ঘোষণার অপেক্ষায় এনডিএর ভাঙন
অত্যাশ্চর্য কিছু না ঘটলে আজ রোববারই এনডিএ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে জনতা দল (সংযুক্ত)। আর সেই সঙ্গে ভারতের জাতীয়
রাজনীতিতে খুলে যাবে রাজনৈতিক মেরুকরণের এক নতুন আঙ্গিক। গতকাল শনিবার
বিহারের পাটনায় দলের কোর কমিটির বৈঠক শেষে জনতা দলের (সংযুক্ত)
সর্বভারতীয় মুখপাত্র শিবানন্দ তিওয়ারি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, জোট
ত্যাগের ঘোষণা এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার। বিজেপি এমন একজনের ওপর দলের
দায়িত্ব তুলে দিয়েছে, যাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আপত্তি আছে, যিনি উদ্ধত ও
বিভাজনের রাজনীতি করেন। তিওয়ারি আরও বলেন, ‘আমরা বিজেপির কাছে নরেন্দ্র
মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে না—এই কথা প্রকাশ্যে ঘোষণার দাবি করেছিলাম।
বিজেপি তা না করে আমাদের জোট ত্যাগে বাধ্য করছে।’ শুক্রবারই জনতা দলের
(সংযুক্ত) নেতা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার সব কর্মসূচি বাতিল করে
পাটনা চলে আসেন। গতকাল তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি এবং বিজেপির অন্য
নেতাদের বৈঠকে ডাকেন। কিন্তু বিজেপির নেতারা সেই বৈঠকে হাজির হননি, বরং
দলটির রাজ্য নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, নীতিশেরা তাঁদের দল ভাঙতে উঠেপড়ে
লেগেছেন। এদিকে বিকেলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বৈঠকে
বসে। জনতা দলের ওপর তারা অন্যভাবে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। রাজ্যসভার
সদস্য রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘জনতা দলের (সংযুক্ত) নেতাদের এটা বোঝা
প্রয়োজন যে রাজ্যের মানুষ দুই দলের জোটকেই ভোট দিয়েছিল, শুধু বিজেপিকে
নয়। আমরা তাই চাই এই জোট বজায় থাকুক।’ অর্থাৎ, বিজেপি এটা বোঝাতে চাইছে
যে নীতিশেরা জোট ছাড়লে যেন বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে ভোটে যান। নতুন
করে জনগণের রায় নেওয়ার কোনো বাসনা অবশ্য নীতিশদের নেই। ২৪৩ সদস্যের
বিধানসভায় তাঁদের সদস্যই ১১৮। অর্থাৎ, গরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন মাত্র চারটি
ভোট। সেই সংখ্যার জোগানে নির্দলীয়রা আছেন। বিজেপির ঘোরতর শত্রু কংগ্রেস ও
লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলও যে তাঁকে এই মুহূর্তে বিপাকে ফেলবে,
তেমন মনে করার কোনো কারণ নেই। বিহার-সংকটের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের জাতীয়
রাজনীতির অন্য একটি দিকের উন্মোচন হতে চলেছে। একদিকে তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরির
উদ্যোগ, যাতে বামপন্থীরা আগ্রহী; অন্যদিকে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামপন্থীদের
বাইরে রেখে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের
তোড়জোড়। কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাদ দিয়ে বিকল্প সরকার যে ভারতে হয়নি তা
নয়, কিন্তু সেসব সরকার স্থায়ী হয়নি। পাশাপাশি, মোদিকে গুরুত্ব দিয়ে
মরিয়া বিজেপি রাজনীতিতে অন্য মেরুকরণের সম্ভাবনা সৃষ্টিতে আগ্রহী।
No comments