অভিনন্দন মাননীয় গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী by বাহাউদ্দিন চৌধুরী
প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই মাননীয় গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানকে। তাঁর সৎ সাহস ও দৃঢ়তার জন্য জানাই শ্রদ্ধা। তিনি অত্যনত্ম প্রভাবশালী ধনী আবাসন শিল্প মালিকদের কয়েকজনকে ভূমিদসু্য উলেস্নখ করে বলেন, ভূমিদসু্য উপাধি নিয়ে আপনারা ঘুমান কি করে?
একজন 'ভূমিদসু্য'কে মন্ত্রী বললেন, আপনার বিরম্নদ্ধে রাজস্ব ফাঁকিসহ ৭১টি অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগের প্রমাণও রয়েছে আমার কাছে। স্বপ্নের ঠিকানা আর বেহেশতে নিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করেন; আপনারা ঘুমান কীভাবে? অন্যের জমি নিজের নামে বিক্রি করেন, লজ্জা করে না?প্রভাবশালী আবাসন ব্যবসায়ীদের সভায় এমন কঠোর ভাষায় তাদের হুঁশিয়ার করে দেয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। ভূমিদসু্য নামে খ্যাত একজন ধমকের সুরে বলেছেন, তার ছেলে সেদিন সকালেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সব অপকর্ম সমর্থন করবেন? তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে আছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিনতে পারেন নাই। তাঁর এই দম্ভের কারণ আছে। তিনি নাকি সেনাপ্রধানের সমর্থন ক্রয় করেছেন। উচ্চ মহলের অনেকের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। দেশের আইন সবার েেত্রই প্রযোজ্য। তাঁকে ও তাঁর মতো অন্য ধনী প্রভাবশালীদের আইন মেনেই চলতে হবে। মাননীয় গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী তাঁদের সেই কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি অবশ্য আবাসন শিল্পের সবাইকে দুবর্ৃত্ত বা ভূমিদসু্য বলেন নাই। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান বলেছেন, দুয়েকজন দুবর্ৃত্তের কারণে গোটা আবাসন শিল্পের ভাবমূর্তি ুণ্ন হতে পারে না। আবাসনশিল্পে কোন অননুমোদিত কাজ যাতে না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে তিনি মন্ত্রণালয় ও রাজউকের সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বুধবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনক েনগর উন্নয়ন কমিটির সভায় প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, 'আমরা যে সমাজে বাস করি, সে সমাজের মতামতের ওপর আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে। জনগণের হিতকর কাজ করাই আমাদের প্রধান ল্য। কেউ ভয় দেখিয়ে এবং অন্যায়ভাবে কিছু করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মান্নান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভার শুরম্নতে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন আবাসন শিল্পের উন্নয়ন ও এ খাতে স্বচ্ছতা আনতে সাহসী ভূমিকার জন্য প্রতিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তাঁর এ ধন্যবাদ প্রসত্মাবকে সমর্থন করেন রিহ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী তানভিরম্নল হক। সৎ সাহস দেখিয়ে ভূমিদসু্যদের সতর্ক করার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। কক্সবাজার প্রেসকাবের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলন।
মন্ত্রী বলেন, 'আপনারা জানেন, ১০ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান প্রভাবশালী ভূমিদসু্যদের বিরম্নদ্ধে কী সাহসিকতা দেখিয়েছেন। তিনি (প্রতিমন্ত্রী) ভূমিদসু্যদের উদ্দেশ করে জানতে চান, ভূমিদসু্য অপবাদ নিয়ে ঘুমান কী করে! এই সৎ সাহস দেখানোর জন্য আমি প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানকে এই সভা থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। মাথানত করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর মতো মন্ত্রী দেশে থাকলে জনগণের কল্যাণ হবে। আপনারা (সাংবাদিকেরা) এই বার্তাটা পত্রিকায় দিয়ে দেশের জনগণকে জানিয়ে দেবেন।'
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, 'ভূমিদসু্যদের বিরম্নদ্ধে সৎ সাহস দেখানোর এই খবরটি পরের দিন বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা গুরম্নত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। তারা বুঝতে পেরেছে, প্রতিমন্ত্রী মান্নান ভাল কাজটি করেছেন। আবার কিছু পত্রিকা খবরটি বেমালুম হজম করে ফেলেছে। আবার কিছু পত্রিকা ভূমিদসু্যদের প নিয়ে উল্টো প্রতিমন্ত্রী মান্নানের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ ছেপেছে। এখান থেকেই সাংবাদিকদের নীতিনৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।'
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ইদানীং কতিপয় কালো টাকার মালিক, ভূমিদসু্য সংবাদপত্রের মালিক সেজে ফায়দা লুটছেন। এই সরকারের মন্ত্রীরা কোন কালো টাকার মালিক, ভূমিদসু্যকে পরোয়া করেন না। ভয় করেন না। কোন সুবিধা আদায়ের চিনত্মাও করেন না।
রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ও বেসরকারী বাংলাদেশ ভূমি উন্নয়ন সংস্থা (বিএলডিএ) থেকে ভূমিদসু্যদের বের করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। গত রোববার এ দুটি সংস্থার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার সময় মন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, আবাসন একটি শিল্প। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা হবেন শিল্পী। কিনত্মু তাঁদের অনেকে শিল্পী না হয়ে হচ্ছেন ভূমিদসু্য। একপর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমিদসু্য উপাধি নিয়ে আপনারা ঘুমান কী করে?
সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাক েএ আলোচনায় রিহ্যাবের সভাপতি তানভিরম্নল হক এবং বিএলডিএর সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রম্নপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন, ছিলেন গণমাধ্যমের কমর্ীরাও।
প্রতিনিধি দলের নেতারা বলেন, সরকারী-বেসরকারী উদ্যোক্তারা সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করলে ঢাকার চিত্র বদলে দেয়া যায়। তাঁরা বিদ্যমান সব আইন যুগোপযোগী করে একটি জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা করা, ২০০৪ সালের বেসরকারী ভূমি উন্নয়ন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার আগে যেসব প্রকল্প বাসত্মবায়নাধীন ছিল, সেগুলোর অনুমোদন দেয়া এবং বেসরকারী ভূমি উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৪ সংশোধনের অনুরোধ জানান। উৎসে কর পুনর্নির্ধারণ ও ফ্যাটের বাজারমূল্য পুনর্নির্ধারণেরও দাবি জানায় সংগঠন দুটি।
রিহ্যাবের সভাপতি তানভিরম্নল হক সভায় জানান, তাঁদের সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ৬২৬ এবং বিএলডিএর সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে অনুমোদনের জন্য ১৩ থেকে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। ফাইল পড়ে থাকে মাসের পর মাস।' এর তদারকির জন্য একটি সেল করার পরামর্শ দেন তিনি।
বিএলডিএর সভাপতি শাহ আলম বলেন, 'গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি ফেল করে থাকে, তার একমাত্র কারণ ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা। একপর্যায়ে আমি বিদেশে ছিলাম, আমিও বলেছি, সব বন্ধ করে দাও। ...এ সরকার নিশ্চয়ই অনুধাবন করে, ব্যবসায়ী ও সরকারকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।'
প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশে শাহ আলম বলেন, ... এই মন্ত্রণালয়ের সবকিছু সঠিক অবস্থানে আনার জন্য আপনারা যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। আমি বলব, রিহ্যাব ও বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন জাতীয় উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। আমেরিকায় যে অর্থনৈতিক মন্দা, সারা দুনিয়ায় যার প্রভাব পড়েছে, তার মূল কারণ হাউজিং ফল করেছে।'
নিজের প্রকল্পের উদ্ধৃতি নিয়ে শাহ আলম বলেন, 'আমার নিজের প্রকল্পে একজন লোক ছয় লাখ টাকা দিয়ে একটা পস্নট কিনেছেন। এখন তিনি সেটা ছয় কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু বিক্রি করার পর তিনি রাজউকে গিয়ে পস্ন্যান পাস করতে পারছেন না।' তিনি বলেন, 'আমাদের মন্ত্রণালয় ও রাজউক_তাদের যদি উদ্দেশ্য (ইনটেনশন) ভালো থাকে, তাহলে যা সমস্যা আছে তা মন্ত্রণালয়ের একদিনের কাজ।'
প্রতিমন্ত্রী তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন। তিনি পাঁচ দিনের রিহ্যাব আবাসন মেলায় দর্শক ও ক্রেতাদের ভিড় এটাই প্রমাণ করে যে শিল্পের এ খাতটি যথেষ্ট তেজি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় যখন আবাসন শিল্প সঙ্কটে, তখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে_ এটা নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। সুতরাং আবাসন শিল্পের বিকাশের জন্য বিদ্যমান সুবিধাগুলো বাড়ানো ও সমস্যাগুলো দূর করার দিকে নজর দিতে হবে। রোববার সচিবালয়ে আবাসন নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের দুটি সমিতির সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচিত হয়। প্রতিমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়ার পাশাপাশি একটি গুরম্নতর অভিযোগ তুলে প্রশ্ন করেন, 'ভূমিদসু্য উপাধি নিয়ে আপনারা ঘুমান কী করে?'
বিষয়টি বহুল আলোচিত। ঢাকা ও পাশর্্ববতর্ী অঞ্চলে গত ৩০ বছরে আবাসন শিল্পের আকাশচুম্বী উত্থান যেমন অর্থনীতির একটি শক্তির দিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, তেমনি এ শিল্পে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এর বিকাশের পথে নৈতিক ও আইনগত বাধা সৃষ্টি করেছে। অনেক েেত্র দেখা গেছে, আবাসন প্রকল্পের নামে সামান্য একখ- জমি ক্রয় করে এরপর তার চারপাশের জমি একতরফাভাবে দখল করে নিয়ে প্রকল্পভুক্ত জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ওই সব জমির মালিক ন্যায্য দর পান না, এমনকি পানির দরে জমি বিক্রি না করলে জবরদখল করে নেয়ার অভিযোগও কম নয়। এসব কারণে আবাসন শিল্পের অনেক প্রতিষ্ঠান 'ভূমিদসু্য' আখ্যা লাভ করে। শহরতলির সাধারণ গ্রামবাসী এসব ভূমিদসু্যর অসহায় শিকারে পরিণত হয়। কেরানীগঞ্জের উদাহরণ টানা যায়। এ ধরনের ভূমি দখলকারীদের বিরম্নদ্ধে নিয়মিত বিােভ হচ্ছে, থানায় একের পর এক জিডি হচ্ছে। আমরা দেখছি, প্রভাবশালী এ দখলদার চক্রের বিরম্নদ্ধে সাধারণ গ্রামবাসীর এ ধরনের উদ্যোগ কাজে আসছে না। অনেক সময় জলাভূমিতে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে প্রকল্পের জমি হিসেবে দেখানো হয়। অনেকে ফ্যাট কেনার পর তা বুঝে পান না, টাকাও ফেরত পান না। অনেকে প্রকল্পের লোভনীয় বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে পস্নট কিনে দেখেন, সেখানে রাজউক ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় না। এগুলো তো স্রেফ প্রতারণা।
প্রতিমন্ত্রী তাদের এ ভূমিদসু্যতার অপবাদমুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েই যদি ানত্ম হন, তাহলে সেটা অভিহিত 'দসু্য'দের জন্য শাপে বর হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং এ ধরনের দসু্যবৃত্তি বন্ধে মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এটা ঠিক যে আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে ১৩ থেকে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। আর টেবিলে টেবিলে ফাইল গতিশীল রাখার জন্য দরকার লেনদেন, যা 'স্পিডমানি' বা সোজা কথা ঘুষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এ ঘুষের রাজত্ব রাজউক পর্যনত্ম বিসত্মৃত। গত শনিবার রিহ্যাবের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম নিজেই রাজউকের টেবিলে টেবিলে ঘুষের কথা বলে এ ব্যাধির সর্বজনীন ব্যাপ্তির করম্নণ চিত্রটি ফাঁস করে দিয়েছেন। পরদিন রাজউক চেয়ারম্যান একাধারে ঘুষগ্রহীতা ও ঘুষদাতার বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলায় আশ্বসত্ম হওয়া চলে যে অনত্মত টনক নড়েছে।
দুনর্ীতি, প্রতারণা বা দসু্যবৃত্তির ওপর নির্ভর করে কোন শিল্পের সুস্থ বিকাশ সম্ভব নয়। আবাসন শিল্পের সব পর্যায়ে নিয়মকানুনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। প্রতিটি আবাসন প্রকল্পে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ, জলাশয় প্রভৃতি রাখার যেসব শর্ত সম্প্রতি দেয়া হয়েছে, তা যেন ব্যতিক্রমহীনভাবে পালিত হয়, সেটা মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। এসব আইন মেনে চললেও আবাসন শিল্পে যথেষ্ট মুনাফা থাকবে। মালিকদের শুধু অতি মুনাফার লোভ সংবরণ করাই এ েেত্র যথেষ্ট।
মাননীয় গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী নানা দিক থেকেই ব্যতিক্রমী। তিনি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তাতে স্রোতের মতো টাকা আসে। কিন্তু অদ্যাবধি তাঁর বিরম্নদ্ধে কোন অভিযোগ শোনা যায় নাই। তাঁর দৃঢ়তা ও সৎ সাহস সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। এই রকম একজন সৎ, দ ও দৃঢ়চেতা প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কৃত করা উচিত। তাহলে অন্যরাও তার উদাহরণ অনুসরণ করতে উৎসাহিত হবেন। আমি বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে তাঁর কাছ থেকে শিা নিতে অনুরোধ করব। আমলাদের শেখানো বুলি আউরে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কোন ক্রসফায়ার হচ্ছে না। কথাটা ঠিক না। এই ক্রসফায়ার এই সরকারের একটি বড় কলঙ্ক। তেমনি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী হয়ে আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ তিনি ব্যবসায়ীদের তোয়াজ করে চলেছেন, তাদের ধমক দিতে পারছেন না, কঠোর কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছেন না। তিনি ব্যবসায়ীদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে টিসিবিকে সক্রিয় করছেন না। টিসিবি'র মারফত প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করলে অবশ্যই দ্রব্যমূল্য অনেকটাই কমে যাবে। মানুষ নানারকম কথা বলছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
এই সরকারের এক বছর অতিক্রানত্ম হয়েছে। অনেকেই এই এক বছরের মূল্যায়ন করছেন। একচু হরিণের মতো একমাত্র বিএনপি-জামায়াত জোট ছাড়া কেউই এই সরকারকে সম্পূর্ণ অসফল বলে নাই। তাদের শতভাগ সাফল্যের কথা না বললেও তাদের ব্যর্থতার কথা কেউ বলে নাই।
আমার ধারণা, এ সরকারের কাজকর্মের মূল্যায়নের একেবারে প্রথমেই চলে আসবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নৃশংস হত্যাকা-ের বিচারকাজটি শেষ করা। আমরা গস্নানিমুক্ত হয়েছি, শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর কাছে আমাদের গর্ব করে বলার সুযোগ হয়েছে যে, একটি অত্যনত্ম বড় অন্যায়কে হাজার প্রতিকূলতা ঠেলে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছি। এখন ১৫ আগস্টের অন্যান্য হত্যাকা- আর জেলহত্যার বিচার শেষ করতে পারলেই এই কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি টানা যায়।
বিচারের কথা দিয়ে যেহেতু শুরম্ন হয়েছে, তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথাটাও এই বেলা বলা যায়। কাজ চলছে_ এ রকম আশ্বাসবাণী সব সময়ই শুনছি, কিন্তু যদি দেখতাম ট্রাইবু্যনালটি গঠন করা হয়েছে, তদনত্ম কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাহলে আরও বেশি জোর পেতাম। আশা করে আছি, যে ভবনে এই বিচারকাজ শেষ হবে, সেটি এ দেশের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে পরিচিত হবে; আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সেটি দেখতে আসবে, সেটি প্রায় একটি জাদুঘরে পরিণত হবে। তাই সে রকম মর্যাদাসম্পন্ন একটি ভবন বিচারের জন্য বেছে নিলে আরও ভাল হতো।
লেখক : ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সাবেক সচিব
No comments