গুণের আধার রসুন

কথায় বলে, অসংখ্য যার গুণ তার নাম রসুন! রসুন সত্যিই বহুবিধ ঔষধি গুণের আধার। পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক ঐরঢ়ঢ়ড়পৎধঃবং লিখেছেন, "আমাদের বনৌষধির মধ্যে রোগ প্রতিকারে রসুনের স্থানই প্রথম।
রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম_ অষষরঁস ঝধঃরাধস. যে ছয়টি ভিন্ন স্বাদের রস রয়েছে, তার মধ্যে রসুনের আছে পাঁচটি। তাই এর নাম হয়েছে_ রস+ঊন (কম)= রসুন। এগুলো হচ্ছে_ পাতায় তিক্ত রস, কন্দে রয়েছে কটু রস, পুষ্পনালে অর্থাৎ কলিতে কষায়, তার আগায় লবণ আর বীজে রয়েছে মধুর রস। যেটি শুধু নেই সেটি হচ্ছে অমস্ন রস। তাই দুধে রসুন দিলে দুধ কাটে না। আহার্য ও ঔষধি হিসেবে রসুনের কন্দ থেকে বীজ পর্যনত্ম সব অংশই ব্যবহার করা হয় ও এর প্রতিটি অংশই পৃথক পৃথক গুণের অধিকারী। এছাড়াও রসুনে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি ও ডি। এটি মেধা, স্মৃতি, বল, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি ও ত্বকের বিবর্ণতায় উপকারী ও আয়ুবর্ধক।
রসুনকে বলা হয় প্রাকৃতিক এ্যান্টিবায়োটিক। এটি একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক। রাশিয়ার চিকিৎসকগণ রসুনকে জীবাণুনাশক হিসেবে পেনিসিলিনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রসুনের মধ্যে যে জৈব সালফাইড রয়েছে তার ফলে এটি সর্বপ্রকার জীবাণু নাশ করার ৰমতা রাখে। একটি রসুন থেঁতো করে ঘরে রেখে দিলে, ঘর জীবাণু মুক্ত থাকে। একটি সমীৰায় দেখা গেছে, রসুনে বি-কোলাই ও টাইফয়েডের জীবাণু নাশ করার শক্তি আছে। এটি আমাশয়, টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড রোগ নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। আমাশয় হলে সকাল-বিকাল এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এটি একটি উত্তম কৃমিনাশকও বটে।
রসুন টিউমার ও ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ ৰেত্রে রসুনে নিহিত ডাই-এ্যালাইল সালফাইড সক্রিয় ভূমিকা রাখে। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে, রক্ত পরিষ্কার ও ন তুন রক্ত কণিকা তৈরি করতে এটি সক্রিয় ভূমিকা রাখে। হৃৎপি- ও রক্তনালীতে জমে যাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার। তাই এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। রসুনে নিহিত 'এলিসিন' নামক পদার্থটি রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তের শর্করা কমায়, ছত্রাক ও জীবাণু ধ্বংস করে ও রোগ প্রতিরোধ ৰমতা বাড়ায়। এছাড়াও এটি মানসিক চাপ কমায় ও স্নায়ু সমস্যা দূর করে।
রসুনে রয়েছে প্রয়োজনীয় তেল যা পেটের বায়ুনাশক হিসেবে কাজ করে ও হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। চরক ও সুশ্রম্নত সংহিতায় উলেস্নখ আছে, কাঁচা আমলকির ২/১ চা চামচ রসের সাথে ১/২ কোয়া রসুন বাটা খেলে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটি খাওয়ার পর গরম পানি খাওয়া উত্তম। রসুনের রস নারকেল, সরিষা বা তিল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় দিলে চুল পাকা বন্ধ হয় ও রসুন বেটে মাথায় নিয়মিত প্রলেপ দিলে টাকপড়া বন্ধ হয়। রসুন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে। এ ৰেত্রে সবচেয়ে সক্রিয় উপাদানটি হচ্ছে এজোনাইন। রসুন ডায়াবেটিস রোগের একটি কার্যকরী ওষুধ। এছাড়াও এটি উদ্দীপক, মূত্রবর্ধক, বায়ুনাশক, কাশি বহিষ্কারক ও তলপেটের ব্যথায় অত্যনত্ম ফলপ্রসূ। রসুনের এত গুণ থাকা সত্ত্বেও এর তীব্র গন্ধের জন্য অনেকে এটি খেতে চান না।
এ ৰেত্রে রসুনের উপরের খোসা ছাড়িয়ে, আধখানা করে কেটে আগের দিন রাতে টক দইয়ে ভিজিয়ে রেখে পরদিন খেলে গন্ধ থাকে না। রসুনের যে এত গুণ, তাই একে একটি প্রসিদ্ধ রসায়নও বলা চলে। আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকেই রসুন খাওয়া ও এটিকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করার প্রচলন আছে। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ও প্রতিরোধে রসুন অত্যনত্ম উপকারী। এর এত গুণ আছে বলেই প্রাচীন আচার্যরা রসুনকে অমৃতের সমান বলেছেন। রসুন সম্পর্কে অথর্ব বেদ, সংহিতা ও প্রাচীন বিভিন্ন কাহিনীতে উলেস্নখ আছে। আমাদের দেশের মতো গ্রীস ও আরব দেশেও প্রাচীনকাল থেকেই রসুন খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

(সূত্র-বই-পুসত্মক/পত্র-পত্রিকা)
কারিশমা কাস্তুরী
(গ. ঢ়যধৎস. উ. ট.)

No comments

Powered by Blogger.