ক্লার্ক-পন্টিংয়ের দিন

দৃশ্যপট ১: প্রায় নিখুঁত এক ইনিংস, সেঞ্চুরিটা তবু কি সহজে ধরা দেয়? লাঞ্চের আগে হতে হতেও হলো না। ৯৭ রান নিয়ে ড্রেসিংরুমে ৪০ মিনিট নিশ্চয়ই ছটফট করে কেটেছে। নব্বইয়ে পা দেওয়ার পর থেকেই চার মাসের মেয়ে ইলিকে কোলে নিয়ে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে স্ত্রী রিয়ানা। লাঞ্চের ১০ মিনিট পর এল সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, সেটিও নাটকীয়ভাবে। মিডঅনে বল ঠেলেই দৌড়, যা শেষ হলো ডাইভে। তার পরও জহির খানের থ্রোটা স্টাম্পে লাগলে নড়বড়ে নিরানব্বইয়ের


যন্ত্রণা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো। ভাগ্য এবার তাঁকে সঙ্গ দিল। শুয়ে থেকেই ডানে-বাঁয়ে তাকিয়ে দেখলেন বিপদ হয়নি। উঠে দাঁড়ালেন খুব ধীরে ধীরে, সিডনির গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়েছে আগেই। মুখে কেমন অপরিচিত এক হাসি—যে হাসিতে আনন্দ, স্বস্তি আর আবেগ মিলেমিশে একাকার। টম মুডি বললেন, ‘ওর এমন হাসি কখনোই দেখিনি।’ সাড়ে তিন বছর বয়সী বড় মেয়ে অ্যামি নিশ্চয়ই বাবার এই সেঞ্চুরির মাহাত্ম্য বোঝে না। মায়ের সঙ্গে সে-ও উৎসবে শামিল। ধুলোমাখা পোশাকে রিকি পন্টিং তখন দুই হাত উঁচিয়ে। টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন দুই বছর আর ৩৩ ইনিংস পর। ওই ময়লা পোশাকটাকে ধরতে পারেন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়টার প্রতীকী রূপ। খানিক পর পাল্টে গায়ে চাপালেন নতুন পোশাক, নতুন করে শুরুর প্রতীকী?
দৃশ্যপট ২: মাইকেল ক্লার্কের চোখে কি পানি? টিভি রিপ্লে নিশ্চিত করল। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির উদ্যাপন করলেন ফুটবলারদের মতো, পারলে পুরো মাঠ চক্কর দিয়ে ফেলেন। মাইক হাসি গিয়ে যখন জড়িয়ে ধরলেন, অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের চোখে পানি। কী জানি, দুই শ নিয়ে কী আবেগ বুকে পুষে রেখেছিলেন! দুই শর পর কাল আরও একবার ব্যাট তুলতে হলো। দুই শর আগে তুলেছেন তিনবার—এক দিনে মোট পাঁচবার। শুধু কালই যে করেছেন ২০৪ রান।
দিন শেষে পন্টিং বললেন, ‘পাপকে (ক্লার্ক) এতটা ভালো ব্যাটিং করতে দেখিনি কখনোই।’ ক্লার্কও হয়তো একমতই হবেন। ১৮২ রানে ইশান্ত শর্মাকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়া ছাড়া পুরো ইনিংসে যা করতে চেয়েছেন, তা-ই করতে পেরেছেন। চোখকে প্রশান্তি দেওয়া দারুণ সব কাভার ড্রাইভের সঙ্গে পুল-কাট-ফ্লিকের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন মাঠে। ১৩৬ বলে ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৮তম আর গত ১১ ইনিংসে চতুর্থ সেঞ্চুরি। ২৮৪ বলে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পর দিন শেষে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পূর্বসূরির প্রতি, ‘দায়িত্ব নেওয়ার সময় পান্টার (পন্টিং) আমাকে বলেছিল, “সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে, রান করতে হবে।” আমি সেই চেষ্টাই করছি।’
পূর্বসূরির কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা ক্লার্কেরও পাওনা। ‘পন্টিংয়ের দিন শেষ’ চিৎকারে কান না দিয়ে বারবার বলে এসেছেন, দলে পন্টিংকে কতটা প্রয়োজন। অধিনায়কের এই সমর্থনটুকু না পেলে পন্টিংয়ের ক্যারিয়ারে হয়তো যতি পড়ে যেত এত দিনে!
এক দিনে ৩৬৬ রান, ৬ উইকেট হাতে রেখে ২৯১ রানের লিড—২০০১ সালের কলকাতাকে মনে রেখেও নিশ্চিত বলা যায়, হারছে না অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয়দের সারা দিন কেটেছে বলের পেছনে ছুটোছুটি করে। পরিকল্পনাহীন বোলিংয়ের চেয়েও দৃষ্টিকটু ছিল শরীরী ভাষা আর ধোনির ফিল্ডিং সাজানো। দিনের শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং, সারা দিনই ফিল্ডিং ছিল ছড়ানো। তিন বোলারের রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়ে গেছে, আরেকজন কাছাকাছি।
দিনটা পুরোপুরিই অস্ট্রেলিয়ার করে নিতেই যেন ফিফটি করে ফেলেছেন হাসিও। কাল অধিনায়কের দ্বিশতকের আনন্দে লাফ দিয়ে ফেলেছেন। আজ লাফ দিতে চাইবেন নিজের জন্যই!

No comments

Powered by Blogger.