বিজয় মেলায় অশ্লীলতা-সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি চর্চা
যাত্রাপালা অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সব মানুষের কাছে এর আকর্ষণ রয়েছে। গ্রামের মানুষ যাত্রাকে বিনোদনের উপাদান হিসেবে গণ্য করে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় যাত্রার আয়োজন হবে_ এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু তার সঙ্গে অশ্লীলতা কেন যুক্ত হবে? মঙ্গলবার সমকালের উপকণ্ঠ পাতায় 'সিঙ্গাইরে যাত্রা প্যান্ডেল ভেঙে দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, মানিকগঞ্জের একজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিজের পরিচয় গোপন করে টিকিট কেটে যাত্রা দেখতে যান। কিন্তু টানা দুই ঘণ্টা অশালীন নাচ-গান চলার পরও যাত্রাপালা শুরু হতে না দেখে তিনি পুলিশ ডেকে যাত্রা বন্ধ করে দিয়েছেন। তার এ পদক্ষেপ সঠিক বলে আমরা মনে করি। বিজয় মেলার আয়োজকরা সঠিক কাজ করেননি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড এর দায়দায়িত্ব এড়াতে পারে না। যাত্রার নামে কুরুচিপূর্ণ নাচ-গানের আয়োজন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর সুযোগ নিয়ে কিছু লোক অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটাতে চেয়েছে। একই সঙ্গে এটা হয়ে উঠেছিল তাদের আয়ের উৎস। সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু প্রভাবশালী লোক থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ ধরনের অশ্লীল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এখানেও জেলা প্রশাসনকে নাকি অর্থ দিয়ে বশ করা হয়েছিল। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আয়োজনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা আশা করব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল সিঙ্গাইরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম অনুসন্ধান করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের মানিকগঞ্জ জেলা নেতৃত্বকেও সিঙ্গাইর উপজেলা কমিটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে হবে। এ দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। অথচ সিঙ্গাইরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় অশ্লীল নাচ-গানের অনুষ্ঠান দিনের পর দিন চললেও উদ্যোক্তাদের নিবৃত্ত করতে তারা কেন ব্যর্থ হলো_ সেটা অবশ্যই জানতে হবে এবং এতে দলের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের অন্যান্য স্থানেও এ ধরনের অপসংস্কৃতির চর্চা যেন না হয়, সেজন্য প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃত্বকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানাই। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসন সম্পর্কে ম্যানেজ হয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ, তারও তদন্ত কাম্য।
No comments