সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার-ব্যাংকগুলোই এখন থেকে সুদের হার নির্ধারণ করবে

কৃষি ও রপ্তানিমুখী শিল্পে দেওয়া ঋণ ছাড়া সব ধরনের ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণের দায়িত্ব বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই নিজেদের মতো স্বাধীনভাবে সব ধরনের ঋণের সুদহার নির্ধারণ করবে। ঋণের সুদহারে ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ায় দেশে, বিশেষ করে আমদানিনির্ভর নিত্য খাদ্যপণ্যের দর এক ধাপ বাড়তে পারে। বিনিয়োগ ও উৎপাদন নিরুৎসাহিত হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কমে যেতে পারে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির


হার ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ ধরনের ঊর্ধ্বসীমা আরোপের বিরোধিতা করে আসছে। সম্প্রতি এই সংস্থার কাছ থেকে সরকার ঋণ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ঋণের শর্তের মধ্যে বাজারভিত্তিক এ ব্যবস্থার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল বুধবার তফসিলি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক নির্দেশে সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহারের এ ঘোষণা দেয়। তবে প্রাক্-জাহাজীকরণ (প্রি-শিপমেন্ট) রপ্তানিঋণের সুদহার ৭ শতাংশ এবং কৃষিঋণের সুদ ১৩ শতাংশই থাকছে। এ ছাড়া মসলা খাতে ভর্তুকি দিয়ে ৪ শতাংশ হারে ঋণের জোগান থাকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালের মার্চ মাসে এক নির্দেশে বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেয়। তবে সে সময় শিল্পের মেয়াদি ঋণে ১৩ শতাংশ এবং চাল, গম, ভোজ্যতেল (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত), ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর ও চিনি আমদানি অর্থায়নে সুদের হার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশে নির্ধারণ করা ছিল। গতকাল এগুলোও তুলে নেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সুদের হারে ঊর্ধ্বসীমা থাকায় ব্যাংকগুলো এসব ক্ষেত্রে অর্থায়ন করতেই আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। কেননা, তারা আমানত সংগ্রহই করছে এর চেয়ে বেশি সুদে। সে কারণে এটা তুলে দেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে সীমা আরোপের বিষয়টি যায় না। তার পরও বিশ্ব-অর্থনীতির মন্দা-পরিস্থিতিতে এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, ‘এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যাংক যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের কঠোর নজরদারি-তদারকি থাকবে।’
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, এতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে যাবে। কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই অবকাঠামোর অভাবে বিনিয়োগে মন্দা রয়েছে। তার ওপর এ সিদ্ধান্ত নতুন করে বিনিয়োগের পথকে আটকে দেবে।’ তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা করে পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন।
তবে রপ্তানিকারক মালিক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবসম্মত মনে করছেন। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বেশি সুদে আমানত নিয়ে কম সুদে অর্থায়ন করছিল না। আমানতের সুদই এখন সাড়ে ১৩-১৪ শতাংশ। ফলে তারা ১২ শতাংশ হারে ঋণ দেবে কীভাবে।

No comments

Powered by Blogger.