লেবানন নিয়ে বিপাকে ঢাকা

লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরা না ফেরা নিয়ে বিপাকে সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লেবানন থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেজিস্ট্রেশন  শুরু হয়েছে। শুরুতে দুই হাজার বাংলাদেশি ফেরতের আগ্রহ প্রকাশ করলেও রেজিস্ট্রেশন করেছে অর্ধেক! নিকট অতীতে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরতের প্রক্রিয়ায় যুক্ত ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তাই মুখ্য। সরকার, দূতাবাস, আইওএম তা-ই চায়। কিন্তু শুরুতে বাংলাদেশিরা ফেরতের জন্য যেভাবে আগ্রহী হন, আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সেটি ভাটা পড়তে থাকে। সুদান প্রসঙ্গ টেনে এক কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রেশনের পর সেই সংখ্যা হাজার থেকে কয়েক শ’তে নেমে আসবে। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক কষ্ট করে বিদেশে যান। তাদের অনেকের হয়তো শেষ সম্বলটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তারা যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতির আশা করে শেষ পর্যন্ত দেশটিতে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। অনেকে মাঝপথ থেকেও পালানোর চেষ্টা করেন। সুদান ফেরত দু’জন বাংলাদেশির জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টার কারণে এবার লেবানন ফেরতদের সৌদি আরব ট্রানজিটে রাজি হচ্ছে না জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিকল্প হিসাবে তুরস্কের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সৌদি আরব না তুরস্ক কোন পথে বাংলাদেশিদের লেবানন থেকে ফেরত আনা হবে? সন্ধ্যা অবধি সেই সিদ্ধান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, লেবাননে যুদ্ধ পরিস্থিতির ভয়াবহতায় দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা করেছে লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস।

এ ছাড়াও বর্তমান পরিস্থিতিতে লেবানন থেকে দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে দেশটিতে আটকে পড়াদের ফেরাতে একযোগে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।  ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব এবং বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অংশগ্রহণে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের মিশন প্রধানরা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে  বলা হয়, লেবাননে আটকে পড়াদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত যে সব প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে আসতে ইচ্ছুক নয়, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র সচিব। প্রাথমিকভাবে হাজারখানেক অভিবাসী কর্মী প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, লেবানন থেকে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা যেন যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে আরেকটু উত্তরে সরে যান। আমরা আইওএমকে বলেছি, একটা ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে। তারা সেটা করবে। তবে সমস্যা হলো বৈরুত এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করা রিস্কি। সে কারণে বিকল্প পথে ফ্লাই করা যায় কি-না, সে চেষ্টাও করছি।

দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, হাজার খানেকের বেশি বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দূতাবাসের হটলাইন, হেল্পলাইন ছাড়াও লেবাননে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির মাধ্যমে এসব বাংলাদেশি দেশে ফেরার বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। লেবাননের পরিস্থিতি যত খারাপ হতে থাকবে দেশে আসতে চাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে বলে ধারণা করছেন দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা। দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা জানান, লেবাননের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক বাংলাদেশি কর্মী দেশটি ছেড়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটিতে ৭০-৮০ হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তবে তাদের বেশির ভাগই অবৈধ কর্মী। ওদিকে একদিন আগে লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের সরিয়ে নিতে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)কে অনুরোধ করেছে ঢাকা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, চ্যালেঞ্জ হলো বৈরুতের বিমানবন্দর বর্তমানে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনিরাপদ। আমরা বাংলাদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে বিকল্প স্থান খোঁজার পরামর্শ দিয়েছি। বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে অবনতিশীল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী নিরাপত্তার সন্ধানে দক্ষিণ লেবানন থেকে বৈরুতে পালিয়েছে।

 লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য প্রচেষ্টা সমন্বয় করছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকার কাছাকাছি হওয়ার কারণে গত সপ্তাহে অস্থায়ীভাবে দূতাবাসকে একটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। ইসরাইল বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান অভিযান শুরু করলে ২৩শে সেপ্টেম্বর লেবাননে সহিংসতা তীব্রতর হয়। এতে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার সতর্কতা জারি করার পরে দক্ষিণ লেবাননের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর অনুসারে ১,৩০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে। এটি ছিল সামপ্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভারী বোমা হামলা। গত মাসে ইসরাইল বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে সংঘাতে এ পর্যন্ত ২,০৮০ জনেরও বেশি প্রাণ গেছে এবং প্রায় ৯,৮৭০ জন আহত হয়েছেন। সহিংসতা থেকে আশ্রয়ের সন্ধানে এক লাখের বেশি মানুষ লেবানন থেকে প্রতিবেশী সিরিয়ায় পালিয়েছে। এরইমধ্যে লেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তিনি বলেছেন, লেবাননের সে যুদ্ধ গোটা পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

No comments

Powered by Blogger.