সংকুচিত হচ্ছে খুলনার বিএসসি কার্যালয় by শেখ আবু হাসান

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মংলা বন্দরকেন্দ্রিক খুলনা কার্যালয়ের কার্যক্রম সংকুচিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে করপোরেশনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, কার্যালয়টি বন্ধ করতেই কর্তৃপক্ষ নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে খুলনা কার্যালয়ে দু-একজন কর্মচারী রেখে বাকিদের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে বদলির সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি ছয়জনকে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের ৩ জানুয়ারির মধ্যে সেখানে যোগ


দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব উদ্যোগকে বিএসসির খুলনা কার্যালয় বন্ধ করার আলামত বলে মনে করছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।
তবে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মোকসুমুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনা কার্যালয়কে একেবারে গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে না। লোকসান কমাতে কিছুটা সংকুচিত করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, মংলা বন্দরে যে কাজ তাতে এত কর্মীর প্রয়োজন নেই। তাই কীভাবে লোকসান কমিয়ে লাভ হবে সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
১৯৬৩ সালে তৎকালীন ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের অধীনে মংলা বন্দরকেন্দ্রিক এই কার্যালয় খোলা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে তা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। তখন এ কার্যালয়ে ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও এখন কর্মীর সংখ্যা মাত্র ১৩।
খুলনা কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, খুলনা ও মংলা বন্দরে বেসরকারি জাহাজ কোম্পানিগুলোর কার্যালয় রয়েছে। সরকারও বিএসসির জাহাজ বহর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে ৩৫০ কোটি টাকার শেয়ারও বিক্রি করেছে বিএসসি। অথচ বিএসসি কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত না করে মংলা বন্দরের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খুলনা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিএসসির চার সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের তিনজনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা মংলা বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে বিএসসিকে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভরশীল করে রাখতে আগ্রহী। সম্প্রতি মংলা বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ করতে জাহাজ চাইলে বিএসসি কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০ দিনের মধ্যে ১০ হাজার টন পণ্য জাহাজে বোঝাই করে বন্দর ছাড়ানোর নিশ্চয়তা দিলেই জাহাজ দেওয়া হবে।
কর্মকর্তারা জানান, আগে কয়েকবার বিএসসির জাহাজ মংলা বন্দরে আসার সময় রক্ষা করতে না পারায় রপ্তানিকারকেরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই মংলা বন্দরে জাহাজ না আসা পর্যন্ত রপ্তানিকারকেরা বার্জ-কর্গোতে পণ্য বোঝাই করেন না। আবার খুলনা ও মংলায় বার্জের সংখ্যা কম থাকায় প্রায়ই কর্গো বোঝাই হতে দেরি হয়। এ ছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণেও অনেক সময় পণ্য বোঝাইয়ে দেরি হয়।
কিন্তু এ বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে খুলনা কার্যালয়ের ওপর শর্ত আরোপ করে মংলা বন্দরে জাহাজ দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে খুলনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার যখন মংলা বন্দরকে গতিশীল ও আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে, তখনই বিএসসি মংলা বন্দরের ব্যবসা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরে মাসের পর মাস জাহাজ বসে থাকলে ক্ষতি হয় না। অথচ মংলা বন্দরে সময়মতো জাহাজ না দিয়েই অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করা হচ্ছে।
তবে মোকসুদুল কাদের বলেন, সূচি অনুযায়ী মংলা বন্দরে জাহাজ দেওয়া হলেও দিনের পর দিন সেগুলো বসিয়ে রাখায় বিএসসিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। এভাবে লোকসান দেওয়া সম্ভব নয়। বিএসসির খুলনা কার্যালয় নিয়ে কোনো আঞ্চলিকতা হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.