ইন্দ্রাণী বাগচি-ভারতের সিদ্ধান্তহীনতা বাংলাদেশের সৌভাগ্য ব্যাহত করেছে
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের যে ঊর্ধ্বমুখী গতি তৈরি হয়েছিল সাম্প্রতিক সময়ে, সেখানে ভারত সমান গতিতে এগোতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি পররাষ্ট্রনীতির নেতৃত্বের জন্য উদ্বেগজনক। সম্প্রতি সরকারের উচ্চমহলের একটি সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের বিষয়টি আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। তবে এ উদ্বেগের জন্য বাংলাদেশ যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী ভারতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা। গত সপ্তাহে আখাউড়া-ত্রিপুরায় ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট করেছেন। এই ধর্মঘটের ফলে
দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত-বাণিজ্যে লাখ লাখ রুপির ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন দুই চেকপোস্টের অবকাঠামোর করুণ অবস্থা নিয়ে, যা কি না ব্যবসা-বাণিজ্যকে নরক বানিয়ে ফেলেছে। ছয় মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম এই চেকপোস্টের উদ্বোধন করেন। তূর্যনিনাদের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, ১৮ মাসের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের এই ধর্মঘট মনে করিয়ে দিয়েছে, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাত থেকে বল ফেলে দিয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতির পর তারা সবে কাজে হাত দিয়েছে।
মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পদক্ষেপ ছিল ইউপিএ সরকারের জন্য প্রতিবেশী কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু মনে হয়েছে, এটা মন্থর হয়ে আসছে। প্রথমত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে বড় করে সব কিছু শুরু হলো। পরে বাংলাদেশ যখন ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ের কাজে অনেক দূর এগিয়ে গেল, তখন একটি নতুন ধারণা জন্ম হলো যে ভারত তার পা পেছনে টেনে নিয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশ ও ভারতের একটি সফল বছর গেল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমানা চিহ্নিত হয়েছে। ছিটমহল নিয়ে বিরক্তিকর সমস্যাটা দূর হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ভারত আন্তরিক ছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ইউপিএ সরকার পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে পারেনি। মমতার খামখেয়ালি মনমোহনের সেপ্টেম্বরের ঢাকা সফরকে পুরোপুরি ভণ্ডুল করে দিয়েছে। একটি সূত্র বলেছে, 'তিস্তা নিয়ে আমাদের অপারগতা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে জ্বলে উঠছে। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি জুয়া খেলেছে। কিন্তু ভারতের ব্যর্থতার ফলে তা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপরিহার্যভাবেই একটি দুষ্টচক্র রয়েছে, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলে থাকে।
আরো একটি ঘটনা বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় আকার ধারণ করেছে, যা আরো সাংঘাতিক হতে পারত। ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর মালদা জেলার গোবিন্দপুর ও কুচবিহার জেলার নারায়ণগঞ্জে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। বিষয়টি ঢাকাকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। ঢাকা ভারতের কাছে শক্তিশালী প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরপর নয়াদিলি্ল দুঃখ প্রকাশ করেছে। যদিও তারা বলেছে, এই গুলির ঘটনা ছিল আত্মরক্ষামূলক। একটি বিবৃতিতে এমইএ (মিনিস্ট্রি অব এঙ্টারনাল অ্যাফেয়ার্স) বলেছে, বিএসএফের এই বাধা প্রদান-নীতি অপরাধ সংঘটনের বিষয়টিকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে সীমান্ত এলাকায় চলাফেরা না করে।
মিনিস্ট্রি অব এঙ্টারনাল অ্যাফেয়ার্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হলো অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রায়শ দুঃখজনকভাবে প্রাণহানির কারণ হয়ে থাকে। এ বিষয়টিকে দুই দেশের সহযোগিতা ও মেকানিজমের মাধ্যমে সামাধান করা প্রয়োজন।
ইন্দ্রাণী বাগচি : টাইমস অব ইন্ডিয়ার কূটনৈতিক সম্পাদক। টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে ভাষান্তর : ম. হাবিব
ব্যবসায়ীদের এই ধর্মঘট মনে করিয়ে দিয়েছে, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাত থেকে বল ফেলে দিয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতির পর তারা সবে কাজে হাত দিয়েছে।
মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পদক্ষেপ ছিল ইউপিএ সরকারের জন্য প্রতিবেশী কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু মনে হয়েছে, এটা মন্থর হয়ে আসছে। প্রথমত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে বড় করে সব কিছু শুরু হলো। পরে বাংলাদেশ যখন ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ের কাজে অনেক দূর এগিয়ে গেল, তখন একটি নতুন ধারণা জন্ম হলো যে ভারত তার পা পেছনে টেনে নিয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশ ও ভারতের একটি সফল বছর গেল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলসীমানা চিহ্নিত হয়েছে। ছিটমহল নিয়ে বিরক্তিকর সমস্যাটা দূর হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ভারত আন্তরিক ছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ইউপিএ সরকার পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে পারেনি। মমতার খামখেয়ালি মনমোহনের সেপ্টেম্বরের ঢাকা সফরকে পুরোপুরি ভণ্ডুল করে দিয়েছে। একটি সূত্র বলেছে, 'তিস্তা নিয়ে আমাদের অপারগতা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে জ্বলে উঠছে। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি জুয়া খেলেছে। কিন্তু ভারতের ব্যর্থতার ফলে তা অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপরিহার্যভাবেই একটি দুষ্টচক্র রয়েছে, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলে থাকে।
আরো একটি ঘটনা বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় আকার ধারণ করেছে, যা আরো সাংঘাতিক হতে পারত। ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর মালদা জেলার গোবিন্দপুর ও কুচবিহার জেলার নারায়ণগঞ্জে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। বিষয়টি ঢাকাকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। ঢাকা ভারতের কাছে শক্তিশালী প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরপর নয়াদিলি্ল দুঃখ প্রকাশ করেছে। যদিও তারা বলেছে, এই গুলির ঘটনা ছিল আত্মরক্ষামূলক। একটি বিবৃতিতে এমইএ (মিনিস্ট্রি অব এঙ্টারনাল অ্যাফেয়ার্স) বলেছে, বিএসএফের এই বাধা প্রদান-নীতি অপরাধ সংঘটনের বিষয়টিকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে সীমান্ত এলাকায় চলাফেরা না করে।
মিনিস্ট্রি অব এঙ্টারনাল অ্যাফেয়ার্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হলো অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রায়শ দুঃখজনকভাবে প্রাণহানির কারণ হয়ে থাকে। এ বিষয়টিকে দুই দেশের সহযোগিতা ও মেকানিজমের মাধ্যমে সামাধান করা প্রয়োজন।
ইন্দ্রাণী বাগচি : টাইমস অব ইন্ডিয়ার কূটনৈতিক সম্পাদক। টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে ভাষান্তর : ম. হাবিব
No comments