেন্ডাগুলো আইনের মধ্যে থেকেই খুব সহজেই পাস করিয়ে নেয়।
আইডিআরএর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এমডি সুজাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পরিপত্রটি এখনো হাতে পাইনি। তবে এ রকম কিছু জারি হয়ে থাকলে আমরা স্বাগত জানাই।’
No comments