ফের সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত লন্ডন
ম্যানচেস্টারে হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন। শনিবার সপ্তাহিক ছুটির রাতে লন্ডন ব্রিজে ভিড়ের মধ্যে সন্ত্রাসীরা ভ্যান চালিয়ে দিয়ে এবং ছুরি নিয়ে নৃশংস এ হামলা চালায়। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। আহত হয়েছেন ৫০ জন। ব্রিটেনে নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে এ হামলার ঘটনায় সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত ১০টার দিকে সেন্ট্রাল লন্ডনের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা লন্ডন ব্রিজের ওপর এবং পার্শ্ববর্তী বরো মার্কেটে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা একটি সাদা ভ্যানে করে ঘটনাস্থলে আসে। লন্ডন ব্রিজের ওপর দিয়ে ভ্যানটি চালিয়ে যাওয়ার সময় তা পথচারীদের ওপর উঠিয়ে দেয় হামলাকারীরা। একপর্যায়ে তা ফুটওয়েতে একটি চার্চে আঘাত করে আটকে যায়। এ সময় ছুরি হাতে ভ্যান থেকে তিন হামলাকারী নেমে এসে সেখানে অবস্থানরত লোকজনের ওপর ছুরিকাঘাত করতে থাকে। একের পর এক ছুরিকাঘাতে পথচারীরা দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। পরে কয়েকশ’ মিটার দূরে বরো মার্কেটেও সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। মার্কেটে তখন লোকে লোকারণ্য ছিল। টের পেয়ে মার্কেটের লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে।
ঘটনার আট মিনিটের মাথায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এলাকাটি ঘিরে ফেলে। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী সেন্ট টমার্স হাসপাতালসহ পার্শ্ববর্তী আরও ছয়টি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত ৫০ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের প্রতিহত করতে তাৎক্ষণিক গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে তিন হামলাকারী নিহত হয়। এ সময় ট্রান্সপোর্ট পুলিশের এক সদস্যও গুরুতর আহত হন। তার মাথা, মুখ এবং পায়ে অনেক আঘাত রয়েছে। হামলাকারীর শরীর থেকে সুইসাইডভেস্টসদৃশ বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশ জানায়, তা আসলে বোমা ছিল না। হামলার পরপরই লন্ডন ব্রিজ ও ব্রিজ রেলস্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় বিবিসির সাংবাদিক হলি জোন্স লন্ডন ব্রিজে ছিলেন। তিনি জানান, হামলাকারীদের মধ্যে একজন পুরুষ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়িটি চালাচ্ছিল। তার ডান দিক দিয়ে গাড়িটি ঘুরে গেল এবং পাঁচ থেকে ছয়জনকে আঘাত করল। ওই গাড়িটি বরো মার্কেটের দিকে চলে গেল এবং সেখানে কজন মানুষের ওপর ছুরি দিয়ে হামলা চালাল হামলাকারীরা। বাংলাদেশ সময় রোববার রাত সাড়ে আটটায় এ রিপোর্ট লেখার সময় হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। টেমস ব্রিজের দক্ষিণ দিকে ওই এলাকাটি রেস্তোরাঁ, পানশালা, নাইট ক্লাব ও পাবের জন্য পরিচিত। সেন্ট্রাল লন্ডনের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় লন্ডন ব্রিজ এলাকাটি বাস, ট্রেন, পাতাল রেলওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশনগুলো সেখানে অবস্থিত। সেখান থেকেই ব্রিটেনের অন্যান্য শহর বন্দরে যাওয়ার অন্যতম একটি ট্রেন স্টেশন রয়েছে; যা লন্ডন ব্রিজ ষ্টেশন নামে বিখ্যাত। এছাড়া পাতাল রেলওয়ের ব্যস্ত জংশন এই লন্ডন ব্রিজ এলাকায়। এই স্টেশনটি ব্যবহার করে রোজ লাখ লাখ মানুষ লন্ডনের অন্যান্য শহরে যাতায়াত করে থাকেন। দেশের অন্যতম বৃহৎ বাস স্টেশন এই লন্ডন ব্রিজেই অবস্থিত। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক সমাগম ঘটে এখানে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির রাত হওয়ায় হামলার সময় বেশ ভিড় ছিল সেখানে।
১২ জন গে ফতার : লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পূর্ব লন্ডনের একটি ফ্ল্যাট থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন হামলাকারীর মধ্যে একজনের বার্কিং এলাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। বার্কিংয়ের আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলছিল। লন্ডন মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, তারা লন্ডন বি জ ও বরো মার্কেটের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বিবেচনা করছে। লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে সহস াধিক অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। হতাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট, পার্লামেন্ট ভবন, রানী এলিজাবেথের রাজপ্রাসাদসহ ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হয়েছে। নির্বাচন সময়মতোই হবে- তেরেসা মে : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে এই হামলাকে ‘ভয়ঙ্কর ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নির্বাচনী প্রচার স্থগিত রেখে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা বিষয়ক কোবরা কমিটির জরুরি বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে ডাউনিং স্ট্রিটে এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছেন, যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার পরও জাতীয় নির্বাচন নির্ধারিত ৮ জুনই অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তিনি বলেন, ‘নৃশংসতাকে কখনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটাতে দেয়া হবে না।’ তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, সোমবার থেকে আবারও পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। নির্বাচনের চার দিন আগে এ হামলার পর যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনী প্রচারে সাময়িক বিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু মে জানিয়ে দিয়েছেন, হামলা সত্ত্বেও নির্বাচন সময়মতোই হবে। তিনি নিরীহ, নিরস্ত্র জনতার ওপর হামলার ঘটনারও নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে।’ প্রধান বিরোধী দল লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেন, হামলার খবরে তিনি ‘খুবই আহত হয়েছেন এবং আতঙ্কিত বোধ করছেন।’ অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সবাইকে শান্ত ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। ম্যানচেস্টারে হামলার রেশ না কাটতেই নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে আবারও রাজধানী লন্ডনে রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হামলা যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। তিন মাসেরও কম সময়ে যুক্তরাজ্যে এটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলা। মার্চে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে হামলার ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়। মে মাসে ম্যানচেষ্টারে একটি সঙ্গীত অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় লিবিয়ান বংশো™ূ¢ত সালমান আবেদি নামে এক তরুণ। এতে ২২ জন নিহত ও ৫৯ জন আহত হন। এরপর থেকেই ব্রিটেনজুড়ে নিরাপত্তা কড়াকড়ি করা হয়।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা : লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে হামলার নিন্দা জানান এবং হতাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদন প্রকাশ করেন। তিনি জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে ইউরোপীয় কো-অপারেশনের কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জার্মান প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বিবৃতিতে বলেন, লন্ডন ব্রিজে পাশবিক ও নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববাসী আজ একজোট। পোপ ফ্রান্সিস হামলায় হতাহতদের জন্য প্রার্থনার আহবান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সমবেদনা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানান।
বিশ্বনেতাদের নিন্দা : লন্ডন ব্রিজে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে হামলার নিন্দা জানান এবং হতাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদন প্রকাশ করেন। তিনি জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে ইউরোপীয় কো-অপারেশনের কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জার্মান প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বিবৃতিতে বলেন, লন্ডন ব্রিজে পাশবিক ও নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববাসী আজ একজোট। পোপ ফ্রান্সিস হামলায় হতাহতদের জন্য প্রার্থনার আহবান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সমবেদনা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানান।
No comments