ধর্ষিতা এ জগত - লজ্জিত লজ্জা কোথায় রাখি- প্রতিক্রিয়া by নুরুন্নাহার শিরীন
জগতজুড়ে পশুত্বময় এক অশুভ পদচারণায় ধর্ষিতা এ জগতমুখ - দেখে-দেখে লিখতে বাধ্য না হয়ে পারছি না - ‘ধর্ষিতা এ জগত দেখিতে চাহি না আর।’
ভাবছি - নারীজন্ম নিশ্চয় অপরাধ না।
পাপ না। নারী মানেই জননী-জায়া-ভগ্নী-কন্যার স্নেহজ মুখটি। প্রেমিকা- প্রেয়সি বন্ধুও সে। অথচ জগতজুড়েই আজ নারীর ‘পরে হামলা-নির্যাতন-পশুত্ব ফলানোর অন্যায়চিত্র। দেখে-দেখে বিবেক বিবমিষায় ও যন্ত্রণায় রক্তাক্ত। জর্জরিত। অধোবদন। স্তব্ধ। লজ্জিত। ভাবছি - নারী কি তবে কারও জননী-জায়া-ভগ্নীসম-কন্যাসম- প্রেমিকাসম-বন্ধুসম স্নেহ-ভালোবাসার জন নয়??? নারী কি তবে কেবল পণ্যসম লোভের-রিরংসার বিষয়??? নারীর কি পরিবারের সমাজের মর্যাদাময় অবস্থান অর্জিত হয়নি আজও এই সভ্যতা নিয়ে গর্বিত বিশ্বে??? না, আমি এই অদ্ভুত কথাটি বিশ্বাস করতে চাই না। যদিও চারপাশের ঘটমান অনাকাক্সিক্ষত অসভ্য-বর্বর ঘটনা বলছে অন্য কথা। তবুও আমি আমার আজন্মের লালিত বিশ্বাসের ভিত্তিকে অস্বীকার করতে পারি না কিছুতে। কিন্তু আমার চারপাশের জগতে হচ্ছে টা কি ! নারীর ‘পরে এ কোন অভিশাপগ্রস্ত ভয়ঙ্করের থাবা ! মানুষ নামধারী এ কোন পশুপ্রবণ অমানুষের দঙ্গল ! আমরা ক্যামন সভ্যতা নিয়ে বড়াই করি ! যেখানে প্রতিনিয়ত নারীরা নিগৃহীত হয়েও লড়াই করছে ! বেঁচে থাকার প্রাণান্ত লড়াই ! জননীর অপরিসীম কষ্টজাত-গর্ভজাত সন্তান হয়েও কি করে সেই জননীসম-জায়াসম-ভগ্নীওসম-কন্যাসম- প্রেমিকা-বন্ধুসম নারীর ’পরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছে পশুর অধম হয়ে ! আদতে ওরা অমানুষই। মাতৃগর্ভজাত নষ্ট-সন্তান। যারা ওদের জন্য কোন ওরকম মানবিকতার প্রশ্ন তুলতে চান - তাদের বলি - ভাবুন - অই ধর্ষিত নারী আপনারই জায়া-ভগ্নী-কন্যা- প্রেমিকা-বন্ধু হতে তো পারতই ! আপনি তখন মানবিকতার প্রশ্ন তুলতে পারতেন! পারতেন না, জানি। আসুন। আজ আমরা সবাই একাট্টা হই- সকল ধর্ষকের প্রকাশ্য বিচারে নপুংসক করবার দাবিটি উত্থাপন করতে অভিন্ন দাঁড়াই এক কাতারে। এই দাবিতে অনড় থাকতে বলি। এই হোক ধর্ষকের উচিত শাস্তিবিধান।ভাবছি - নারীজন্ম নিশ্চয় অপরাধ না।
যাতে জগতে ধর্ষকামী সকল অসুরিক-দানবিক-পশুত্ব প্রবণতা বিদায় না নিলেও আনুপাতিকহারে কমতে থাকে – শাস্তির ভয়ে হলেও। শাস্তির ভয়েই পশু-মানবের রিরংসা-লোলুপ থাবা-নখর বিস্তার কমুক। এ জগতে ব্যাধ ও ব্যাধির দাপট বন্ধ হোক। যাতে নারীরা নির্ভয়ে না হোক – অন্তত একটি স্বস্তিকর সমাজে সভ্যতার আশ্বাসটুকু পেয়ে চলতে পারে। দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে বলা হয়েই থাকে যথেষ্ট জোরেশোরে। বলি যে - দাসীরাও মর্যাদাময় অবস্থানে থাকতে পারুক। লোলুপ নজর না পড়ুক কাজের মেয়েটির পানেও। তারও রয়েছে সভ্য সমাজে এইটুকু সম্মানজনক অবস্থানের নিশ্চয়তাবিধান পাবার অধিকার। এদেশে পারিবারিক স্নেহজ বন্ধনের সুনাম ছিল একদা। আজও যা বিনষ্ট তত হয়নি বলেই বিশ্বাস। আজও বাবার হাত ধরেই কন্যাশিশু স্কুলে যায়। যাবেও। কেবল বাড়তি কিছু সচেতনতা, সতর্কতা জরুরী। যাতে কন্যার বন্ধুদের পরিচিতিও অভিভাবকের জানাটি প্রয়োজন। বান্ধবী নামের কলঙ্ক যেন সর্বনাশের সুযোগ না পায়। আজকের নারীরা বিশ্বময় নিজস্ব মেধা দিয়েই জয় ছিনিয়ে নিচ্ছে।
বাংলাদেশের আজকের প্রধানম্নত্রী-পররাষ্ট্রমন্ত্রী-কৃষিমন্ত্রী এবং বিরোধী নেত্রীও নারী। নারীর জয়জয়কার সর্বত্র আজ। তাহলে ভয় কি নারীর - কতিপয় নরপশুকে! নারীর রক্ষাকবজ হোক বিশ্বের সভ্য পুরুষ সমাজও। এ আশাবাদ জয়যুক্ত হোক। সরকারের আরও অধিক জরুরী সময়োচিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হোক এদেশের নারীর সুরক্ষায়- এমন দাবিও জানাই।
সেই স্কুলদিনেই ধর্মগ্রন্থে পড়ে পড়েই বড় হয়েছি-
মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত।
পবিত্র ধর্মশিক্ষা নিশ্চয় কতিপয় কুসন্তানের কুলাঙ্গারসম আচরণে বিলীন হতে পারে না। কুলাঙ্গারের দঙ্গল দোজখের অগ্নিতে পুড়ুক অনন্তকাল। আরও একটি শাস্ত্রীয় বাণী দিয়েই শেষ করছি -
‘রে ব্যাধ, তোর বিস্তার হবে না - দেখিস।’
No comments