‘আমার মূল কাজ ভালো খেলা’ by নাসির হোসেন

কেমন গেল ২০১১ ২০১০ সালের সঙ্গে ২০১১ সালের পার্থক্য করতে গেলে আমার চোখে ধরা পড়ে সবার আগে যে, ২০১০ সালে রংপুরের কেউ আমাকে চিনত না। ২০১১ সালের এই সময়ে এসে শহরের অনেক লোক আমাকে চিনতে শুরু করেছে। কাগজে-কলমে আমার বয়স এখন ২০ বছর, ২০ বছরের মধ্যে জীবনের সেরা বছর? আমি বলব, ২০১১ সাল। জীবনের অনেক বড় একটা বাঁক ঘুরে গেছে এ বছরে, ২০১১ সাল আমার জন্য অনেক লাকি। আমার লাইফস্টাইলই বদলে


দিয়েছে...। বদলে যাওয়া জীবন আমাকে নস্টালজিক করে না। কী ছিলাম, কী আছি—এই স্মৃতিকাতরতা ভাবাবেগে ভাসায় না। আমি বরং ভাবি, এই তো বেশ আছি। যত দিন যাচ্ছে, উপভোগের সীমা বাড়ছে। চক্রবৃদ্ধি হারে সেটা বাড়তেই থাকুক। নতুন বছর, তার পরের বছর, তারও পরের বছর—এভাবে পুরো জীবনটাই উপভোগের মোড়কে ঢাকা পড়ে যাক— এই হচ্ছে আমার ভবিষ্যৎ কল্পনা। কিংবা স্বপ্ন।
আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হলো গত প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। খুব ভালো খেলেছিলাম সেবার। সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। তখন থেকেই আমার ভালো খেলার শুরু। একাডেমি বলেন, ‘এ’ দল বলেন, সব জায়গাতেই কিছু না কিছু করেছি।
২০১১-এর আগস্টে জাতীয় দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে পেয়েছি নিজের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে আরেকটি ফিফটি, সর্বশেষ ডিসেম্বরে পাকিস্তান সিরিজে তো ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটাই পেয়ে গেলাম। এই সিরিজে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটাও হয়ে যেত। কিন্তু ঢাকা টেস্টে আউট হয়ে গেলাম ৭৯ রানে। তবে এ জন্য আমার কোনো আফসোস নেই, এটা কপালের ব্যাপার। আমার এমন কোনো টার্গেট নেই যে এই সময়ের মধ্যে ওটা করতে হবে...বা এ রকম কিছু।
তবে জিম্বাবুয়ে সফর দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু আমার। তার ঠিক আগে আগে ছোটখাটো একটা হোঁচটই খেয়েছিলাম বলা যায়। মাসব্যাপী কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাক পেয়েও কোমরে ব্যথার কারণে যোগ দিতে পারিনি শুরুতে। পরে বিকেএসপি থেকে ক্যাম্প কক্সবাজারে গেলে সেখানে গিয়ে যোগ দিই দলের সঙ্গে। ঢাকায় ফিরে প্রস্তুতি ম্যাচেই তো পেয়ে গেলাম সেঞ্চুরি।

কেমন চাই ২০১২
টেস্ট-ওয়ানডে দুটোতেই অন্তত ৪০ করে রানের গড় চাই। ১০টি ওয়ানডে খেলে এখনই সেটার কাছাকাছি আমি (৩৬.২৮), আর চার টেস্টে গড় ২৯.৮৫।
সামনে ২০১২ সাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেই দরজা দিয়ে এই বছরের স্বপ্নের কথা তো বললামই। এ ছাড়া সব সময়ের ইচ্ছে—ভালো খেলতে হবে। ভালো খেলতে থাকলে প্রাপ্তির খাতায় ভালো কিছু আসবে—এই হলো বিশ্বাস। আমি জানি ছবি তোলা দূরে থাক, খারাপ খেললে কেউ আমাকে ফোনও করবে না। আমার মূল কাজ ভালো খেলা। পারফর্ম করলে আমার জায়গা থেকে আমাকে কেউ সরাতে পারবে না। আর খারাপ খেললে কাউকে সরাতে হবে না, নিজে নিজেই সরে যেতে হবে।
২০১১ সালের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভালো খেলতে চাই...। ২০১২-এর নাসির হোসেন এখন যা আছে, তার চেয়ে যেন অনেক ভালো খেলোয়াড় হয়। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য না থাকলেও একটা জিনিস সব সময়ই চাই—যেখানে যে অবস্থায় খেলি, ভালো খেলতে হবে।
অনুলিখন: তারেক মাহমুদ

No comments

Powered by Blogger.