মুদ্রাব্যবস্থা-ঋণ নিয়ে ঘি খাওয়া বন্ধ করতে হবে by ফারুক মঈনউদ্দীন
দেশে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর বছরে বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে প্রথা মাফিক সালতামামি হয়। বলা বাহুল্য, আমাদের মতো দেশে ক্ষমতা গ্রহণের পরের প্রতিশ্রুতি এবং অতি উৎসাহী পরিকল্পনার মুখোমুখি সেই বার্ষিক প্রোগ্রেস রিপোর্ট প্রায় সব ক্ষেত্রেই অধোমুখী হয়, প্রবৃদ্ধির চড়াইতে পাওয়া যায় মুষ্টিমেয় দু-একটি খাতকে। দেশে বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে অল্প কয়েক দিন পর। ফলে এ আবার একটা সালতামামির
প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন দিকে। তবে এসব মূল্যায়ন-প্রক্রিয়ায় সরকার এবং বিরোধী দল থাকে দুই চূড়ান্ত বিপরীতে। বিরোধী দল যেমন অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে ‘ভেঙে পড়া’র পদধ্বনি পায়, অস্বীকার করে যায় সরকারের সব অর্জন কিংবা সাফল্যকে, তেমনি সরকারও কোনো কিছুতে কোনো সমস্যা বা সংকট দেখতে পায় না, উপেক্ষা করে শুভানুধ্যায়ী বিজ্ঞজনের মতামত।
সরকারের তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি দেখতে চাইলে দেখা যায় সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে অধোগতি শুরু হয়েছিল, ২০০৯ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশে, ২০১১ অর্থবছরে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। বাম্পার ফলনের কারণে কৃষি খাতের অবদানের সঙ্গে শিল্প ও নির্মাণ খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধিই মূলত জিডিপিকে ঊর্ধ্বমুখী হতে সক্ষম করেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশক, সেচ এবং অন্যান্য উপকরণের সঠিক সরবরাহের কারণে কৃষি খাতে শস্যোৎপাদন ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি ছাড়াও মূলত বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প খাতের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে উল্লেখযোগ্য হারে। শিল্প খাতের এই সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রপ্তানি খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১০ অর্থবছরের ৭ শতাংশের বিপরীতে ২০১১-তে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্য, চামড়া এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্লেষকদের।
২০১১ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর এত সাফল্যের পরও দেশের অর্থনীতি নিয়ে সবার এত উৎকণ্ঠার কারণ কী? ওপরে বর্ণিত সরকারের এমন বহু সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান হার, বার্ষিক হিসাবে যা দুই অঙ্কের ঘর পেরিয়ে বর্তমানে প্রায় ১২ শতাংশ, অথচ গত বছরের নভেম্বরে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। মূলত খাদ্য মূল্যস্ফীতিই হবে সরকারের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সব শ্রেণীর মানুষ এবং দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর আঘাতটা লাগে সবচেয়ে বেশি। সাধারণ ভোক্তা সূচক অনুুযায়ী মূল্যস্ফীতির হার বিগত এক দশকের তুলনায় এখন সর্বোচ্চ। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্তর একপর্যায়ে সহনশীল থাকলেও শেষপর্যন্ত মূল্যস্ফীতির চড়াইতে শামিল হয়েছে। এতে করে ক্রমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেমন আমাদের অর্থনীতিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির জন্ম দিয়েছে, তেমনি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সংগতি রেখে এবং দাতাগোষ্ঠীর চাপে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে দফায় দফায় সরকারি ভর্তুকি কমানোর ফলে তেলের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে প্রায় সব সেবা ও পণ্যের। ২০১১ সালে চার দফায় বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই হিসাবে এই মূল্যস্ফীতি ব্যয়বৃদ্ধিজনিত হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চাহিদাজাত মূল্যস্ফীতিও ঘটেছে। যেমন দেখা গেছে আবাসন ও ভূসম্পত্তির ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল বাজারে ঋণ ও অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী সময়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ হ্রাস করার চেষ্টা করলেও ব্যয়বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতির কারণে তার কোনো সুফল অনুভব করা যায়নি। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের সকোচনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ২০১১ সালে ভারত ও চীন—এই দুই দৈত্যাকার অর্থনীতিতেও সেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা সরবরাহ হ্রাস করার এই প্রয়াসের পাশাপাশি প্রায় একই সময় শেয়ারবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরার কারণে দেশের শেয়ারবাজার হোঁচট খায়। তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দোষারোপ করলেও প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে একটা অতিমূল্যায়িত বাজারের পতন ছিল অবশ্যম্ভাবী। ব্যাংকগুলোর রাশ টেনে না ধরলেও এটি ঘটত। দ্বিতীয়ত, একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ছাড়া উপায়ও ছিল না।
সরকারের তৃতীয় বছরের শুরু থেকে দেশের অর্থনীতিতে আরও যে বড় আন্দোলিত ঘটনাটি ঘটে সেটি হচ্ছে শেয়ারবাজারের ধস। মূলত দ্বিতীয় বছরের শেষ থেকেই আকাশছোঁয়া উচ্চতা থেকে বাজারের পতন শুরু হয় এবং দরপতনের মাত্রা ১৯৯৬-এর ধসের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০১০-র ১৯ ডিসেম্বর যে দরপতন ঘটে, সেটা ছিল ডিএসইর ইতিহাসে একদিনের পতনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সহিংস বিক্ষোভে অবতীর্ণ হলে তাতে রাজনৈতিক ইন্ধন জোগানোর প্রয়াস লক্ষ করা যায়। ফলে সরকার যথারীতি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর দেড় বছরের মতো সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত বিক্ষোভের মুখে সরকার একটা বিশাল অঙ্কের তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণাকে সত্য প্রমাণ করে সেই উদ্যোগ হালে পানি পায়নি।
সবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত একটা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই প্যাকেজের মধ্যে আছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের অর্জিত লভ্যাংশ থেকে প্রচলিত হারে ১০ শতাংশ হারে আয়কর প্রত্যাহার, শেয়ারবাজারে বিনিয়োজিত অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলা ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে শেয়ারবাজারে একক গ্রহীতার কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সীমাতিরিক্ত ঋণসীমার মধ্যে নামিয়ে আনার সময়সীমা ২০১২-র পরিবর্তে ২০১৩-র শেষ পর্যন্ত বর্ধিতকরণ, কোনো কোম্পানিতে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি মূলধন (ইকুইটি) বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে সেই ব্যাংকের বিনিয়োগ কিংবা এক্সপোজার হিসেবে গণ্য না হওয়া, ব্যাংকের নিজস্ব সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের বিনিয়োজিত মূলধন পুঁজিবাজারে সেই ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য না হওয়া ইত্যাদি। প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল প্রাপ্তির কোনো লক্ষণ এখনো বাজারে দৃশ্যমান হয়নি। বাজারে বিনিয়োগকারীদের হূত আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বর্তমান সরকারকে দুই মেয়াদে দুটো শেয়ারবাজার ধসের দায়ভার বহন করে যেতে হবে।
সরকারের বর্তমান মেয়াদে ব্যাংকিং খাতও খুব স্বস্তিতে আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এই পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি কারণ প্রধানত দায়ী। প্রথমত, ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের শেষাবধি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরাসরি এবং পরোক্ষে শেয়ারবাজারে প্রচুর লগ্নি করে বসে। পরোক্ষ লগ্নি হয়েছে ব্যাংকের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে। এই বিশাল বিনিয়োগের ফলাফল বাজারের বর্তমান অবস্থায় সহজেই অনুমেয়। দ্বিতীয়ত, বেপরোয়া ঋণ সমপ্রসারণ এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ফলে ব্যাংকগুলো যখন চরম তারল্য সংকটে পড়ে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংবিধিবব্ধ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে অর্থ ও ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। ফলে সংকুচিত হয় ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতা। তৃতীয়ত, বিশ্ববাজারে ২০০৭-২০০৮-এর ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পর আচমকা দরপতনে দেশের বড় আমদানিকারকেরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যার একটা বড় অংশ ব্যাংকের খেলাপি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণে পরিণত হয়। নানা কায়দায় সেসব ঋণকে সচল দেখানোর কারণে কাগজ-কলমের তথ্য-উপাত্তে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চতুর্থত, জাহাজভাঙাশিল্প, ইস্পাত এবং আবাসন খাতের উত্থান-পতন ব্যাংকিং খাতকে করে রেখেছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। তার ওপর বাসেল ২ বাস্তবায়নের প্রাক্কালে কিছু ব্যাংকের দুর্বল মূলধন ভিত্তি এবং পুঁজি পর্যাপ্ততার ঘাটতি আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৈরির পথে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
ব্যাংকিং খাতের এহেন পরিস্থিতিতে এই খাত থেকে সরকারের ক্রমাগত ঋণ গ্রহণের কারণে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞমহল। শুধু ঋণ গ্রহণ নয়, অর্থ মুদ্রণের মাধ্যমেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থায়ন গ্রহণ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অনুমিত ঋণের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ঋণ ইতিমধ্যে সরকার নিয়ে ফেলেছে বছরের অর্ধেক পেরোনোর আগে। এর মধ্যে বেশির ভাগই অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। সরকার হয়তো বলতেই পারে প্রকৃত প্রয়োজনেই এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। যেমন তাড়াহুড়ো করে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সরকার একধরনের দীর্ঘমেয়াদি দায়ে পড়ে গেছে। সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৩১০ কোটি ডলার, আমদানি বৃদ্ধির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ এবং রপ্তানি বৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশ কয়েকবার এক হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছিল, অথচ দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভ কখনোই এর নিচে নামেনি, এমনকি ২০১০-এর ডিসেম্বরের শেষেও ছিল এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের বেশি। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
এত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকারের বাকি মেয়াদ নিরঙ্কুশ করার জন্য ঋণ নিয়ে ঘি খাওয়া বন্ধ করতে হবে, কাটছাঁট করতে হবে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পসমূহ, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে, তার জন্য দরকার অপ্রয়োজনীয় ও বিলাস সামগ্রীর আমদানি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ। জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বহু সংশয় রয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিয়োগের বর্তমান ধারায় এই সংশয় অমূলক নয়। তবে অঙ্কের মারপ্যাঁচে লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি যদি অর্জিতও হয়, দেশের মানুষকে মূল্যস্ফীতির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে না পারলে এই প্রবৃদ্ধি একটা অর্থহীন সংখ্যা হিসেবেই থাকবে, জনগণ কিংবা সরকার কারও জন্যই মঙ্গলময় হবে না।
ফারুক মঈনউদ্দীন: লেখক ও ব্যাংকার।
fmainuddin@hotmail.com
সরকারের তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি দেখতে চাইলে দেখা যায় সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে অধোগতি শুরু হয়েছিল, ২০০৯ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশে, ২০১১ অর্থবছরে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে। বাম্পার ফলনের কারণে কৃষি খাতের অবদানের সঙ্গে শিল্প ও নির্মাণ খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধিই মূলত জিডিপিকে ঊর্ধ্বমুখী হতে সক্ষম করেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশক, সেচ এবং অন্যান্য উপকরণের সঠিক সরবরাহের কারণে কৃষি খাতে শস্যোৎপাদন ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি ছাড়াও মূলত বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প খাতের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে উল্লেখযোগ্য হারে। শিল্প খাতের এই সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রপ্তানি খাতের উচ্চ প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১০ অর্থবছরের ৭ শতাংশের বিপরীতে ২০১১-তে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক, হিমায়িত মাছ, কৃষিপণ্য, চামড়া এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশ্লেষকদের।
২০১১ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর এত সাফল্যের পরও দেশের অর্থনীতি নিয়ে সবার এত উৎকণ্ঠার কারণ কী? ওপরে বর্ণিত সরকারের এমন বহু সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান হার, বার্ষিক হিসাবে যা দুই অঙ্কের ঘর পেরিয়ে বর্তমানে প্রায় ১২ শতাংশ, অথচ গত বছরের নভেম্বরে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। মূলত খাদ্য মূল্যস্ফীতিই হবে সরকারের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সব শ্রেণীর মানুষ এবং দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর আঘাতটা লাগে সবচেয়ে বেশি। সাধারণ ভোক্তা সূচক অনুুযায়ী মূল্যস্ফীতির হার বিগত এক দশকের তুলনায় এখন সর্বোচ্চ। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্তর একপর্যায়ে সহনশীল থাকলেও শেষপর্যন্ত মূল্যস্ফীতির চড়াইতে শামিল হয়েছে। এতে করে ক্রমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেমন আমাদের অর্থনীতিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির জন্ম দিয়েছে, তেমনি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সংগতি রেখে এবং দাতাগোষ্ঠীর চাপে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে দফায় দফায় সরকারি ভর্তুকি কমানোর ফলে তেলের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে প্রায় সব সেবা ও পণ্যের। ২০১১ সালে চার দফায় বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই হিসাবে এই মূল্যস্ফীতি ব্যয়বৃদ্ধিজনিত হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চাহিদাজাত মূল্যস্ফীতিও ঘটেছে। যেমন দেখা গেছে আবাসন ও ভূসম্পত্তির ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল বাজারে ঋণ ও অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী সময়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ হ্রাস করার চেষ্টা করলেও ব্যয়বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতির কারণে তার কোনো সুফল অনুভব করা যায়নি। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের সকোচনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ২০১১ সালে ভারত ও চীন—এই দুই দৈত্যাকার অর্থনীতিতেও সেসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা সরবরাহ হ্রাস করার এই প্রয়াসের পাশাপাশি প্রায় একই সময় শেয়ারবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরার কারণে দেশের শেয়ারবাজার হোঁচট খায়। তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দোষারোপ করলেও প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে একটা অতিমূল্যায়িত বাজারের পতন ছিল অবশ্যম্ভাবী। ব্যাংকগুলোর রাশ টেনে না ধরলেও এটি ঘটত। দ্বিতীয়ত, একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ছাড়া উপায়ও ছিল না।
সরকারের তৃতীয় বছরের শুরু থেকে দেশের অর্থনীতিতে আরও যে বড় আন্দোলিত ঘটনাটি ঘটে সেটি হচ্ছে শেয়ারবাজারের ধস। মূলত দ্বিতীয় বছরের শেষ থেকেই আকাশছোঁয়া উচ্চতা থেকে বাজারের পতন শুরু হয় এবং দরপতনের মাত্রা ১৯৯৬-এর ধসের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যায়। ২০১০-র ১৯ ডিসেম্বর যে দরপতন ঘটে, সেটা ছিল ডিএসইর ইতিহাসে একদিনের পতনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সহিংস বিক্ষোভে অবতীর্ণ হলে তাতে রাজনৈতিক ইন্ধন জোগানোর প্রয়াস লক্ষ করা যায়। ফলে সরকার যথারীতি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর দেড় বছরের মতো সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত বিক্ষোভের মুখে সরকার একটা বিশাল অঙ্কের তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণাকে সত্য প্রমাণ করে সেই উদ্যোগ হালে পানি পায়নি।
সবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত একটা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই প্যাকেজের মধ্যে আছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের অর্জিত লভ্যাংশ থেকে প্রচলিত হারে ১০ শতাংশ হারে আয়কর প্রত্যাহার, শেয়ারবাজারে বিনিয়োজিত অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলা ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে শেয়ারবাজারে একক গ্রহীতার কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সীমাতিরিক্ত ঋণসীমার মধ্যে নামিয়ে আনার সময়সীমা ২০১২-র পরিবর্তে ২০১৩-র শেষ পর্যন্ত বর্ধিতকরণ, কোনো কোম্পানিতে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি মূলধন (ইকুইটি) বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে সেই ব্যাংকের বিনিয়োগ কিংবা এক্সপোজার হিসেবে গণ্য না হওয়া, ব্যাংকের নিজস্ব সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের বিনিয়োজিত মূলধন পুঁজিবাজারে সেই ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য না হওয়া ইত্যাদি। প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল প্রাপ্তির কোনো লক্ষণ এখনো বাজারে দৃশ্যমান হয়নি। বাজারে বিনিয়োগকারীদের হূত আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বর্তমান সরকারকে দুই মেয়াদে দুটো শেয়ারবাজার ধসের দায়ভার বহন করে যেতে হবে।
সরকারের বর্তমান মেয়াদে ব্যাংকিং খাতও খুব স্বস্তিতে আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এই পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি কারণ প্রধানত দায়ী। প্রথমত, ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের শেষাবধি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরাসরি এবং পরোক্ষে শেয়ারবাজারে প্রচুর লগ্নি করে বসে। পরোক্ষ লগ্নি হয়েছে ব্যাংকের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিনিয়োগের মাধ্যমে। এই বিশাল বিনিয়োগের ফলাফল বাজারের বর্তমান অবস্থায় সহজেই অনুমেয়। দ্বিতীয়ত, বেপরোয়া ঋণ সমপ্রসারণ এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ফলে ব্যাংকগুলো যখন চরম তারল্য সংকটে পড়ে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংবিধিবব্ধ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে অর্থ ও ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। ফলে সংকুচিত হয় ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতা। তৃতীয়ত, বিশ্ববাজারে ২০০৭-২০০৮-এর ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পর আচমকা দরপতনে দেশের বড় আমদানিকারকেরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যার একটা বড় অংশ ব্যাংকের খেলাপি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণে পরিণত হয়। নানা কায়দায় সেসব ঋণকে সচল দেখানোর কারণে কাগজ-কলমের তথ্য-উপাত্তে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চতুর্থত, জাহাজভাঙাশিল্প, ইস্পাত এবং আবাসন খাতের উত্থান-পতন ব্যাংকিং খাতকে করে রেখেছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। তার ওপর বাসেল ২ বাস্তবায়নের প্রাক্কালে কিছু ব্যাংকের দুর্বল মূলধন ভিত্তি এবং পুঁজি পর্যাপ্ততার ঘাটতি আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৈরির পথে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
ব্যাংকিং খাতের এহেন পরিস্থিতিতে এই খাত থেকে সরকারের ক্রমাগত ঋণ গ্রহণের কারণে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞমহল। শুধু ঋণ গ্রহণ নয়, অর্থ মুদ্রণের মাধ্যমেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থায়ন গ্রহণ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অনুমিত ঋণের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ঋণ ইতিমধ্যে সরকার নিয়ে ফেলেছে বছরের অর্ধেক পেরোনোর আগে। এর মধ্যে বেশির ভাগই অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। সরকার হয়তো বলতেই পারে প্রকৃত প্রয়োজনেই এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। যেমন তাড়াহুড়ো করে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে সরকার একধরনের দীর্ঘমেয়াদি দায়ে পড়ে গেছে। সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৩১০ কোটি ডলার, আমদানি বৃদ্ধির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ এবং রপ্তানি বৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশ কয়েকবার এক হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছিল, অথচ দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভ কখনোই এর নিচে নামেনি, এমনকি ২০১০-এর ডিসেম্বরের শেষেও ছিল এক হাজার ১০০ কোটি ডলারের বেশি। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
এত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকারের বাকি মেয়াদ নিরঙ্কুশ করার জন্য ঋণ নিয়ে ঘি খাওয়া বন্ধ করতে হবে, কাটছাঁট করতে হবে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পসমূহ, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে, তার জন্য দরকার অপ্রয়োজনীয় ও বিলাস সামগ্রীর আমদানি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ। জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বহু সংশয় রয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিয়োগের বর্তমান ধারায় এই সংশয় অমূলক নয়। তবে অঙ্কের মারপ্যাঁচে লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি যদি অর্জিতও হয়, দেশের মানুষকে মূল্যস্ফীতির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে না পারলে এই প্রবৃদ্ধি একটা অর্থহীন সংখ্যা হিসেবেই থাকবে, জনগণ কিংবা সরকার কারও জন্যই মঙ্গলময় হবে না।
ফারুক মঈনউদ্দীন: লেখক ও ব্যাংকার।
fmainuddin@hotmail.com
No comments