বিদেশিদের দিনে উজ্জ্বল ইমরুল

মিরপুর, ফতুল্লা, বিকেএসপি—সব ভেন্যুতেই কাল বিদেশিদের জয়জয়কার। মিরপুরে পাকিস্তানি ওপেনার আহমেদ শেহজাদের সেঞ্চুরির সৌজন্যে গাজী ট্যাংককে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভিক্টোরিয়া। ফতুল্লায় প্রাইম দোলেশ্বরকে ১১০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারানো আবাহনীর ২৭০ রানের ইনিংসেও বড় অবদান ইংল্যান্ডের পিটার ট্রেগো ও ভারতের রজত ভাটিয়ার। তবে বিদেশিদের এই দিনেই বিকেএসপিতে সূর্যতরুণের বিপক্ষে মোহামেডানের ৮ উইকেটের জয়ে আলো


ছড়িয়েছেন ইমরুল কায়েস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গাজী ট্যাংক অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটিংটাও বেশ চোখ-জুড়ানো ছিল। ৬৭ বলে ৭১ রানের ইনিংসে দুই ছক্কার সঙ্গে ৬ বাউন্ডারি। ৮৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর একটা প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনিই। কিন্তু ক্রিকেটে তো প্রান্ত থাকে দুটো! অন্য প্রান্তে গাজীকে নির্ভরতা দিতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যানই। ৪৫তম ওভারে দলকে ১৯৩ রানে রেখে মিঠুন আউট হওয়ার আগেই পড়ে গেছে আরও ৩ উইকেট। এর মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটে নাজমুল মিলনের সঙ্গে অধিনায়কের ৬৫ রানের জুটিটা না হলে হয়তো দুই শর নিচেই থেমে যেত গাজী ট্যাংক।
শেষ পর্যন্ত ২১৬, কিন্তু এই রানটা নস্যি হয়ে গেল ভিক্টোরিয়ার দুই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ ও কামরান সাজিদের কাছে। দলের ৬৮ রানের মধ্যে এক ম্যাচের জন্য বহিষ্কৃত তামিম ইকবালের জায়গায় নামা ওপেনার সৌম্য সরকার ও জহুরুল ইসলাম আউট হওয়ার পর এই দুই পাকিস্তানির তৃতীয় উইকেটজুটিতে এসেছে ৯৬ রান। দুই ছক্কা আর ১৬ বাউন্ডারিতে ১০২ বলে করা শেহজাদের ১১৫ রান এবারের প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছেন ভিক্টোরিয়ারই আরেক ব্যাটসম্যান জহুরুল ইসলাম। শেহজাদ শট খেলতে বলের বাছবিচার করেননি। সে তুলনায় ৬২ রানে অপরাজিত কামরান সাজিদের ব্যাটিং ছিল অনেক বেশি নিখুঁত।
বড় দলগুলোর জন্য সহজ জয়েরই দিন ছিল কাল। সহজতম জয়টা আবাহনীর। ফতুল্লায় ৬৬ রানে ৩ উইকেট পড়লেও ট্রেগো (৬৮), অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ (৬২) আর ভাটিয়ার (৮৭) ফিফটির সৌজন্যে ৯ উইকেটে ২৭০ রান করে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। চতুর্থ উইকেটে ট্রেগো-মাহমুদউল্লাহর ৩৮ রান প্রাথমিক বিপর্যয় সামলায়। এরপর আসল কাজটা হয় মাহমুদউল্লাহ-ভাটিয়ার ১১০ রানের জুটিতে।
জবাবে প্রাইম দোলেশ্বরের ব্যাটসম্যানরা আবাহনীর বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। ২৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে বড় ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন পেসার আবুল হাসান। এ ম্যাচে অবশ্য একটা দুঃসংবাদও শুনতে হয়েছে আবাহনীকে। নিজের বলে ফিল্ডিং করতে গিয়ে বাঁ হাতের অনামিকায় চোট পেয়েছেন ইলিয়াস সানি। সেলাই পড়েছে তিনটা। মাঠের বাইরে থাকতে হবে অন্তত এক সপ্তাহ।
পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের আধিপত্য ছিল বিকেএসপিতেও। মোহামেডানের বিপক্ষে সূর্যতরুণের ইনিংসে বড় অবদান যেমন রাজা আলীর হাফ সেঞ্চুরির। সূর্যতরুণ যে ২০৪ রানেই অলআউট, ৩১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তাতে আবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মোহামেডানের পাকিস্তানি বাঁহাতি স্পিনার ইয়াসিম মুর্তজার। তবে এ ম্যাচে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন মোহামেডানের দুই বাংলাদেশি তারকাও। অধিনায়ক নাঈম ইসলাম অপরাজিত ৬৭ রানে। সঙ্গে ১২১ বলে অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংস খেলে দল জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। দুই ছক্কা আর পাঁচ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটি সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ হয়ে দেখা দিতে পারে ইমরুলের কাছে। হতে পারে স্বস্তির জানালাও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও যে রান-খরায় ভুগছিলেন এই বাঁহাতি!

সং ক্ষি প্ত স্কো র
ভিক্টোরিয়া-গাজী ট্যাংক
গাজী ট্যাংক: ৪৭.৫ ওভারে ২১৫ (মিঠুন ৭১, শাহজাইব ৪২, নাসির ৩২, নাজমুল মিলন ২৩, আলাউদ্দিন ২১*; আল আমিন ৩/৩৯)। ভিক্টোরিয়া: ৪২.৪ ওভারে ২১৯/৩ (শেহজাদ ১১৫, সাজিদ ৬২*)।
ফল: ভিক্টোরিয়া ৭ উইকেটে জয়ী।

আবাহনী-প্রাইম দোলেশ্বর
আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৭০/৯ (রজত ভাটিয়া ৮৭, ট্রেগো ৬৮, মাহমুদউল্লাহ ৬২; ভিক্টর ২/৪৯, মুরাদ ২/৪৯, মাহবুবুল ২/৬৬)। প্রাইম দোলেশ্বর: ৪০.৫ ওভারে ১৬০ (শাহরিয়ার ৩৭, ইফতেখার ২৭, মানবিন্দর ২৫, নাদিফ ২৪; আবুল হাসান ৪/২৪, ট্রেগো ২/১৪, রজত ২/২৩)।
ফল: আবাহনী ১১০ রানে জয়ী।

মোহামেডান-সূর্যতরুণ
সূর্যতরুণ: ৫০ ওভারে ২০৪/৯ (রাজা আলী ৫০, হান্নান ৩৭, জুপিটার ৩৬, তায়েবুর ২৯; ইয়াসিম ৪/৩১, হাম্মাদ ২/২৯, নূর ২/৪০)। মোহামেডান: ৪৬.২ ওভারে ২০৫/২ (ইমরুল ৯১*, নাঈম ৬৭*; ইমরান উল্লাহ ২/৩৬)।
ফল: মোহামেডান ৮ উইকেটে জয়ী।

No comments

Powered by Blogger.