লেবাননের ফ্যাশন ডিজাইনাররা
প্যারিস আর নিউইয়র্কের ফ্যাশন শো ছাপিয়ে কান আর অস্কারের ‘রেড কার্পেট’ অনুষ্ঠানেও অতিথি আর তারকাদের পোশাক তৈরিতে এখন জয়জয়কার লেবাননের পোশাক কারিগরদের। লেবাননের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল একটি দেশের ছবি, এখনো যাদের প্রতিবেশী ইসরায়েলের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু এই অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা দমিয়ে রাখতে পারেনি লেবাননের ফ্যাশন ডিজাইনারদের।
কয়েক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে পোশাকের ধরন-ধারণ-চলন নির্ধারণে নেতৃত্ব দিচ্ছে লেবানন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পোশাক প্রদর্শনীগুলোতে অত্যন্ত আদৃত নামে পরিণত হয়েছেন সে দেশের ফ্যাশন ডিজাইনার জর্জেস চক্র, জুহেইর মুরাদ, বাসিল সোদা ও রবিহ কাইরোজ। তাঁদের নকশা করা পোশাকের কদর পশ্চিমা বিশ্বে উত্তরোত্তর বাড়ছে। আর লেবাননের ফ্যাশন ডিজাইনারদের এই এগিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলি সাব।
ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সাবের তারকাখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ২০০২ সালে। ওই বছর সম্মানজনক ‘একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’-এর অনুষ্ঠানে পুরস্কার নিতে সাবের নকশা করা পোশাক পরেই মঞ্চে উঠেছিলেন হলিউডের তারকা অভিনেত্রী হ্যালি বেরি। এখন নিয়মিতভাবেই সাবের নকশা করা পোশাক পরছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ম্যারিওন কোটিলার্ড আর বিয়ন্সের মতো তারকারা।
লেবাননের সাব ও রাবিহ কাইরোজ হাতেগোনা বিদেশি ফ্যাশন ডিজাইনারদের অন্যতম যাঁরা ফ্রান্সের ‘চেম্বার সিন্ডিকেট ডে লা হট কোট্যুর’-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন। বিশ্বের শীর্ষ ফ্যাশন ডিজাইনার আর ফ্যাশন হাউসগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি বাণিজ্যিক সহযোগিতাবিষয়ক পর্ষদ চেম্বার সিন্ডিকেট ডে লা হট কোট্যুর।
তবে এই আন্তর্জাতিক খ্যাতি আর প্যারিসের সম্মান সাবের হূদয় থেকে বৈরুতকে মুছে দিতে পারেনি। সম্প্রতি লেবাননের রাজধানীতে নিজের কার্যালয়ে এক সাক্ষাত্কারে সাব বলেন, ‘আমি সব সময় বলেছি, লেবাননে আমি অন্য রকমভাবে শ্বাস নিতে পারি। এই দেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আমার মা-বাবা এ দেশের সন্তান। লেবাননের আলো, এর ইতিহাস আমাকে প্রেরণা জোগায়।’
লেবাননের এই তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারদের অগ্রপথিক হিসেবে বিবেচিত সাব (৪৫) লেবাননের একজন ‘আইকন’ (প্রতীক) হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত। তবে নকশাকার হিসেবে তাঁর শুরুটা বেশ সাদামাটা। শৈশবে মায়ের টেবিলক্লথ আর জানালার পর্দার কাপড় কেটে বোনদের জন্য পোশাক তৈরি করতেন তিনি। বেশির ভাগ লেবাননি শিশুর মতো সাবের শৈশবও কেটেছে যুদ্ধ আর সহিংসতার মধ্যে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিজের শিল্পশালা খোলেন সাব। সে সময় লেবাননে গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে ছিল। প্রায় দুই দশক পার হয়ে গেলেও লেবাননের সূচিশিল্পীদের প্রতি আস্থা একটুও টলেনি সাবের। এখনো সেখানকার সুচিশিল্পীদের সেলাই করা পোশাক পরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পোশাক প্রদর্শনীতে আবির্ভূত হন বিশ্বের নামীদামি তারকা ও মডেলরা।
গৃহযুদ্ধের পর বৈরুতে পুনর্গঠন কার্যক্রম চলে। তবে তাতে যুদ্ধের স্মৃতি মুছে যায়নি। এখন সেখানে বুলেটে ঝাঁঝড়া হওয়া অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সুরম্য বিপণি। লেবাননে এখনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত না হলেও গত কয়েক বছরে দেশটি পর্যটনশিল্পে বেশ এগিয়ে গেছে। সেখানকার রাস্তার পাশের ক্যাফেগুলোতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই পর্যটকে ঠাসা থাকে।
নিউইয়র্কভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার রিম আক্রা বৈরুতে তার শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ছোট থাকতেই পোশাকশৈলী সম্পর্কে তাঁর একধরনের ধারণা হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সেই মা তাঁকে নিয়ে বাজারে যেতেন এবং সেখান থেকেই শিখেছেন কীভাবে কাপড় কিনতে হয়। বিয়ের পোশাক তৈরিতে একজন শীর্ষস্থানীয় ডিজাইনার হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন আক্রা।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্ত্রীরও একটি পোশাকের ডিজাইন করেছেন আক্রা। তিনি বলেন, ‘ছোট থাকতেই আমি জেনে গিয়েছিলাম দামি পোশাকের কদর রয়েছে এবং কীভাবে দামাদামি করতে হয় তার কৌশলও শিখে গিয়েছিলাম।’
ফ্রান্সের ফ্যাশন বিশ্লেষক এবং এ বিষয়ের লেখক লিদিয়া কামিিসস বলেন, ‘রেড কার্পেটে অংশগ্রহণকারী তারকাদের পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে লেবাননের এসব ফ্যাশন ডিজাইনাররা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজার তৈরি করেছেন। কারণ তাঁদের পোশাকগুলো তারকাদের চাহিদা অনুযায়ী আবেদনময় ও জৌলুশপূর্ণ কিন্তু উত্তেজক নয়, নয় অনেক বেশি ব্যক্তিগত। তাঁদের নকশা করা পোশাকগুলো শুধু আকর্ষণীয়ই নয়, পরিধানযোগ্যও।’
হলিউডের রুপালি পর্দার তারকাদের কাছে আরেকটি জনপ্রিয় নাম জর্জেস চক্র। ২০০৬ সালে দ্য ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা চলচ্চিত্রের জন্য পোশাকের নকশা করে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন তিনি। এখন টায়রা ব্যাংকস, ক্যারি আন্ডারউড আর কুইন লতিফার মতো তারকারা নিয়মিত জর্জেস চক্রের নকশা করা পোশাক পরে বিভিন্ন প্রদর্শনী আর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন।
বৈরুতভিত্তিক এই ফ্যাশন ডিজাইনার বলেন, ‘এখানকার বেড়ে চলা তারকা ফ্যাশন ডিজাইনাররা এখন বিশ্বের সামনে বৈরুতের একটি আলাদা পরিচয় তুলে ধরতে পারেন। ১০ বছর আগেও আমরা বলাবলি করতাম, লেবাননের নকশাকারদের এই জনপ্রিয়তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং এখন মনে হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি এমনটি ঘটার কোনো সম্ভাবনাও নেই।’
কয়েক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে পোশাকের ধরন-ধারণ-চলন নির্ধারণে নেতৃত্ব দিচ্ছে লেবানন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পোশাক প্রদর্শনীগুলোতে অত্যন্ত আদৃত নামে পরিণত হয়েছেন সে দেশের ফ্যাশন ডিজাইনার জর্জেস চক্র, জুহেইর মুরাদ, বাসিল সোদা ও রবিহ কাইরোজ। তাঁদের নকশা করা পোশাকের কদর পশ্চিমা বিশ্বে উত্তরোত্তর বাড়ছে। আর লেবাননের ফ্যাশন ডিজাইনারদের এই এগিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলি সাব।
ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে সাবের তারকাখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ২০০২ সালে। ওই বছর সম্মানজনক ‘একাডেমি অ্যাওয়ার্ড’-এর অনুষ্ঠানে পুরস্কার নিতে সাবের নকশা করা পোশাক পরেই মঞ্চে উঠেছিলেন হলিউডের তারকা অভিনেত্রী হ্যালি বেরি। এখন নিয়মিতভাবেই সাবের নকশা করা পোশাক পরছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ম্যারিওন কোটিলার্ড আর বিয়ন্সের মতো তারকারা।
লেবাননের সাব ও রাবিহ কাইরোজ হাতেগোনা বিদেশি ফ্যাশন ডিজাইনারদের অন্যতম যাঁরা ফ্রান্সের ‘চেম্বার সিন্ডিকেট ডে লা হট কোট্যুর’-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন। বিশ্বের শীর্ষ ফ্যাশন ডিজাইনার আর ফ্যাশন হাউসগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি বাণিজ্যিক সহযোগিতাবিষয়ক পর্ষদ চেম্বার সিন্ডিকেট ডে লা হট কোট্যুর।
তবে এই আন্তর্জাতিক খ্যাতি আর প্যারিসের সম্মান সাবের হূদয় থেকে বৈরুতকে মুছে দিতে পারেনি। সম্প্রতি লেবাননের রাজধানীতে নিজের কার্যালয়ে এক সাক্ষাত্কারে সাব বলেন, ‘আমি সব সময় বলেছি, লেবাননে আমি অন্য রকমভাবে শ্বাস নিতে পারি। এই দেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আমার মা-বাবা এ দেশের সন্তান। লেবাননের আলো, এর ইতিহাস আমাকে প্রেরণা জোগায়।’
লেবাননের এই তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারদের অগ্রপথিক হিসেবে বিবেচিত সাব (৪৫) লেবাননের একজন ‘আইকন’ (প্রতীক) হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত। তবে নকশাকার হিসেবে তাঁর শুরুটা বেশ সাদামাটা। শৈশবে মায়ের টেবিলক্লথ আর জানালার পর্দার কাপড় কেটে বোনদের জন্য পোশাক তৈরি করতেন তিনি। বেশির ভাগ লেবাননি শিশুর মতো সাবের শৈশবও কেটেছে যুদ্ধ আর সহিংসতার মধ্যে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিজের শিল্পশালা খোলেন সাব। সে সময় লেবাননে গৃহযুদ্ধ তুঙ্গে ছিল। প্রায় দুই দশক পার হয়ে গেলেও লেবাননের সূচিশিল্পীদের প্রতি আস্থা একটুও টলেনি সাবের। এখনো সেখানকার সুচিশিল্পীদের সেলাই করা পোশাক পরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পোশাক প্রদর্শনীতে আবির্ভূত হন বিশ্বের নামীদামি তারকা ও মডেলরা।
গৃহযুদ্ধের পর বৈরুতে পুনর্গঠন কার্যক্রম চলে। তবে তাতে যুদ্ধের স্মৃতি মুছে যায়নি। এখন সেখানে বুলেটে ঝাঁঝড়া হওয়া অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সুরম্য বিপণি। লেবাননে এখনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত না হলেও গত কয়েক বছরে দেশটি পর্যটনশিল্পে বেশ এগিয়ে গেছে। সেখানকার রাস্তার পাশের ক্যাফেগুলোতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই পর্যটকে ঠাসা থাকে।
নিউইয়র্কভিত্তিক ফ্যাশন ডিজাইনার রিম আক্রা বৈরুতে তার শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ছোট থাকতেই পোশাকশৈলী সম্পর্কে তাঁর একধরনের ধারণা হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সেই মা তাঁকে নিয়ে বাজারে যেতেন এবং সেখান থেকেই শিখেছেন কীভাবে কাপড় কিনতে হয়। বিয়ের পোশাক তৈরিতে একজন শীর্ষস্থানীয় ডিজাইনার হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন আক্রা।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্ত্রীরও একটি পোশাকের ডিজাইন করেছেন আক্রা। তিনি বলেন, ‘ছোট থাকতেই আমি জেনে গিয়েছিলাম দামি পোশাকের কদর রয়েছে এবং কীভাবে দামাদামি করতে হয় তার কৌশলও শিখে গিয়েছিলাম।’
ফ্রান্সের ফ্যাশন বিশ্লেষক এবং এ বিষয়ের লেখক লিদিয়া কামিিসস বলেন, ‘রেড কার্পেটে অংশগ্রহণকারী তারকাদের পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে লেবাননের এসব ফ্যাশন ডিজাইনাররা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজার তৈরি করেছেন। কারণ তাঁদের পোশাকগুলো তারকাদের চাহিদা অনুযায়ী আবেদনময় ও জৌলুশপূর্ণ কিন্তু উত্তেজক নয়, নয় অনেক বেশি ব্যক্তিগত। তাঁদের নকশা করা পোশাকগুলো শুধু আকর্ষণীয়ই নয়, পরিধানযোগ্যও।’
হলিউডের রুপালি পর্দার তারকাদের কাছে আরেকটি জনপ্রিয় নাম জর্জেস চক্র। ২০০৬ সালে দ্য ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা চলচ্চিত্রের জন্য পোশাকের নকশা করে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন তিনি। এখন টায়রা ব্যাংকস, ক্যারি আন্ডারউড আর কুইন লতিফার মতো তারকারা নিয়মিত জর্জেস চক্রের নকশা করা পোশাক পরে বিভিন্ন প্রদর্শনী আর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন।
বৈরুতভিত্তিক এই ফ্যাশন ডিজাইনার বলেন, ‘এখানকার বেড়ে চলা তারকা ফ্যাশন ডিজাইনাররা এখন বিশ্বের সামনে বৈরুতের একটি আলাদা পরিচয় তুলে ধরতে পারেন। ১০ বছর আগেও আমরা বলাবলি করতাম, লেবাননের নকশাকারদের এই জনপ্রিয়তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং এখন মনে হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি এমনটি ঘটার কোনো সম্ভাবনাও নেই।’
No comments