শর্ত ভেঙে সমিতির স্থাপনা by অরূপ দত্ত

রাজধানীর উত্তরায় লেকসংলগ্ন সবুজ বেষ্টনী এবং পায়ে হাঁটার রাস্তা দখল করে কল্যাণ সমিতির পাকা কার্যালয় তৈরি হচ্ছে। ৯ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশের জমিতে এই অবৈধ স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। স্থাপনাটি তৈরি করতে লেকের পাড়ের ১৪টি গাছ কাটা হয়েছে। লেকের তত্ত্বাবধানকারী রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিষয়টি জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি। লেকসংলগ্ন জমি সবুজ বেষ্টনী ও বাগানের জন্য নির্ধারিত। রাজউক সূত্র জানায়, উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর কল্যাণ


সমিতিকে লেকের পাড়ের জমি কিছু শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এর মধ্যে ছিল, সবুজ বেষ্টনী নষ্ট ও স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা যাবে না, কিন্তু সমিতি দুটি শর্তই ভেঙেছে।
সমিতির নির্মাণাধীন স্থাপনার পার্শ্ববর্তী বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, তিনি ২০০৫ সাল থেকে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও লেকের পাড়ের জমি রাজউক তাঁকে বরাদ্দ দেয়নি। রাজউক বলেছিল, সবুজ বেষ্টনী ও পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। তিনি প্রশ্ন করেন, সেই জমি রাজউক কল্যাণ সমিতিকে অস্থায়ী কার্যালয় করার জন্য দেয় কীভাবে?
গত সপ্তাহে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কল্যাণ সমিতি লেকের পাড়ের বাগানের গাছপালা কেটে পাকা স্থাপনা তৈরি করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, নারকেল, সুপারি, আম, জাম, জামরুল, নিমসহ মোট ১৪টি ফলবতী গাছ সমিতি কেটেছে। গাছ কাটার সময় রাজউকের স্থানীয় কার্যালয়ে খবর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কেউ আসেনি।
এ বিষয়ে রাজউকের বোর্ড সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান বলেন, গাছ কাটার অভিযোগ তাঁরা পাননি। ঘটনা সত্য হলে তা অবশ্যই গুরুতর বিষয়। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সম্প্রতি ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরে এ ধরনের স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দ দেওয়া জায়গার সদ্ব্যবহার করতে দুটি সুপারিগাছ কাটা হয়। তিনি বলেন, সব সেক্টরে কল্যাণ সমিতির কার্যালয় থাকলেও ৯ নম্বর সেক্টরে নেই। সেখানে অস্থায়ী টিনের ছাউনির কার্যালয় করা হচ্ছে। সমিতি গাছও লাগাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কল্যাণ সমিতির একজন সদস্য বলেন, আগে তাঁদের কার্যালয় ছিল ২ নম্বর সড়কে। রাজউক ঘরটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়। উদ্ধার করা জায়গা বরাদ্দ দেয় একই সড়কের ২৭ নম্বর প্লটের মালিককে। তিনি সরকারের প্রভাবশালী এক ব্যক্তির আত্মীয়। পরে কল্যাণ সমিতি আরেকটি খালি জায়গায় কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিলে পাশের বাড়ির মালিক (সরকারের একজন মন্ত্রী) পুলিশ দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেন। সমিতি ৯ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রস্থলে আরেকটি খালি জায়গা সমিতির কার্যালয়ের জন্য বরাদ্দ চাইলে রাজউক তা না দিয়ে সেক্টরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ১ নম্বর রোডের ৫৪ নম্বর বাড়ির পাশে লেকসংলগ্ন ওই জমি অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
লেকের পাড়ে এ ধরনের অনিয়ম আরও হয়েছে। ৯ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে লেকঘেঁষে প্রায় দুই কাঠা জমি ছিল। তাতে সবুজ বেষ্টনী না করে লেকের কিছু অংশ ভরাট করে চার কাঠা বানিয়ে রাজউক এক কর্মচারীকে তা বরাদ্দ দিয়েছে। একইভাবে ৯ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৫২ নম্বর প্লটের বরাদ্দগ্রহীতাকে লেকসংলগ্ন দেড় কাঠা এবং লেকের অপর পাড়ে ১১ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের ১/সি প্লটের বরাদ্দগ্রহীতাকে লেকসংলগ্ন দেড় কাঠা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ছয়তলা ভবন তৈরি হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.