আদালতে তথ্য গোপন করে নজরুল একাডেমি গিলে খাওয়ার চেষ্টা by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
জিন্দাবাজার,
সিলেট নগরীর ব্যস্ততম এলাকা। ব্যস্ত সে এলাকার একেবারে মধ্যস্থলে মূল
রাস্তার লাগোয়া একখণ্ড ভূমি। শ্রীশ্রী গিরিধারী জিউ দেবতার পক্ষে সেবায়েত
কিরনবিহারী দাস ও কমলকান্ত দাসের নামে রেকর্ডভুক্ত প্রায় ৬ শতক (.০৫৮৭ একর)
আয়তনের ভূমিটি বাড়িসহ ১৯৪৯ সালে ১৩ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার হুকুম দখল
করে। বাড়িটির পরিচিতি হয় ‘আরসি ২১বি/৪৮-৪৯’। তারপর থেকে এ বাড়িটি সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত
এভাবেই চলছিল। পরে বাড়িটি ভাগাভাগি করে বরাদ্দ পায় নজরুল একাডেমি ও মোস্তফা
মানবকল্যাণ কুতুবমহল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
এমন অবস্থায় কিরনবিহারী দাসের উত্তরাধিকারী দাবি করে ২০০৩ সালের ৩রা মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে জায়গাটি অবমুক্তির জন্য আবেদন করেন কপিল দাস। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে ১লা এপ্রিল ২০০৩ সালে এক পত্রে প্রতিবেদন চাওয়া হয় সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে। ২৯শে এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেন জেলা প্রশাসক মো. আবুল হোসেন। প্রতিবেদনে তিনি বাড়িটি আবেদনকারীদের পক্ষে অবমুক্ত করার সুপারিশ করেন। এ প্রতিবেদনের আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ৫ই মে জায়গাটি অবমুক্ত করার নির্দেশ দেয়। শুরু হয় অবমুক্তির প্রক্রিয়া। জায়গা বুঝে পাওয়ার আগেই ২০০৩ সালের ৩রা জুন জায়গাটিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি সম্পাদন করেন কিরনবিহারী দাস ও কমলকান্ত দাসের উত্তরাধিকারী দাবিদাররা। তখনই দৃশ্যপটে আসেন জামায়াত নেতারা। নগরীর লামাবাজার বিলপাড়ের ফয়েজউদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর গ্রামে সিরাজুল ইসলাম, সিলেট নগরীর কুশিঘাটের সেলিম আহমদ রনিসহ (জামায়াতের সমর্থন নিয়ে তিনি এখন সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর) ১০ জনের চুক্তি হয় উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে। চুক্তিতে বলা হয়, দেবতার সেবা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সেবায়েতের উত্তরাধিকারীরা জায়গাটিতে ১০ অংশীদারের সঙ্গে মিলে একটি বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেবতার সম্পত্তি রক্ষায় হঠাৎ করে উদ্যোগী হলেও কিরনবিহারী দাস ও কমলকান্ত দাসের উত্তরাধিকারীদের কেউই এত দিন পর্যন্ত সেবায়েত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হননি বা সেবায়েত হওয়ার জন্য আবেদনও করেননি। অথচ বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ঠিকই তারা উদ্যোগী হন।
২০০৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আবুল হোসেন অবমুক্তির সুপারিশ করলেও পরবর্তী জেলা প্রশাসক মো. হারুন চৌধুরী দেবোত্তর এ সম্পত্তি রক্ষার্থে উদ্যোগী হন। দাবিদার কর্তৃক যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় তিনি অবমুক্তির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান মন্ত্রণালয়কে। ২০০৫ সালের ২৩শে মার্চ লিখিত পত্রে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন, সেবায়েতের উত্তরাধিকারীদের নামে ভূমি অবমুক্ত করার আইনগত সুযোগ নেই। তা ছাড়া উত্তরাধিকারীরা নিজেদের উত্তরাধিকার প্রমাণেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই বক্তব্যের পুনরোল্লেখ করেন পরবর্তী জেলা প্রশাসক এস এম ফয়সল আলমও। ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ২০০৫ সালের ৯ই মের চিঠিতে তিনিও অবমুক্তির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান। একই বছরের ২১শে আগস্ট এক পত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় অবমুক্তির আদেশ প্রত্যাহার করে।
মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের চিঠি চালাচালির মধ্যবর্তী সময়ে ২০০৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি কপিল দাস বাড়ির দখল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট (নং-১১৭৮) করেন। সে রিটের শুনানি হয় ওই বছরেরই ১৬ই নভেম্বর। শুনানি শেষে ৪ঠা ডিসেম্বর বিচারপতি আবদুল মতিন ও রেজাউল হকের বেঞ্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জায়গা অবমুক্তির আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন এবং এত দিন পর্যন্ত আদেশ বাস্তবায়ন না করায় সংশ্লিষ্টদের তিরস্কারও করেন। তবে ইতিমধ্যে যে মন্ত্রণালয়ের আদেশ বাতিল হয়েছে তা রিটকারীরা আদালতের কাছে গোপন রাখেন। রহস্যজনক কারণে সরকারপক্ষের কৌঁসুলিরাও বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে ব্যর্থ হন।
২০০৭ সালে দেবোত্তর এ সম্পত্তি রক্ষায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিল (৩৭৮/২০০৭) করা হয়। ২০০৭ সালের ৪ঠা এপ্রিল লিভ টু আপিলের আবেদন হয়ে গেলে সরকারপক্ষ থেকে রিভিউ আবেদন (১৩৯/২০০৮) করা হয়। ২০০৮ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেন সে রিভিউ আবেদন। সেবায়েতদের উত্তরাধিকারী বরাবরে ভূমি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। এখন চলছে তারই প্রক্রিয়া। তবে জেলা প্রশাসন তাদের এ দায়িত্ব যেন চাপিয়ে দিতে চাইছে জায়গায় থাকা ‘ভাড়াটে’দেরই ওপর। চলতি বছরের ২৫শে মার্চ এক চিঠিতে জেলা প্রশাসক ১০ দিনের মধ্যে বাড়িটি উত্তরাধিকারীদের বরাবরে বুঝিয়ে দিতে বলেন, সেখানে অবস্থিত নজরুল একাডেমি ও মোস্তফা কল্যাণ কুতুবমহলকে। চিঠি পাওয়ার পর থেকে ভূমি রক্ষায় আন্দোলনে নামে নজরুল একাডেমি। তাদের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের কাছে তথ্য গোপন রেখে বাড়িটি গিলে খেতে ষড়যন্ত্র করছে একটি চক্র।
এমন অবস্থায় কিরনবিহারী দাসের উত্তরাধিকারী দাবি করে ২০০৩ সালের ৩রা মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে জায়গাটি অবমুক্তির জন্য আবেদন করেন কপিল দাস। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে ১লা এপ্রিল ২০০৩ সালে এক পত্রে প্রতিবেদন চাওয়া হয় সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে। ২৯শে এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেন জেলা প্রশাসক মো. আবুল হোসেন। প্রতিবেদনে তিনি বাড়িটি আবেদনকারীদের পক্ষে অবমুক্ত করার সুপারিশ করেন। এ প্রতিবেদনের আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ৫ই মে জায়গাটি অবমুক্ত করার নির্দেশ দেয়। শুরু হয় অবমুক্তির প্রক্রিয়া। জায়গা বুঝে পাওয়ার আগেই ২০০৩ সালের ৩রা জুন জায়গাটিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে চুক্তি সম্পাদন করেন কিরনবিহারী দাস ও কমলকান্ত দাসের উত্তরাধিকারী দাবিদাররা। তখনই দৃশ্যপটে আসেন জামায়াত নেতারা। নগরীর লামাবাজার বিলপাড়ের ফয়েজউদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর গ্রামে সিরাজুল ইসলাম, সিলেট নগরীর কুশিঘাটের সেলিম আহমদ রনিসহ (জামায়াতের সমর্থন নিয়ে তিনি এখন সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর) ১০ জনের চুক্তি হয় উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে। চুক্তিতে বলা হয়, দেবতার সেবা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সেবায়েতের উত্তরাধিকারীরা জায়গাটিতে ১০ অংশীদারের সঙ্গে মিলে একটি বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেবতার সম্পত্তি রক্ষায় হঠাৎ করে উদ্যোগী হলেও কিরনবিহারী দাস ও কমলকান্ত দাসের উত্তরাধিকারীদের কেউই এত দিন পর্যন্ত সেবায়েত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হননি বা সেবায়েত হওয়ার জন্য আবেদনও করেননি। অথচ বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ঠিকই তারা উদ্যোগী হন।
২০০৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আবুল হোসেন অবমুক্তির সুপারিশ করলেও পরবর্তী জেলা প্রশাসক মো. হারুন চৌধুরী দেবোত্তর এ সম্পত্তি রক্ষার্থে উদ্যোগী হন। দাবিদার কর্তৃক যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় তিনি অবমুক্তির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান মন্ত্রণালয়কে। ২০০৫ সালের ২৩শে মার্চ লিখিত পত্রে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন, সেবায়েতের উত্তরাধিকারীদের নামে ভূমি অবমুক্ত করার আইনগত সুযোগ নেই। তা ছাড়া উত্তরাধিকারীরা নিজেদের উত্তরাধিকার প্রমাণেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই বক্তব্যের পুনরোল্লেখ করেন পরবর্তী জেলা প্রশাসক এস এম ফয়সল আলমও। ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ২০০৫ সালের ৯ই মের চিঠিতে তিনিও অবমুক্তির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানান। একই বছরের ২১শে আগস্ট এক পত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় অবমুক্তির আদেশ প্রত্যাহার করে।
মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের চিঠি চালাচালির মধ্যবর্তী সময়ে ২০০৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি কপিল দাস বাড়ির দখল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট (নং-১১৭৮) করেন। সে রিটের শুনানি হয় ওই বছরেরই ১৬ই নভেম্বর। শুনানি শেষে ৪ঠা ডিসেম্বর বিচারপতি আবদুল মতিন ও রেজাউল হকের বেঞ্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জায়গা অবমুক্তির আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন এবং এত দিন পর্যন্ত আদেশ বাস্তবায়ন না করায় সংশ্লিষ্টদের তিরস্কারও করেন। তবে ইতিমধ্যে যে মন্ত্রণালয়ের আদেশ বাতিল হয়েছে তা রিটকারীরা আদালতের কাছে গোপন রাখেন। রহস্যজনক কারণে সরকারপক্ষের কৌঁসুলিরাও বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে ব্যর্থ হন।
২০০৭ সালে দেবোত্তর এ সম্পত্তি রক্ষায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিল (৩৭৮/২০০৭) করা হয়। ২০০৭ সালের ৪ঠা এপ্রিল লিভ টু আপিলের আবেদন হয়ে গেলে সরকারপক্ষ থেকে রিভিউ আবেদন (১৩৯/২০০৮) করা হয়। ২০০৮ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেন সে রিভিউ আবেদন। সেবায়েতদের উত্তরাধিকারী বরাবরে ভূমি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। এখন চলছে তারই প্রক্রিয়া। তবে জেলা প্রশাসন তাদের এ দায়িত্ব যেন চাপিয়ে দিতে চাইছে জায়গায় থাকা ‘ভাড়াটে’দেরই ওপর। চলতি বছরের ২৫শে মার্চ এক চিঠিতে জেলা প্রশাসক ১০ দিনের মধ্যে বাড়িটি উত্তরাধিকারীদের বরাবরে বুঝিয়ে দিতে বলেন, সেখানে অবস্থিত নজরুল একাডেমি ও মোস্তফা কল্যাণ কুতুবমহলকে। চিঠি পাওয়ার পর থেকে ভূমি রক্ষায় আন্দোলনে নামে নজরুল একাডেমি। তাদের অভিযোগ, উচ্চ আদালতের কাছে তথ্য গোপন রেখে বাড়িটি গিলে খেতে ষড়যন্ত্র করছে একটি চক্র।
No comments