জীবন বাঁচাতে তালেবানের ছদ্মবেশ

মাথায় পাগড়ি, চোখে সুরমা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মুঠোফানে জিহাদি রিংটোন। নাম তাঁর আবদুল ওয়ালি (৩০)। বেশভূষায় একজন পাক্কা তালেবান সৈনিক। ওয়ালির মুঠোফোনের রিংটোনে গুলির শব্দ আর একজন পুরুষের কণ্ঠ। আর সেই পুরুষ ভরাট কণ্ঠে বলছেন, ‘শত্রুর বিপক্ষে আমাদের জিহাদ চলবে। জিহাদ করে মৃত্যু হলে আমরা বেহেশতে যাব।’
কিন্তু ওয়ালির কথা শুনলে ভ্রূ কুঁচকে যাবে। তিনি নাকি আসল তালেবান নন, তালেবানকে সমর্থনও করেন না।


ওয়ালি বলেন, ‘তালেবানকে সমর্থন দেওয়ার মানুষ তিনি নন।’ কিন্তু বাধ্য হয়ে তালেবানের ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন। একটি কাজের ব্যাপারে তাঁকে কান্দাহারে যেতে হবে। আর কান্দাহার হচ্ছে তালেবানের ঘাঁটি। তালেবানের বেশভূষা নেওয়ার পরও ওয়ালির যেন শঙ্কা কাটছে না। তিনি বলেন, ‘লোকে বলে, তালেবানরা মনোবিদ। তারা আপনার চোখ দেখে বলে দিতে পারবে আপনি তাদের সমর্থক কি না। এ কারণে মুঠোফোনে তালেবানের গান লোড করেছি। তালেবান বাস থামালে এই গান আমি তাদের বাজিয়ে শোনাব।’
শুধু ওয়ালি নন, তাঁর মতো অসংখ্য মানুষ তালেবানের ছদ্মবেশ ধারণ করছেন। দাড়ি, চোখে সুরমা, মুঠোফোনে জিহাদি রিংটোন...যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে এখন এটাই আত্মরক্ষার শেষ কৌশল। তালেবান জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে অভিনব এ কৌশল বেছে নিতে হচ্ছে সাধারণ আফগানদের।
শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে আফগানিস্তানের রাস্তায় রাস্তায় বোমা পুঁতে রাখছে তালেবান। রাস্তায় বের হওয়াটা তাই ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া তাদের সশস্ত্র টহল তো আছেই। মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে তারা তল্লাশি চালায়। জীবন বাঁচাতে তাই তালেবানদের পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জা নিয়ে বাইরে বের হয় লোকজন।
ওয়ালি বলেন, ‘কিছুদিন আগে থেকে আমি দাড়ি রাখতে শুরু করেছি। চোখে দিতে শুরু করেছি সুরমা। আপনি দেখতে যতটা তাদের (তালেবান) মতো হবেন, তাদের সুরে কথা বলবেন—আপনি ততটা নিরাপদ। আশা করা যায়, তখন আর কিছু ঘটবে না।’
কাবুলের বাসস্ট্যান্ডের কাছে সিডির দোকান আছে ওয়ালির। তাঁর দোকানে মুঠোফোনে গান লোড করা যায়। ওয়ালি বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক যাত্রী আমার দোকানে এসে জিহাদি গান লোড করে। তাদের পছন্দের গানের বেশির ভাগই আত্মঘাতী হামলায় প্রেরণামূলক।’
ওয়ালি জানান, তাঁর দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৫০টি তালেবান গান লোড করা হয়। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা খুবই ভালো চলছে। তালেবানকে ধন্যবাদ।’ এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.