অবরুদ্ধ কাশ্মীরে আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা দেখেছেন এক সাংবাদিক by শেখ সালিক
ভারতীয়
সেনা যান আর এক রাশ ধূলির ভেতর দিয়ে আমার গাড়ি এগিয়ে গেলো। স্বাভাবিক সময়ে
বিমানবন্দর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর পর্যন্ত যাত্রাটা হতো
মসৃণ। সেখানে উত্তরাঞ্চলীয় বারামুল্লা শহরে আমার পরিবারের বাড়ি।
কিন্তু কাশ্মীরে জীবন এখন অন্যরকম। ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশে সরকার সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে যাতে কোন ধরনের বিক্ষোভ দানা বাঁধতে না পারে, সে জন্য সেখানে এখন নজিরবিহীণ ষাঁড়াশি অভিযান চলছে।
শত শত ভারতীয় সেনা অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে শ্রীনগর-বারামুল্লা মহাসড়কে টহল দিচ্ছে। ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি এ অঞ্চলের মূল শহরের সাথে উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোর সংযোগ করেছে। বেসামরিক যান চলছে বিক্ষিপ্তভাবে। দোকানপাট বন্ধ। সড়কগুলোতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলো দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় কাঁটাতারের ব্যারিকেডের কারণে অধিবাসীরা ঘরের ভেতরেই থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মীর এখন কার্যত অবরুদ্ধ।
গত সপ্তাহে প্রথম রিপোর্টিং করতে কাশ্মীর এসেছিলাম, ভারত সরকার যখন সংবিধান থেকে বিশেষ সুবিধা বাতিল করলো। আমার দ্বিতীয় সফর অনেকটাই ব্যক্তিগত। ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা বাতিলের পর আত্মীয়স্বজনদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ না হওয়ায় তাদের খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম দ্বিতীয়বার।
শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বারামুল্লা পর্যন্ত যাত্রাটা ছিল আতঙ্কজনক এবং ঘরে ফেরার একটা অদ্ভুত অনুভূতিও হচ্ছিল। মহাসড়কে কোন যানবাহন ছিল না বললেই চলে। প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর পর ভারতীয় সেনারা যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করছিল।
যে সব রাস্তা দিয়ে গেছি, সেগুলোর অধিকাংশই ছিল আবর্জনায় ঢাকা – যেটা নাগরিকদের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। সড়কগুলো প্রায় বিরান এবং মানুষের মধ্যে একটা গম্ভীর ভাব বিরাজ করছে। সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ কাশ্মীরীরা বিপদে পড়ে গেছে এবং তারা অপেক্ষা করছে কি ঘটে দেখার জন্য।
১৯ বছর বয়সী ফিরদৌস আহমেদ নাকাশ বললেন, “ভারতের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করবো”। সড়ক ধরে উত্তরাঞ্চলীয় শহর সোপোরের দিকে যাচ্ছিল সে, যে অঞ্চলে ভারত-বিরোধী মনোভাব খুবই তীব্র।
তার পাশেই বসেছিল ৫৬ বছর বয়সী মুজাফফর টেলি। সেও ফিরদৌসের কথার পুনরাবৃত্তি করলো।
তিনি বলেন, “ও আর আমি, আমরা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করবো”।
কাশ্মীরীদের আশঙ্কা তাদের অঞ্চলের উপর ভারতের অত্যধিক কর্তৃত্বের কারণে এ অঞ্চলের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র নষ্ট হয়ে যাবে। ভারত বলেছে, তাদের সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ থেকে রক্ষা করবে।
বারমুল্লার কর্তৃপক্ষ প্রচুর গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মী, সাবেক বিক্ষোভাকরী এবং কিছু পাথর নিক্ষেপকারীও রয়েছে। কিন্তু একই সাথে তারা বুদ্ধিজীবী ও আইনজীবীদেরকেও গ্রেফতার করেছে। বেশ কিছু পরিবার এ অভিযোগ করেছে। যোগাযোগ না থাকায় এ ব্যাপারে দিল্লীর মতামত জানতে চেয়েও জানতে পারিনি আমি।
কাশ্মীর থেকে খবর খুব সামান্যই বাইরে যাচ্ছে। শ্রীনগরে সামান্য কিছু সাংবাদিক আছে। অধিকাংশ মিডিয়া সেখানেই অবস্থান করছে। কর্তৃপক্ষ সেলফোন ব্যবহার করে স্থানীয়দের স্বল্প সময়ের জন্য স্বজনদের সাথে যোগাযোগের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরে কি ঘটছে, সে ব্যাপারে একটি কথাও বলা যাবে না।
ষাঁড়াশি অভিযানের কারণে সাংবাদিকদের কাজ হয়ে গেছে সবচেয়ে কঠিন। কারণ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ এবং চলাফেরাও করা যাচ্ছে না।
১৭ বছর বয়সী আর্জুমান্দ দার ক্ষোভ জানিয়ে বললো, “এ অঞ্চলের মানুষের সাথে কোন আলোচনা না করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে”।
বারামুল্লার পুরনো শহরের পাশে ঝিলাম নদীর উপরের ঐতিহাসিক সেতুর উপর বসেছিল এক ব্যক্তি। নয়াদিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার ভুল করবে যদি তারা ভেবে থাকে যে, মানুষ প্রতিবাদ না করে সব মেনে নেবে।
তিনি বললেন, “কাশ্মীরকে ছেড়ে যাওয়া উচিত ভারতের”। প্রতিশোধের আশঙ্কায় নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি।
যোগাযোগ না থাকায় যে সামান্য তথ্যটুকু বাইরে যাচ্ছে, সেটাও গাল-গপ্পের মধ্য দিয়ে গুজবে পরিণত হচ্ছে।
অনেক মানুষ আমাকে বলেছেন যে, চরমতম খারাপ পরিস্থিতির প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।
কিন্তু কাশ্মীরে জীবন এখন অন্যরকম। ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশে সরকার সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে যাতে কোন ধরনের বিক্ষোভ দানা বাঁধতে না পারে, সে জন্য সেখানে এখন নজিরবিহীণ ষাঁড়াশি অভিযান চলছে।
শত শত ভারতীয় সেনা অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে শ্রীনগর-বারামুল্লা মহাসড়কে টহল দিচ্ছে। ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি এ অঞ্চলের মূল শহরের সাথে উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোর সংযোগ করেছে। বেসামরিক যান চলছে বিক্ষিপ্তভাবে। দোকানপাট বন্ধ। সড়কগুলোতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলো দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় কাঁটাতারের ব্যারিকেডের কারণে অধিবাসীরা ঘরের ভেতরেই থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মীর এখন কার্যত অবরুদ্ধ।
গত সপ্তাহে প্রথম রিপোর্টিং করতে কাশ্মীর এসেছিলাম, ভারত সরকার যখন সংবিধান থেকে বিশেষ সুবিধা বাতিল করলো। আমার দ্বিতীয় সফর অনেকটাই ব্যক্তিগত। ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা বাতিলের পর আত্মীয়স্বজনদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ না হওয়ায় তাদের খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম দ্বিতীয়বার।
শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বারামুল্লা পর্যন্ত যাত্রাটা ছিল আতঙ্কজনক এবং ঘরে ফেরার একটা অদ্ভুত অনুভূতিও হচ্ছিল। মহাসড়কে কোন যানবাহন ছিল না বললেই চলে। প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর পর ভারতীয় সেনারা যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করছিল।
যে সব রাস্তা দিয়ে গেছি, সেগুলোর অধিকাংশই ছিল আবর্জনায় ঢাকা – যেটা নাগরিকদের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। সড়কগুলো প্রায় বিরান এবং মানুষের মধ্যে একটা গম্ভীর ভাব বিরাজ করছে। সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ কাশ্মীরীরা বিপদে পড়ে গেছে এবং তারা অপেক্ষা করছে কি ঘটে দেখার জন্য।
১৯ বছর বয়সী ফিরদৌস আহমেদ নাকাশ বললেন, “ভারতের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করবো”। সড়ক ধরে উত্তরাঞ্চলীয় শহর সোপোরের দিকে যাচ্ছিল সে, যে অঞ্চলে ভারত-বিরোধী মনোভাব খুবই তীব্র।
তার পাশেই বসেছিল ৫৬ বছর বয়সী মুজাফফর টেলি। সেও ফিরদৌসের কথার পুনরাবৃত্তি করলো।
তিনি বলেন, “ও আর আমি, আমরা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করবো”।
কাশ্মীরীদের আশঙ্কা তাদের অঞ্চলের উপর ভারতের অত্যধিক কর্তৃত্বের কারণে এ অঞ্চলের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র নষ্ট হয়ে যাবে। ভারত বলেছে, তাদের সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ থেকে রক্ষা করবে।
বারমুল্লার কর্তৃপক্ষ প্রচুর গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মী, সাবেক বিক্ষোভাকরী এবং কিছু পাথর নিক্ষেপকারীও রয়েছে। কিন্তু একই সাথে তারা বুদ্ধিজীবী ও আইনজীবীদেরকেও গ্রেফতার করেছে। বেশ কিছু পরিবার এ অভিযোগ করেছে। যোগাযোগ না থাকায় এ ব্যাপারে দিল্লীর মতামত জানতে চেয়েও জানতে পারিনি আমি।
কাশ্মীর থেকে খবর খুব সামান্যই বাইরে যাচ্ছে। শ্রীনগরে সামান্য কিছু সাংবাদিক আছে। অধিকাংশ মিডিয়া সেখানেই অবস্থান করছে। কর্তৃপক্ষ সেলফোন ব্যবহার করে স্থানীয়দের স্বল্প সময়ের জন্য স্বজনদের সাথে যোগাযোগের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরে কি ঘটছে, সে ব্যাপারে একটি কথাও বলা যাবে না।
ষাঁড়াশি অভিযানের কারণে সাংবাদিকদের কাজ হয়ে গেছে সবচেয়ে কঠিন। কারণ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ এবং চলাফেরাও করা যাচ্ছে না।
১৭ বছর বয়সী আর্জুমান্দ দার ক্ষোভ জানিয়ে বললো, “এ অঞ্চলের মানুষের সাথে কোন আলোচনা না করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে”।
বারামুল্লার পুরনো শহরের পাশে ঝিলাম নদীর উপরের ঐতিহাসিক সেতুর উপর বসেছিল এক ব্যক্তি। নয়াদিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার ভুল করবে যদি তারা ভেবে থাকে যে, মানুষ প্রতিবাদ না করে সব মেনে নেবে।
তিনি বললেন, “কাশ্মীরকে ছেড়ে যাওয়া উচিত ভারতের”। প্রতিশোধের আশঙ্কায় নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি।
যোগাযোগ না থাকায় যে সামান্য তথ্যটুকু বাইরে যাচ্ছে, সেটাও গাল-গপ্পের মধ্য দিয়ে গুজবে পরিণত হচ্ছে।
অনেক মানুষ আমাকে বলেছেন যে, চরমতম খারাপ পরিস্থিতির প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।
No comments