শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে গুলির হুমকি তদন্তের নির্দেশ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এক কলেজছাত্রকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে থানায় ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি ও অভিযুক্ত পুলিশের এসআই জাহিদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী-২ (দৌলতপুর-ভেড়ামারা) আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ প্রদান করেন। আদালত আদেশে জানতে চান, দৌলতপুরের ওই কলেজছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা এবং থানা হাজতে থাকাবস্থায় এসআই জাহিদ গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেছেন কিনা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৬/১ ধারা লংঘন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি প্রদান করেছেন কিনা। কুষ্টিয়া সহকারী জজ দৌলতপুর আদালতের বিচারক ফয়সাল আল মামুনকে আগামী ৩১ মে ২০১৭ তারিখের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত। প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে গল্প করার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে দৌলতপুর থানার এসআই জাহিদের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দুটি মোটরসাইকেলে সেখানে যান। পুলিশ সদস্যরা তার নাম-পরিচয় জানতে চান। তিনি বলার পর তাকে হাতকড়া পরিয়ে দৌলতপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাকে হাজতে রাখা হয়। রাত আড়াইটার দিকে থানার এসআই জাহিদ হাজতখানায় ঢুকে বলেন, ‘মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। ওপরের নির্দেশ আছে। আপনাকে গুলি করা হবে।’ এই বলে এসআই চলে যান। রাত তিনটার দিকে পুনরায় হাজতখানায় ঢুকে এসআই জাহিদ তার নাম-পরিচয়-ঠিকানা লিখে নেন। তখন মামুন এসআই জাহিদকে বলেন,
‘আমাকে বুকে গুলি করে মেরে ফেলেন। পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েন না।’ গত ৯ এপ্রিল জেলা আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় কলেজ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার হুমকির প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। অবশ্য অভিযুক্ত দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক জাহিদ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ছেলেটি ভদ্র, তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য তিনি ওসিকে অনুরোধ করেছিলেন। অন্যদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দাবি ছিল ছেলেটি মাদক ব্যবসায়ী। মামুনের বাবা ইসমাইল হোসেন উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের বিলগাথুয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। পর পর চার বার তিনি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ইসমাইল হোসেন বলেন, ছেলেকে আটকের খবর পেয়ে চায়ের দোকানে ছুটে যান তিনি। পুলিশ সদস্যরা তাকে বলেন, দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশ আছে মামুনকে ধরে থানায় নিতে হবে। কোনোভাবে সন্তানকে ছাড়াতে না পেরে ইসমাইল ছুটে যান স্থানীয় সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরীর কাছে। তাকে দিয়ে সুপারিশ করিয়েও ছেলেকে ছাড়াতে পারেননি। স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ ইসমাইল হোসেনের। জানতে চাওয়া হলে দৌলতপুরের ইউএনও তৌসিফুর রহমান জানান, পুলিশ ওই যুবককে মাদক সেবনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করেছিল। পরে আদালত এক হাজার টাকা জরিমানা করেন।
No comments