'সেনা মোতায়েন নিয়ে অহেতুক ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে'

দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার বিতর্কের সমালোচনা করে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন,
'নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে অহেতুক ধূম্রজাল ও জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'বিরোধী দল যদি সেনা মোতায়েন চায় তবে তা মোতায়েনে বাধা কোথায়? এতে করে কি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় হবে? নাকি নির্বাচনী আইনে কোনো বাধা আছে? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হতে কোনো বাধা আসবে কি?' তিনি আরো বলেন, 'নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন বিষয়ে বিরোধী দলকে আরো সচেতন হতে হবে। মনে চাইলেই একটা দাবি করা চলবে না।' তিনি বলেন, 'কেন, নারায়ণগঞ্জে কি সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি? তার পরও আমরা দেখছি, সরকারি দলের এমপি-মন্ত্রীরা যেভাবে কথা বলেন, নির্বাচন কমিশনও একই ভাষায় কথা বলে। এটা হওয়া ঠিক নয়। কারণ এ নির্বাচন কমিশন যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে চায়, তাহলে তাদের এখনই নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।'
শুক্রবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলোচনাভিত্তিক টক শো আওয়ার ডেমোক্রেসি অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জামিল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ। আলোচকরা সিটি নির্বাচন ও জাতির প্রত্যাশা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, 'যদিও এ সিটি নির্বাচনটি কোনো দলীয় ব্যানারে হচ্ছে না, তার পরও এ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?'
জবাবে ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, 'এ সিটি নির্বাচনের রিফ্লেকশন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। তাই এ নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য এসিড টেস্ট।' তিনি বলেন, 'বর্তমান নির্বাচন কমিশন এর আগে এত বড় কোনো নির্বাচন করেনি। তারা হয়তো সুযোগ পায়নি। তবে তাদের জন্য এটিই বড় নির্বাচন। তাই তাদের এ নির্বাচনে দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'আজ থেকে সাত কি আট মাস পর জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বা হওয়ার কথা।' তিনি বলেন, 'এমনিতে স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এ চারটি সিটি নির্বাচন দলের ভিত্তিতে না হলেও দলগুলো তাদের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছে।'
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'একসময় ছিল নির্বাচন মানে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, মিডিয়া ক্যু, সন্ত্রাস-রাহাজানি। এখন আর সেটা নেই। এর কারণ মিডিয়ার প্রভাব। মিডিয়ার প্রভাবের কারণে কোনো প্রার্থী ইচ্ছে করলেই নির্বাচনী আচরণবিধিবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করতে পারছেন না। তাঁদের সব কিছুই মিডিয়ার আওতায় থাকে। অনেক সময় নির্বাচনে প্রার্থীদের নয়, জনগণ মিডিয়ার পর্যালোচনা শুনে তা বিশ্বাস করে।' তিনি বলেন, 'মিডিয়ার কারণে গণতন্ত্রের পক্ষে সামাজিক শক্তি তৈরি হয়েছে। তাই এ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের জন্য ব্যারোমিটার।'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, 'বিরোধী দলের প্রার্থীরা যেখানে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলছেন, সেখানে সরকারি দলের এমপি-মন্ত্রীদের মতো নির্বাচন কমিশন বলছে, সেনা মোতায়েনের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কেন?'
জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'প্রার্থীদের একজন চাইলে তো আরেকজন চাইছেন না। এখন সবাই না চাইলে তো এ রকম মতভেদ তৈরি হতেই পারে। বরিশালে নির্বাচনের আগের রাতেও প্রার্থীদের বিলবোর্ড সরানো হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট করেও তেমন ফল হয়নি। এটা ভালো দিক না।' তিনি বলেন, এসব বিষয় নির্বাচন কমিশনকে নজরে এনে আমলে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত হওয়া চলবে না। কারণ তারা যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে চায়, তবে এখনই তাদের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক ব্রতীর নির্বাহী পরিচালকের কাছে জানতে চান, 'আপনার সংগঠনের প্রতিনিধিরা তো সব সিটিতেই ঘুরেছেন। কী রিপোর্ট দিলেন?'
জবাবে ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, 'আমাদের প্রতিনিধিদের রিপোর্ট অনুযায়ী সব জায়গাতেই নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। কোথাও কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে খুলনায় নির্র্বাচনের আগের রাতে কিছু মানুষ প্রচারে নেমেছে। তারা ধর্মের নামে ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।'

No comments

Powered by Blogger.