মুফতি হান্নানের উত্থান যেভাবে
দুর্ধর্ষ জঙ্গির নাম মুফতি হান্নান। জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা, নেতৃত্ব দেয়া, বোমা বানানো সবই করতেন তিনি নিজে। নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা হিসেবে তার নাম বেশ আলোচিত। আরও বেশি রহস্যময় তার জঙ্গি হয়ে ওঠার কাহিনী। গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়ায় তার জন্ম। পুরো নাম মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সী ওরফে মুফতি হান্নান। আফগান যুদ্ধ ফেরত এ হান্নানের হাত ধরেই এই স্বাধীন দেশে জঙ্গি হামলার যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালের ১ আগস্ট গ্রেফতার হওয়ার আগে তার পরিকল্পনা ও একক নেতৃত্বে ৭ বছরে ১৩টি জঙ্গি হামলা হয়। এতে ১০১ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক লোক আহত হন। মুসলিম লীগ নেতা মুন্সী নুরুদ্দীনের ছেলে হান্নানের পড়াশোনা মাদ্রাসা লাইনে।
আফগানিস্তানে যুদ্ধে আহত : টুঙ্গিপাড়া গহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় মুফতি হান্নানের শিক্ষা জীবন শুরু। সেখান থেকে হেফজ পাসের পর তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে পাকিস্তানে যান। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাইন মাদ্রাসায় ভর্তি হন হান্নান। সেখানেই জঙ্গি তৎপরাতার তার হাতেখড়ি। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। সেখানেই সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে যুদ্ধে তিনি আহত হন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী পার্টিতে যোগ দেন। সংগঠনের কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাংগঠনিক যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখিয়ে তিনি হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন। এ সময়ই কোটালীপাড়ার ঘাঘরকান্দায় ক্যাডেট মাদ্রসা প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি তিনি ঘাঘর বাজারে কিছুদিনের জন্য একটি বইয়ের দোকান দেন।
মুফতি হান্নানে হাত ধরেই জঙ্গি হামলা শুরু : অভিযোগ রয়েছে, তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রচ্ছায়ায় গোপালগঞ্জে বিসিক মাঠসংলগ্ন একটি বাড়িতে সোনার বাংলা সাবান ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। সাবান ফ্যাক্টরির আড়ালে তিনি আসলে তৈরি করতেন বোমা। মুফতি হান্নানের বিশেষত্ব হল তিনি নিজেই সামরিক প্রশক্ষিণপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশে ফিরে তিনি আফগান স্টাইলে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেন মুফতি হান্নান নিজেই। এছাড়া ২০০০ সালের ২১ জুলাই কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। পরের দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমা দুটি উদ্ধারের পর গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের সোনার বাংলা সাবান ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে আবিষ্কার করা হয় বোমা তৈরির কারখানা। এর পরই দেশবাসী জানতে পারেন হুজি নেতা মুফতি হান্নানের নানা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের খবর। এরপর রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান তিনি।
আফগানিস্তানে যুদ্ধে আহত : টুঙ্গিপাড়া গহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় মুফতি হান্নানের শিক্ষা জীবন শুরু। সেখান থেকে হেফজ পাসের পর তিনি ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে পাকিস্তানে যান। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাইন মাদ্রাসায় ভর্তি হন হান্নান। সেখানেই জঙ্গি তৎপরাতার তার হাতেখড়ি। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। সেখানেই সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে যুদ্ধে তিনি আহত হন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী পার্টিতে যোগ দেন। সংগঠনের কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাংগঠনিক যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখিয়ে তিনি হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন। এ সময়ই কোটালীপাড়ার ঘাঘরকান্দায় ক্যাডেট মাদ্রসা প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি তিনি ঘাঘর বাজারে কিছুদিনের জন্য একটি বইয়ের দোকান দেন।
মুফতি হান্নানে হাত ধরেই জঙ্গি হামলা শুরু : অভিযোগ রয়েছে, তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রচ্ছায়ায় গোপালগঞ্জে বিসিক মাঠসংলগ্ন একটি বাড়িতে সোনার বাংলা সাবান ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। সাবান ফ্যাক্টরির আড়ালে তিনি আসলে তৈরি করতেন বোমা। মুফতি হান্নানের বিশেষত্ব হল তিনি নিজেই সামরিক প্রশক্ষিণপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশে ফিরে তিনি আফগান স্টাইলে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা হামলার পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেন মুফতি হান্নান নিজেই। এছাড়া ২০০০ সালের ২১ জুলাই কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। পরের দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের উপস্থিতিতে আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। বোমা দুটি উদ্ধারের পর গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক শিল্প নগরীতে মুফতি হান্নানের সোনার বাংলা সাবান ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে আবিষ্কার করা হয় বোমা তৈরির কারখানা। এর পরই দেশবাসী জানতে পারেন হুজি নেতা মুফতি হান্নানের নানা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের খবর। এরপর রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান তিনি।
উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে মুফতি হান্নানই প্রথম এ দেশে জঙ্গি হামলা শুরু করেন। এরপর তার পরিকল্পনায় রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে বোমা হামলা, ৭ আগস্ট সিলেটের তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৭ বছরে ১৩টি হামলা করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় সাপ্তাহিক প্রার্থনা অনুষ্ঠানে তার পরিকল্পনায় বোমা হামলা চালানো হয়। ওই বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক খ্রিস্টান ধর্মবালম্বী আহত হন। অবশেষে ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। সেই থেকে তিনি জেলেই আছেন। সম্প্রতি ঢাকার টঙ্গীতে মুফতি হান্নানকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয় পুলিশ। মুফতি হান্নান সম্পর্কে সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আবদুল কাহার আকন্দ জানান, তিনি প্রথমে দেশি বোমা ব্যবহার করলেও পরে পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করেন। এছাড়া বোমা বানানো ও আক্রমণের বিষয়েও তার সামরিক প্রশিক্ষণ আছে। তিনি প্রশিক্ষণও দিতেন।
দুই মামলায় ফাঁসি : ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৭টি মামলার মূল হোতা হান্নান। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ওপর বোমা হামলা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়। ৬ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে মুফতি হান্নান দ্বিতীয়। তার মায়ের নাম রাবিয়া বেগম। তার আরেক ছোট ভাই মুন্সী মহিবুল্লাহ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। ১৯৯৪ সালে মাগুরা জেলার শালিকা উপজেলার জাকিয়া পারভীন রুমাকে বিয়ে করেন এবং তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী রুমা ছেলেমেয়েদের নিয়ে বর্তমানে কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন। তার বড় ছেলে যশোরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে এবং ছোট ছেলে ঢাকা পড়াশোনা করে। দুই মেয়ে হিরণ গ্রামে একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে।
মুফতি হান্নানের বাড়ি যেমন : গ্রামের বাড়িতে মুফতি হান্নানের যাতায়াত ছিল কম। হিরণ গ্রামের বাড়িতে থাকেন বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী। পুরো বাড়িটিই সুনসান নীরব। এলাকাবাসীও ভিড়ছেন না বাড়ির কাছাকাছি। দুই মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন তার স্ত্রী। দুই মেয়ে স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে যশোরে একটি কলেজে। ছোট ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়ছে।
চা দোকানী যা বলছেন : হিরণ গ্রামের শহিদুল ইসলাম মুন্সী সদর আলী বলেন, মুফতি হান্নানকে একজন ধর্মভীরু হিসেবেই চিনতাম। মুফতি হান্নানের সহপাঠী চায়ের দোকানী হিরণ গ্রামের আবুল বশার বলেন, আমার সঙ্গে ছোটবেলায় মুফতি হান্নান গ্রামের মাদ্রসায় ২ বছর পড়াশোনা করেছে। পরে সে অন্য মাদ্রসায় পড়াশোনা শুরু করে। এছাড়া সে বাইরে পড়াশোনা করেছে। এ কারণে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাকে চেনে না বললেই চলে। পরে আমি খুলনা চলে যাই। দীর্ঘদিন পর খুলনা থেকে গ্রামে ফিরে এসে চায়ের ব্যবসা শুরু করেছি। হান্নান মুন্সীর গ্রামে যাতায়াত খুবই কম ছিল বলে জেনেছি। হিরণ ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সী এবাদুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি হামলা চালিয়েছে হান্নান। হিরণ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মুন্সী বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মুফতি হান্নানের বাবা নূর উদ্দিন মুসলিম লীগ করতেন। সে সময়ে তিনি নানা অপকর্ম করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। মুফতি হান্নানের মা রাবেয়া বেগম বলেছেন, আমার ছেলে মাদ্রাসা লাইনে পড়াশোনা করেছে। সে মাদ্রসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি মুফতি পাস করেছে। আমার জানামতে আমার ছেলে ইসলামের পথে ছিল। আমার ছেলে কি কর্মকাণ্ড করেছে তা আমি জানি না। আমার সামনে সে কখনও কোনো অন্যায় কাজ করেনি। সে সরকারের কাছে অপরাধী। সরকার তাকে শাস্তি দিয়েছে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার পরিবারের নিরপরাধ মানুষগুলোকে যেন সরকার হয়রানি না করে। সে জন্য দাবি জানাচ্ছি।
দুই মামলায় ফাঁসি : ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৭টি মামলার মূল হোতা হান্নান। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ওপর বোমা হামলা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়। ৬ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে মুফতি হান্নান দ্বিতীয়। তার মায়ের নাম রাবিয়া বেগম। তার আরেক ছোট ভাই মুন্সী মহিবুল্লাহ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। ১৯৯৪ সালে মাগুরা জেলার শালিকা উপজেলার জাকিয়া পারভীন রুমাকে বিয়ে করেন এবং তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী রুমা ছেলেমেয়েদের নিয়ে বর্তমানে কোটালীপাড়ার হিরণ গ্রামে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন। তার বড় ছেলে যশোরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে এবং ছোট ছেলে ঢাকা পড়াশোনা করে। দুই মেয়ে হিরণ গ্রামে একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে।
মুফতি হান্নানের বাড়ি যেমন : গ্রামের বাড়িতে মুফতি হান্নানের যাতায়াত ছিল কম। হিরণ গ্রামের বাড়িতে থাকেন বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী। পুরো বাড়িটিই সুনসান নীরব। এলাকাবাসীও ভিড়ছেন না বাড়ির কাছাকাছি। দুই মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন তার স্ত্রী। দুই মেয়ে স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে যশোরে একটি কলেজে। ছোট ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়ছে।
চা দোকানী যা বলছেন : হিরণ গ্রামের শহিদুল ইসলাম মুন্সী সদর আলী বলেন, মুফতি হান্নানকে একজন ধর্মভীরু হিসেবেই চিনতাম। মুফতি হান্নানের সহপাঠী চায়ের দোকানী হিরণ গ্রামের আবুল বশার বলেন, আমার সঙ্গে ছোটবেলায় মুফতি হান্নান গ্রামের মাদ্রসায় ২ বছর পড়াশোনা করেছে। পরে সে অন্য মাদ্রসায় পড়াশোনা শুরু করে। এছাড়া সে বাইরে পড়াশোনা করেছে। এ কারণে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাকে চেনে না বললেই চলে। পরে আমি খুলনা চলে যাই। দীর্ঘদিন পর খুলনা থেকে গ্রামে ফিরে এসে চায়ের ব্যবসা শুরু করেছি। হান্নান মুন্সীর গ্রামে যাতায়াত খুবই কম ছিল বলে জেনেছি। হিরণ ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সী এবাদুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি হামলা চালিয়েছে হান্নান। হিরণ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মুন্সী বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মুফতি হান্নানের বাবা নূর উদ্দিন মুসলিম লীগ করতেন। সে সময়ে তিনি নানা অপকর্ম করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। মুফতি হান্নানের মা রাবেয়া বেগম বলেছেন, আমার ছেলে মাদ্রাসা লাইনে পড়াশোনা করেছে। সে মাদ্রসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি মুফতি পাস করেছে। আমার জানামতে আমার ছেলে ইসলামের পথে ছিল। আমার ছেলে কি কর্মকাণ্ড করেছে তা আমি জানি না। আমার সামনে সে কখনও কোনো অন্যায় কাজ করেনি। সে সরকারের কাছে অপরাধী। সরকার তাকে শাস্তি দিয়েছে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার পরিবারের নিরপরাধ মানুষগুলোকে যেন সরকার হয়রানি না করে। সে জন্য দাবি জানাচ্ছি।
No comments