ব্যয় বৃদ্ধির জাঁতাকলে জীবনমান-নতুন বছরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি?

দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বছর। গত নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১.৫৮ শতাংশ। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানও কমেছে অনেক। ফলে সয়াবিন তেলের মতো আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের দামও অনেক বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম চার দফা বাড়ানোর ফলে পরিবহন খরচও বেড়েছে বহুল পরিমাণে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারের প্রায় সব পণ্যের ওপরই। শুধু পণ্য নয়, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সরকারি-


বেসরকারি অনেক সেবারই মূল্য বেড়েছে এই সময়ে। তাই সাধারণ মানুষকেও নতুন বছর শুরু করতে হয়েছে বর্ধিত ব্যয়ের বিশাল বোঝা কাঁধে নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে একটা প্রশ্ন, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই ধারা কি নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে?
কেন এই মূল্যস্ফীতি? বৈশ্বিক মন্দার কিছুটা প্রভাব থাকলেও অর্থনীতি-বিশ্লেষকদের মতে, এর জন্য মূলত দায়ী আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় সরকারের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা। ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তখন ছোট ছোট রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কোনো বিকল্প ছিল না। তা করা না হলে বর্তমানে এই ঘাটতি তিন হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেত এবং এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। কিন্তু তিন বছরেও বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন কিংবা সাশ্রয়ী বিকল্প উৎস তৈরি না হওয়ায় এই রেন্টাল পাওয়ার স্টেশনগুলোর ওপরই আমরা ক্রমবর্ধমান হারে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, যা এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর জন্য প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ টন অতিরিক্ত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে, যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। এর ফলে দেশের মোট আমদানি-ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি জ্বালানি তেলে মোট ভর্তুকির পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। সরকার এখন বাড়তি ব্যয়ের বোঝা বইতে না পেরে ভর্তুকি প্রত্যাহারের নামে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়েছে বাজারের ওপর। আর চূড়ান্তভাবে এই বোঝা গিয়ে চাপছে সাধারণ মানুষের মাথায়। ক্ষুদ্র বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও অনেক বেশি। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে যেখানে উৎপাদন খরচ দুই থেকে আড়াই টাকার মতো, সেখানে এসব কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩ টাকার মতো। ইতিমধ্যে সরকার বিদ্যুতের দামও বাড়িয়েছে এবং আবার ফেব্রুয়ারি মাসে আরেক দফা দাম বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রাখা হয়েছে। দেশের রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথেও এটি একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল বছর অবকাঠামো উন্নয়নও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি। এসব কারণে দেশে বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এগোয়নি।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। গত তিন বছর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা মোটামুটি বিদ্যমান ছিল। নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর সে ক্ষেত্রে চলতি বছর দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটি অনেকাংশেই নির্ভর করবে সরকারের দক্ষতার ওপর। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সেই দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সরকার মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে আমাদের মুক্ত করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে।

No comments

Powered by Blogger.