ট্রাইব্যুনালে অষ্টম সাক্ষী-একাত্তরে সাঈদীর নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন শিকদার

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মো. মোস্তফা হাওলাদার (৫৬) গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একাত্তরে সাঈদীর নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন শিকদার। ১৫-১৬ বছর ধরে তিনি সাঈদী নাম নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোস্তফা হাওলাদার জবানবন্দিতে


আরও বলেন, একাত্তরের ৭ মে পিরোজপুরের পারেরহাট বাজারে পাকিস্তানি সেনারা আসার পর সাঈদী, দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানাসহ অনেক রাজাকার বাজারের হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সেনাদের দেখিয়ে দেন। এরপর পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ৩০-৩৫টি দোকান লুট করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে লুটপাটের পর পাকিস্তানি সেনারা রাজলক্ষ্মী স্কুলে তাদের ক্যাম্পে চলে যায়। পরদিন ১৫-১৬ জন পাকিস্তানি সেনা ও ৩০-৩৫ জন রাজাকার বাদুরা গ্রামে যায়। সেখানে সাঈদী নুরু খানের বাড়ি দেখিয়ে দিলে পাকিস্তানি সেনারা সেই বাড়িতে লুট ও ভাঙচুর করে। সাঈদী দেখিয়ে দেওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা রইছউদ্দিন পসারি, সইজউদ্দিন পসারির বাড়িও লুট ও অগ্নিসংযোগ করে।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে ফিজিওথেরাপি দিয়ে বেলা ১১টার দিকে সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষী মফিজউদ্দিন পসারিকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী কফিলউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আহমেদ আনসারী। গত বৃহস্পতিবার মফিজউদ্দিনের জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছিল। কফিলউদ্দিন বলেন, মফিজউদ্দিনের জবানবন্দি অনুসারে তাঁকে ও কুট্টিকে পাকিস্তানি সেনারা একাত্তরের ৮ মে ধরেছিল। তিনি মফিজউদ্দিনের কাছে জানতে চান, মে মাস কত দিনে হয় এবং এর আগের মাসের নাম তিনি জানেন কি না? জবাবে মফিজউদ্দিন বলেন, মে মাস আনুমানিক ২৯ দিনে এবং এর আগের মাস কোনটা তা তিনি জানেন না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মামলার সাক্ষী হওয়ার পর পারেরহাট বন্দরের আশ্রয়কেন্দ্রে একটি ঘর তাঁর মেয়ে চন্দ্রভানের নামে স্থানীয় সাংসদ বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে তাঁর মেয়ের জামাই খোঁজখবর নিয়ে এই বরাদ্দ নিয়েছেন।
এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দির সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দির বিভিন্ন বৈপরীত্য নিয়ে মফিজউদ্দিনকে প্রশ্ন করেন আইনজীবী মনজুর। বেলা একটার দিকে জেরা শেষ হলে ট্রাইব্যুনালে এক ঘণ্টার বিরতি দেওয়া হয়।
বিরতির পর মোস্তফা হাওলাদারের জবানবন্দি নেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তাঁকে জেরা শুরু করেন। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় বেলা চারটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.