নওগাঁয় দীর্ঘ ৬ বছরেও নির্মিত হয়নি ছোট যমুনার উপর গার্ডার ব্রীজ
দীর্ঘ ৬ বছরেও নির্মিত হয়নি এলজিইডির তত্বাবধানে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নওগাঁর ছোট নদীর উপর ৮৭ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজের নির্মান কাজ। এই প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় নদীর দুই পার্শ্বের মানুষ চলাচল ও পারাপার করতে পারছেনা। মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অফিসের উদাসীনতার, আর ঠিকাদারের অবহেলার কারনে এই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা আরও জানায়, এই প্রকল্পে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে দিনরাত কাজ করছে। তড়িঘড়ি করে কাজ করতে ইতিমধ্যেই ষ্টীল সাটারিং ব্যবহার না করায় বাঁশের খুটি দিয়ে কাজ করতে গিয়ে বীমটি দেবে গিয়ে বাকা হয়ে গেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে অবিলম্বে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে দূর্ভোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন। সুত্রে জানা গেছে, নওগাঁ শহরের পাশ দিয়ে ছোট যমুনা নদীর উপর দক্ষিন কালীতলা দক্ষিন সুলতানপুর রাস্তায় গাবতলী নামক স্থানে এলজিইডির তত্বাবধানে ৮৭ মিটার আর,সি,সি গার্ডার ব্রীজ নির্মানের জন্য গত ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে দরপ্রত্র আহবান করে। দরপ্রত্র অনুযায়ী সিলেটের শিবগঞ্জের মেসার্স জামিলা এনটারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩৯ টাকার কাজ পায়। ২৮ ডিসেম্বর কার্যাদেশ প্রদান করে দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে এই মর্মে শর্ত থাকে। স্থান পরিবর্তন, ডিজাইন সংশোধন এই অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারে নাই। কায়াদেশ পাওয়ার প্রায় বছর খানেক পর কাজ শুরু করে।
ক্জা শুরু করলেও ঠিকাদারের অবহেলা আর অফিসের উদাসিনতায় কাজ চলে ধীর গতিতে। দীর্ঘ ৬ বছরেও উক্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারে নাই। ব্রীজের কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ ভাগ। ব্রীজের দুই পার্শ্বের সংযোগ সড়কের, সিসিব্লকসহ অন্যান্য কাজ এখনও করতে পারে নাই। এই প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় নদীর দুই ধারের মানুষরা ডিঙ্গী নৌকায় কোন রকমে পরাপার করতে হচ্ছে। ব্রীজের ও দুই ধারের সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য কাজ শেষ না হওয়ায় দুই পারের মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অফিসের সাথে ঠিকাদারের যোগসাজসে ওই ব্রীজ ছিল পিসি গার্ডার, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ডিজাইন সংশোধন করে সেই ব্রীজটি গার্ডার ব্রীজ করে নেয়। ওই ব্রীজে প্রেড রডের পরিবর্তে নন গ্রেডেড রড ব্যবহার, (যা আঞ্চলিক ভাষায় সেমি অটো রড), ওপিসি সিমেন্ট ব্যবহারের কথা থাকলেরও পিসিসি সিমেন্ট ব্যবহার, (ওপিসি সিম-১, পিসিসি সিম-২) ঢালায়ের ক্ষেত্রে ডোমার বালি দিয়ে ঢালায় করতে হবে তাতে বালির এফ থাকতে হবে ২.৮ এফ,এম, কিন্তু সেখানে লোকাল বালি দিয়ে তার সঙ্গে সামান্য পরিমান ডোমার বালি দিয়ে ঢালায় করছে। এছাড়াও কার্যাদেশ অনুযায়ী ব্রীজে প্রায় সম্পূর্ন ষ্টীল সাটারিং দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও ষ্টীল সাটারিং ব্যবহার না করে কাঠ ও বাশ সাটারিং ব্যবহার করছে। এতে করে ব্রীজের একটি অংশ ঢালায় করতে গিয়ে ব্রীজের পশ্চিম দিকের বাম পার্শ্বে দেবে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীরা আরও জানায়, অফিসের উদাসীনতা আর ঠিকাদারের অবহেলার কারনে এই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে কার্যাদেশ অনুযায়ী দ্রুত কাজ শেষ করে দূর্ভোগের হাত থেকে রক্ষার। এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োজিত প্রতিনিধি রিপন জানান, অফিসের ডিজাইন ভুলের এবং স্থান নির্ধারনের জটিলতার কারনে এবং নিজে সড়ক দুর্ঘটনার কারনে কাজটি করতে বিলম্ব হয়েছে। এ ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এ,কে,এম বাদশা মিয়া কাজটি দেরী হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, ঠিকাদারের প্রতিনিধি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার কারনে কাজটি করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে, আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হবে। তাহলে এই এলাকার মানুষ কৃষি পন্যসহ যাতায়াতের সুবিধা পাবে। উক্ত প্রকল্পে নিন্ম মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কথা তিনি অস্বীকার করেন। কাজটি দ্রুত শেষ হলে শহরের যানজট হ্রাস পাবে। দুই ধারের মানুষ উপকৃত হবে। ধান চাল পন্যসহ অতি অল্প সময়েই কম থরচে তাদের উৎপাদিত ফসল একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাবে। ফসলের নায্য মুল্য পাবে। এই এলাকার মানুষের একটাই দাবী দ্রুত কাজটি শেষ করার।
No comments