ডেঙ্গু ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে by আদিত্য রিমন
দর্শনার্থীশূন্য ওন্ডারল্যান্ড |
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের ছুটিতে অনেকটাই
ফাঁকা রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ডেঙ্গু ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে
প্রত্যাশা অনুযায়ী দর্শনার্থী নেই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ফলে অনেকটা অলস
সময় কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার কোনও কোনও বিনোদন কেন্দ্র সংস্কার কাজ ও
ঈদের ছুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। রাজধানীতে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ সময়ের
চেয়ে ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর আগমন সব সময় বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার
ঈদের দ্বিতীয় দিনেও তার চিত্র উল্টো। গত কয়েকটি ঈদের তুলনায় এবার
দর্শনার্থীর সংখ্যা কম। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগের ভয়ের পাশাপাশি বৈরী
আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ দর্শনার্থী হয়নি বলে তারা মনে করছেন। তবে পরিবেশের
উন্নতি হলে ধীরে ধীরে আশানুরূপ দর্শনার্থীর আগমনে কেন্দ্রগুলো জমে উঠবে
বলে তাদের আশা।
সোমবার দুপুর ২টায় রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা দক্ষিণ
সিটি করপোরেশনের ওয়ান্ডারল্যান্ডে (সাবেক শিশুমেলা) গিয়ে দেখা যায়
দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। এ কারণে শিশুদের অনেক রাইড ফাঁকা।
শ’খানেক দর্শনার্থী এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেবল। অথচ অন্য বছরগুলোতে এই
বিনোদন কেন্দ্রে ঈদের সময় থাকতো উপচে পড়া ভিড়।
ওয়ান্ডারল্যান্ড (সাবেক শিশুমেলার) ম্যানেজার
মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে
দর্শনার্থীশূন্য ওয়ান্ডারল্যান্ড। সকাল থেকে তিন-চারশ’ লোক এসেছেন। সাধারণ
ছুটির দিনগুলোতে এ সময় কমপক্ষে ২-৩ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। তবে আবহাওয়ার
উন্নতি হলে বিকালে দর্শনার্থী বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিকেলে আরও খারাপ
হয়েছিল। ফলে শিশুদের নিয়ে বাইরে বের হয়নি রাজধানীতে বসবাসকারী পরিবারগুলো।
বিকেল থেকে সড়কেও জন-উপস্থিতি ছিল কম।
বউ-ছেলেকে নিয়ে ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলেন
নিয়াজ জামান সজিব। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর কারণে এবারের ঈদে শহরের অধিকাংশ লোক
গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আমরা ঘুরতে এসেও বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তায় আছি। কখন
আবার কী হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওয়ান্ডারল্যান্ডে এবারের ঈদে
প্রবেশমূল্য রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা। আর ভেতরের শিশুদের রাইডগুলোর টিকিটের
মূল্য রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা করে।
মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এবার ঈদে ওয়ান্ডারল্যান্ডে
নতুন কোনও রাইড যুক্ত হয়নি। তবে আগেরগুলো সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া পার্কে
রঙও করা হয়েছে।
শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরেও গত ঈদের তুলনায় দর্শণার্থীর
সংখ্যা অনেক কম। দর্শনার্থী ও জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে
মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকে গেছে। এ কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয়
পাচ্ছে। এছাড়া সকালে বৃষ্টি ছিল আর সারা দিন আবহাওয়া ভালো ছিল না। ফলে অন্য
ঈদগুলোর তুলনায় দর্শনার্থী অনেক কম।
দুপুর ১টার দিকে জাদুঘরের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত
রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ৪ জন সেলসম্যান জাদুঘরের টিকিট
বিক্রি করেন। তিনি সকাল থেকে ৪৩৩টি টিকিট বিক্রি করেছেন। অন্যরাও এই রকম
বিক্রি করেছেন। গত ঈদে এ সময়টাতে প্রত্যেকে কমপক্ষে ৩-৪ হাজার টিকিটে
বিক্রি করেছেন। কাউন্টার লোকজন না থাকায় অন্যরা খেতে গেছেন। অথচ অন্য
ঈদগুলোতে এই সময় খাওয়া তো দূরের কথা, দম ফেলানোর সময় পাওয়া যেত না।
তিনি আরও বলেন, সবার মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে একটা আতঙ্ক
রয়েছে। এ কারণে ঘর থেকে মানুষ বের হতে ভয় পাচ্ছেন। অন্য ঈদগুলোতে ৮ থেকে ১২
বছর বয়সী শিশুরা বেশি আসতো। এবার সেটা কম।
পুরান ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে জাদুঘর ঘুরে দেখতে
এসেছেন ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, সারাদেশ ডেঙ্গুতে ভরে গেছে।
কীভাবে মানুষ ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়াবে? এছাড়া পুরো শহরে কোরবানির বর্জ্য
রয়েছে। তারপরও আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছি। এখন ভালোয় ভালোয় বাসায় ফিরতে
পারলেই হলো।
জানা গেছে, জাতীয় জাদুঘরে দেশের নাগরিকদের জন্য
টিকিটের মূল্য রাখা হচ্ছে ২০ টাকা। আর ১২ বছরের নিচে শিশুদের জন্য রাখা
হচ্ছে ১০ টাকা। আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য টিকিটের মূল্য রাখা
হচ্ছে ৩শ’ টাকা আর অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫শ’ টাকা।
এদিকে অন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় মোটামুটি
দর্শনার্থীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানায়। তবে সংশ্লিষ্টরা
বলছেন, গত ঈদের তুলনায় এবার অর্ধেক দর্শনার্থী হয়েছে। আজ (১৩ আগস্ট) প্রায়
দেড় লাখ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখে গেছেন। গত ঈদে এই সংখ্যাটা ছিল ২
লাখ ৩০ হাজার।
সন্ধ্যায় চিড়িয়াখানার কিউরেটর নজরুল ইসলাম বলেন,
সকালের দিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও দুপুরের পর বেড়েছে। আজকে প্রায়
দেড় লাখ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছেন।
গাজীপুর থেকে আলী আহসান পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন
চিড়িয়াখানায়। তিনি বলেন, এখন কারখানা বন্ধ। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি।
রাস্তাঘাটও কিছুটা যানজটমুক্ত আছে। এখানে ছেলেমেয়ের ভালো লাগছে। তারা
আনন্দ করছে।
জানা গেছে, চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৩৭ প্রজাতির ২
হাজার ৭৬২টি প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বাঘ, চিতাবাঘ, বানর, ভাল্লুক,
সিংহ, হাতি, জলহস্তী, গণ্ডার, ঘোড়া, হরিণ, জিরাফ, জেব্রা, মায়া হরিণ, সাদা
হংস, উট, বানর, বনগরু, অজগর, ময়ূর ইত্যাদি।
এর বাইরে সংস্কার কাজ চলায় বন্ধ আছে শাহবাগ শিশুপার্ক। আর ঈদের ছুটির কারণে বন্ধ আছে বিজয় সরণি মোড়ের বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর।
No comments