একজন সুনিতা ও পৈশাচিকতার কাহিনী
বিশ
বছর আগে সুনিতা দুয়ানদ্বার পতিতা-ব্যবসায়ীদের অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতার শিকার
হয়েছিলেন। ৫ মাস ধরে তাকে প্রতিদিন ৩০ জন পুরুষের সঙ্গে শরীর বিনিময় করতে
বাধ্য করেছিল ওই ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের সাতটি দিনই তাকে এমন ভয়াবহ নৃশংসতার
মধ্য দিয়ে যেতে হতো। তখন সুনিতার বয়স মাত্র ১৪ বছর। চাকরি ও কাজের আশ্বাস
দিয়ে প্রলুব্ধ করে তাকে ভারতে নিয়ে যায় পাচারকারীরা। কিন্তু কাজের পরিবর্তে
একটি ছোট কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় প্রতিদিন তাকে পূরণ করতে হতো
‘খদ্দের’দের নৃশংস চাহিদা। অনেক সময় তাদের মারও সহ্য করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে
সুনিতাকে ঘুম থেকে তোলা হয়েছে কোন এক খদ্দেরের চাহিদা পূরণ করতে। অবশেষে
একদিন তিনি পালাতে সক্ষম হন। শুধু পালিয়ে গিয়েই ক্ষান্ত হননি। তার মতো একই
ভাগ্য বরণ করে নেয়া মেয়েদের বাঁচাতে নিজের বাকি জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত
নেন। নেপালের এমন এক নারীর কথা উঠে এসেছে ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, সুনিতা যখন শিশু যৌনকর্মী হিসেবে একটি ছোট গুমোট কক্ষে
দিনাতিপাত করছে, তখন তার বয়সী শিশুরা স্কুলে যেত। তিনি বলেন, ওই ৫ মাস ধরে
সপ্তাহের প্রতিটি দিন গড়ে ৩০ জন খদ্দেরের সঙ্গে শারীরিক সমপর্কে মিলিত হতে
আমাকে বাধ্য করা হতো। ছুটির দিন বা উৎসবের সময় খদ্দেরদের সংখ্যা বেড়ে ৫০
জনেও দাঁড়াত। এদের অনেকে আমাকে পেটাতো। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম,
তার মাঝেও কোন খদ্দের এলে আমাকে ডেকে তোলা হতো। ঘরের বাইরে বা নির্ধারিত
কক্ষ ছেড়ে কোথাও যাওয়া আমার জন্য নিষিদ্ধ ছিল। আমাকে প্রহরা দেয়ার জন্য
সবসময় মানুষ থাকতো। স্থানীয় পুলিশকে টাকা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখা হয়েছিল। ওই
ঘরে আমার মতো আরও অনেক মেয়ে একই দুর্ভাগ্যের কবলে পড়ে তখন ছটফট করছে। তবে
সুনিতাকে অন্যদের তুলনায় ভাগ্যবতীই বলা চলে। স্থানীয় এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী
তার দুর্দশার কথা জানতে পারেন। ওই বন্দিখানা থেকে সুনিতাকে উদ্ধারও করেন
তিনি। এমনকি তাকে সীমান্ত পার করিয়ে নেপালে নিজের পরিবারের কাছে নিয়ে যেতেও
সাহায্য করেন ওই সন্ন্যাসী। বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সী এ নারী তার মতো
দুর্দশাগ্রস্ত অন্য মেয়েদের সাহায্য করতে কাজ করছেন। তিনি শক্তি সমুহা নামে
একটি দাতব্য সংস্থা চালান। এখানে ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে পাচার হওয়া
মেয়েদের উদ্ধার করে চাকরি দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, নেপালে বহুদিন ধরে সক্রিয়
পাচারকারীরা। বৈশ্বিক এক সূচক মোতাবেক, সারাবিশ্বে ২২৮৭০০ জন নেপালি নাগরিক
দাসত্বের শিকার। ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদন মোতাবেক, নেপাল থেকে প্রতি বছর ৭
হাজার নারী ও শিশুকে ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে পাচার করা হয়। বর্তমানে
ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে কাজ করছে এমন নেপালি নাগরিকদের সংখ্যা প্রায় ২
লাখ! অনেকের শঙ্কা, সামপ্রতিক ধ্বংসাত্মক ভূমিকমেপর ফলে পরিস্থিতি আরও
শোচনীয় দিকে মোড় নিয়েছে। নেপালে ভূমিকমেপ বহু মানুষ নিহত হবার পর, এ
সমস্যাটি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঘরবাড়ি, সহায়-সমপত্তি হারানো দিশাহারা
মানুষকে নানা প্রলোভনের জালে আটকাতে পাচারকারীরা ছুটে গেছে নেপালে। একই মত
সুনিতার। নেপালিদের বর্তমান দুর্দশা পাচারকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি
করেছে।
No comments