ভয়ংকর দুই ‘ছোট ছেলে’ by আরিফুল ইসলাম

দুজনের ডাকনামের অর্থটা জানলে হয়তো প্রতিপক্ষরা বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। বল পায়ে পেলেই দুজন যেমন ভয়ংকর হয়ে ওঠেন, কে-ই বা বিশ্বাস করবেন ফার্নান্দো তোরেসের ‘এল নিনো’ নামের অর্থ ‘ছোট্ট ছেলে’ আর ডেভিড ভিয়ার ‘এল গুয়াজে’ নামের অর্থ ‘বাচ্চা’!
বছর তিনেক ধরেই দুজনের যুগলবন্দিটা অসাধারণ। একজনকে ছাড়া আরেকজনকে মনে হয় অপূর্ণ। তা ছাড়া একসঙ্গে খেললে দুজনের কাজটাও বেশ সহজ হয়ে যায়। দুজনকে একসঙ্গে সামলানো অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষের জন্য, একজন একটু বাড়তি সুযোগ পেয়েই যায়। ইনজুরির জন্য আজ যদি পাশে না থাকেন তোরেস, ভিয়ার কি মনটা একটুও খারাপ হবে না?
স্পেনের কোনো পজিশনেই অসাধারণ ফুটবলারের কমতি নেই, তবে এই দলকে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রাখতে হয় ভিয়া আর তোরেসের জন্য। বিশ্ব ফুটবলের সেরা স্ট্রাইকারদের ছোট্ট তালিকাতেও অনায়াসে জায়গা হবে দুজনের। অনেক দিন ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে ভীতি-জাগানিয়া স্ট্রাইকিং জুটি ভিয়া আর তোরেস। দুজনের বোঝাপড়াটাও দারুণ। শুনুন ভিয়ার মুখেই, ‘আমাদের জুটিটা অসাধারণ, দুজনেই দুজনের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দেই। শুধু মাঠে নয় মাঠের বাইরেও আমাদের সম্পর্ক ভালো।’
একজন স্ট্রাইকারের যা যা থাকা দরকার—দুজনেরই আছে তার প্রায় সবটাই। মৌলিক জায়গাগুলোয় দুজনই প্রায় একই রকম। তবে তোরেসকে অনেকে সামান্য এগিয়ে রাখেন পরিপূর্ণ একটি প্যাকেজের জন্য। গতি, ক্ষিপ্রতা, সুযোগ সন্ধানের চোখ, নিখুঁত ফিনিশিং, দক্ষ হেড—সব মিলিয়ে তোরেস সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার। গোলরক্ষক ভাইকে দেখে ছেলেবেলায় হতে চেয়েছিলেন গোলরক্ষক। একবার গোলকিপিং করতে গিয়ে দাঁতও ভেঙে ফেললেন। এর পর মা ফ্লোরির আদেশে বদলালেন পজিশন। একসময়ের গোলরক্ষক এখন গোলরক্ষকদের আতঙ্ক। বয়স মাত্র ২৬, লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন তিন বছরও হয়নি। এরই মধ্যে ঢুকে গেছেন ক্লাবের গ্রেটদের তালিকায়। বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ইংলিশ লিগে প্রথম মৌসুমেই করেছেন রেকর্ড ২৪ গোল, গড়েছেন অল রেডদের হয়ে দ্রুততম ৫০ গোলের রেকর্ড।
স্পেনের হয়ে রেকর্ডটা এখনো ক্লাবের মতো চোখ-ধাঁধানো নয়, তবে ‘এল নিনো’ বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। ২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে করেছিলেন স্পেনের হয়ে সর্বোচ্চ ৭ গোল, পরে বিশ্বকাপেও ৪ ম্যাচে ৩ গোল। ২০০৮ ইউরোর ফাইনালে তাঁর গোলেই ৪৪ বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতেছে স্পেন। আজ খেলতে না পারলে পরের ম্যাচগুলোয় গোলক্ষুধা আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই।
বিবেচ্য যদি হয় শুধু গোলসংখ্যা, বিশ্বসেরাদের একজন নয়, ভিয়াকে সরাসরিই বলতে হবে বিশ্বসেরা স্ট্রাইকার। স্পেনের হয়ে ৩৮ গোল এসেছে মাত্র ৫৮ ম্যাচে, ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে ১০৮ গোল ১৬৬ ম্যাচে। সবচেয়ে বড় কথা, বর্তমান আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিরল প্রজাতির একজন তিনি—নিখাদ স্ট্রাইকার। দারুণ সুযোগসন্ধানী চোখ আর নিখুঁত ফিনিশিং তাঁর বড় গুণ। স্পেনের সর্বকালের সেরাদের একজন রাউল গঞ্জালেস যে জাতীয় দলে শেষ ম্যাচ খেললেন ২৮ বছর বয়সেই, এ জন্য তো ‘দায়ী’ ভিয়াই! রাউলের নিজের করে নেওয়া ৭ নম্বর জার্সিটাও অনেক দিন ধরে ভিয়ার গায়ে। তোরেসের মতো তিনিও বড় মঞ্চে উজ্জ্বল। জার্মানিতে বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই করেছিলেন দুই গোল, তিন গোল করেছেন গত কনফেডারেশনস কাপে, গত ইউরোতে জিতেছেন গোল্ডেন বুট।
বিশ্বকাপেও গোল্ডেন বুট জয়েও বাজিকরদের ফেবারিট ভিয়া-তোরেস। বাজিকরদের অনুমানকে সত্যি করার জন্য এখন প্রার্থনায় বসতে পারে পুরো স্পেন। লড়াইটা এই দুজনের মাঝে হলে তো আর কিছু ভাবতেই হবে না স্পেনকে!

স্পেন-সুইজারল্যান্ড
ডেভিড সিলভা
তোরেস-ভিয়া-জাভিদের আড়ালেই পড়ে থাকেন বেশির ভাগ সময়, কিন্তু কার্যকরতায় ডেভিড সিলভা কম যান না কারও চেয়েই। গতি ও ক্ষিপ্রতা তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ। সমান দক্ষ দুই উইংয়েই, প্রয়োজনে খেলতে পারেন মাঝখানেও। ছোটখাটো গড়নটা তাঁর সম্পর্কে ভুল বোঝাতে পারে, আচমকা গোল করে ফেলতে পারেন দূর থেকে।

ফিলিপ সেন্ডেরস
গত বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করার ম্যাচে গোল করেছিলেন, কিন্তু ওই ম্যাচেই নাক ভেঙে শেষ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বকাপ। এভারটন ডিফেন্ডার ফিলিপ সেন্ডেরসকে আজ রাখতে হবে আরও সাহসী ভূমিকা, স্পেনের দুরন্ত আক্রমণের বিপক্ষে সুইস রক্ষণভাগে নেতৃত্ব দিতে হবে তাঁকেই।

No comments

Powered by Blogger.