বিভক্তির খেসারত কেন দেবে ঢাকাবাসী?-ডিসিসির নির্বাচন জটিলতা

নমত উপেক্ষা করে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই ভাগে ভাগ করার সময় সরকার জোর দিয়ে বলেছিল, জনসেবা বাড়ানোর জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে সময় অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য দুই সিটি করপোরেশনে দুজন প্রশাসকও নিয়োগ দেওয়া হয়, যা সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে কেবল অসামঞ্জস্যপূর্ণই নয়, সংবিধানেরও পরিপন্থী। কেননা, সংবিধানের ১১ ও ৫৯ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা হয়েছে,


স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকতে হবে। সরকার এমন সময় ডিসিসি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যখন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হতে মাত্র দুই-আড়াই মাস বাকি। এই স্বল্প সময়ে এক কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই মহানগরের নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে ইতিমধ্যে ইসি জানিয়ে দিয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্তের পেছনে আরও কিছু বিবেচনা কাজ করেছে। বর্তমান ইসি মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করলেও সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত তাদের বেকায়দায় ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির চাহিদা সত্ত্বেও সরকার সেনা মোতায়েন করেনি।
সরকার সেবা বাড়ানোর দোহাই দিয়ে ডিসিসি ভাগ করলেও নগরবাসীর বঞ্চনার অবসান ঘটেনি; বরং ভাগের কারণে প্রশাসনিক জটিলতা বেড়েছে, স্থবির হয়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রম। তিন মাসের মধ্যে ডিসিসির নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পেরে সরকারকে এখন আইন সংশোধন করতে হবে। একেই বলে ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। সে সময়ে তড়িঘড়ি করে ৯০ দিনের সীমারেখা বেঁধে না দিলে আইন সংশোধনের প্রয়োজন পড়ত না। অস্বীকার করার উপায় নেই, ডিসিসি ভাগে বৃহত্তর জনগণের কল্যাণের চেয়ে সরকারের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিই অগ্রাধিকার পেয়েছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে ডিসিসি আইনটি সংশোধন করে ৯০ দিনের স্থলে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রাখা হবে। সেই সঙ্গে অনির্বাচিত প্রশাসকেরও মেয়াদও বাড়াতে হবে। প্রশ্ন হলো, সেই সংশোধিত সময়ের মধ্যেও ডিসিসির নির্বাচন হবে কি না? নতুন নির্বাচন কমিশন কবে গঠিত হবে, কাদের নিয়ে গঠিত হবে, সেই কমিশন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন।
ডিসিসির সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালে। আগের কথা বাদ দিলেও আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকারের মেয়াদও তিন বছর পূরণ হতে চলেছে। এত দিন নির্বাচন কমিশনের বারবার তাগাদা সত্ত্বেও নির্বাচন দিতে রাজি হয়নি সরকার। দেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার সংস্থাটির নির্বাচন নিয়ে এই গড়িমসি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা আশা করব, সব জটিলতা কাটিয়ে উঠে সরকার ১৮০ দিনের মধ্যে ডিসিসির নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ঢাকা মহানগরের বাসিন্দারা অনির্বাচিত প্রশাসক চায় না, তারা চায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই ডিসিসি পরিচালিত হোক। সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত কেন ঢাকাবাসী দেবে?

No comments

Powered by Blogger.