২৩ লাখ টন উদ্বৃত্ত- তবু চালের দাম বাড়ছে by ইফতেখার মাহমুদ
হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজির দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ তাঁরা বলতে না পারলেও সামনে আরও দাম বাড়বে বলে তাঁদের ধারণা।
দেশে ২৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত। অথচ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের প্রধান চালের পাইকারি বাজার কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, ঈশ্বরদী ও ভৈরবের মোকামে মোটা চালের দর কেজিতে তিন টাকা ও সরু চাল পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চাল ২১ থেকে বেড়ে ২৪ এবং মাঝারি চাল ২৪ থেকে বেড়ে ২৯ টাকা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চালের দাম বাড়লেও কৃষক খুশি নন। কারণ, ধানের দাম বাড়ছে না। চালের দর যে জেলাগুলোতে বেড়েছে, সেখানে ধানের দাম উল্টো কমতে দেখা গেছে। সরকারি হিসাবে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৬২০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন বলেন, কোনো যুক্তিতেই চালের দাম বাড়তে পারে না। অবশ্যই এতে ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও মজুতদারির সম্পর্ক আছে। বিশ্ববাজারে এ বছর ভারত বিপুল পরিমাণে চাল রপ্তানি করার পর সে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দর বাড়তির দিকে। এখন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ব্যবসায়ীদের চালের দর বাড়ানোর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশি দামে বিক্রি হওয়া চালগুলো মূলত গত বোরো ও আমন মৌসুমের। ব্যবসায়ীরা ওই চালগুলো বিক্রি করে নতুন আমনের চাল গুদামে তুলছেন। ফলে এ সময়ে চালের দাম কমার কথা। কিন্তু তাঁরা দাম না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
দেশের ধান-চালের উৎপাদন, মজুতের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনের চেয়ে দেশে চালের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ বেশিই আছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার চাল রপ্তানির অনুমতি দিতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা মজুত শুরু করেছেন। এ জন্য তাঁরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। গত বছর সরকার খাদ্যশস্য মজুত-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে কোনো চালকলে দেড় মাসের বেশি ধান-চাল মজুত রাখা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ চালকল এটা মানছে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের খাদ্যশস্য পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত আছে। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকায় বাজারে ধান ও চালের দর কম। ফলে ধানের দর বাড়াতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। এ জন্য উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়।
চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর দায় আবহাওয়ার ওপর চাপাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, শীতের কারণে ধান শুকানো যাচ্ছে না। ফলে চালকলগুলোতে ধান ভাঙানো যাচ্ছে না। জোগান কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ অটো, হাসকিং ও চালকল মালিক সমিতির সভাপতি লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহজুড়ে দেশে শৈত্যপ্রবাহ থাকায় চালকলগুলোতে ধান শুকানো ও মাড়াই করা যায়নি। তাই বাজারে জোগান কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। শীত কমলে চালের দামও কমবে বলে জানান তিনি।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেনের মতে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে চালের দর কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বাড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উৎপাদন: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর মোট তিন কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। বীজ, পশুখাদ্য, অপচয় ও অন্যান্য ব্যবহার বাদ দিলে প্রকৃত উৎপাদন দাঁড়ায় দুই কোটি ৯০ লাখ টন। মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যশস্যের চাহিদা ৫০৯ গ্রাম ধরলে দেশের মোট চাহিদা দাঁড়ায় দুই কোটি ৬৭ লাখ টন। সেই হিসাবে দেশে বর্তমানে ২৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এই উদ্বৃত্ত চালের কারণে ধানের দাম বাড়ছে না। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের ৬২০ টাকা খরচ হয়। আর সেই চাল তাঁরা বিক্রি করছেন ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, চালের দাম বাড়লেও কৃষক খুশি নন। কারণ, ধানের দাম বাড়ছে না। চালের দর যে জেলাগুলোতে বেড়েছে, সেখানে ধানের দাম উল্টো কমতে দেখা গেছে। সরকারি হিসাবে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৬২০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন বলেন, কোনো যুক্তিতেই চালের দাম বাড়তে পারে না। অবশ্যই এতে ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও মজুতদারির সম্পর্ক আছে। বিশ্ববাজারে এ বছর ভারত বিপুল পরিমাণে চাল রপ্তানি করার পর সে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দর বাড়তির দিকে। এখন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ব্যবসায়ীদের চালের দর বাড়ানোর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশি দামে বিক্রি হওয়া চালগুলো মূলত গত বোরো ও আমন মৌসুমের। ব্যবসায়ীরা ওই চালগুলো বিক্রি করে নতুন আমনের চাল গুদামে তুলছেন। ফলে এ সময়ে চালের দাম কমার কথা। কিন্তু তাঁরা দাম না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
দেশের ধান-চালের উৎপাদন, মজুতের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনের চেয়ে দেশে চালের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ বেশিই আছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার চাল রপ্তানির অনুমতি দিতে পারে—এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা মজুত শুরু করেছেন। এ জন্য তাঁরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। গত বছর সরকার খাদ্যশস্য মজুত-সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে কোনো চালকলে দেড় মাসের বেশি ধান-চাল মজুত রাখা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ চালকল এটা মানছে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের খাদ্যশস্য পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ২৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত আছে। চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি থাকায় বাজারে ধান ও চালের দর কম। ফলে ধানের দর বাড়াতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। এ জন্য উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি করার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়।
চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর দায় আবহাওয়ার ওপর চাপাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, শীতের কারণে ধান শুকানো যাচ্ছে না। ফলে চালকলগুলোতে ধান ভাঙানো যাচ্ছে না। জোগান কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ অটো, হাসকিং ও চালকল মালিক সমিতির সভাপতি লায়েক আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহজুড়ে দেশে শৈত্যপ্রবাহ থাকায় চালকলগুলোতে ধান শুকানো ও মাড়াই করা যায়নি। তাই বাজারে জোগান কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। শীত কমলে চালের দামও কমবে বলে জানান তিনি।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেনের মতে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে চালের দর কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বাড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উৎপাদন: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর মোট তিন কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। বীজ, পশুখাদ্য, অপচয় ও অন্যান্য ব্যবহার বাদ দিলে প্রকৃত উৎপাদন দাঁড়ায় দুই কোটি ৯০ লাখ টন। মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যশস্যের চাহিদা ৫০৯ গ্রাম ধরলে দেশের মোট চাহিদা দাঁড়ায় দুই কোটি ৬৭ লাখ টন। সেই হিসাবে দেশে বর্তমানে ২৩ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এই উদ্বৃত্ত চালের কারণে ধানের দাম বাড়ছে না। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের ৬২০ টাকা খরচ হয়। আর সেই চাল তাঁরা বিক্রি করছেন ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকায়।
No comments